Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেইমারের মোক্ষম জবাব

স্পোর্টস রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৮, ১০:১০ পিএম | আপডেট : ১০:২০ পিএম, ৩ জুলাই, ২০১৮

 ব্রজিলেরই বিশ্ব্কাপজয়ী কোচ লুইস ফিলিপ স্কোলারির পরামর্শও বাঁচাতে পারেনি মেক্সিকোকে। প্রত্যাশা মতোই বিশ্বকাপের শেষ আটে পৌঁছে গেছে নেইমার দা সিলভা স্যান্টোসের ব্রাজিল। হেক্সা মিশনে দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৬ বছর বয়সী তারকা।
জার্মানির বিৎপলমঘ যে রণনীতি নিয়ে খেলেছিল মেক্সিকো, এদিনও তারা খেলেছে একই নীতিতে। অর্থাৎ, প্রতি আক্রমণে শুরুতেই গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। হাভিয়ের হার্নান্দেজরা করেছেনও তাই, কিন্তু তার শেষটা কোনবারই সফলতার মুখ দেখেনি।
২০০২ সালে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন করা কোচ স্কোলারির খুব ভাল বন্ধু মেক্সিকো কোচ হুয়ান কার্লোস অসোরিও। নিজের দেশের সর্বনাশের কথা না ভেবে ম্যাচের আগে মেক্সিকো কোচকে স্কোলারি পরামর্শ দিয়েছিলেন, শুরুতে গোল দিতে পারলে ব্রাজিল আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু হয়ত বলতে ভুলে গিয়েছিলেন, ব্রাজিলকে খেলার সুযোগ দিলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবেন নেইমার-কুতিনহো-উইলিয়ানরা।
প্রাথমিক ঝড় সামলে ম্যাচে ফিরতে মিনিট কড়ি সময় নেয় ব্রাজিল। এরপর সাম্বার সেই চেনা ছন্দ। মাঝমাঝে সবুজের গালিচায় প্রজাপতির নাচন তোলেন উইলিয়ান-কুতিনহোরা, ডি বক্সের আসেপাশে নেইমার। সামারা স্টেডিয়ামে সেই শুরু সাম্বার নাচন, চলল বাকি সময়ের পুরোটা। ডান দিক দিয়ে উইলিয়ান, বাঁ দিক দিয়ে গ্যাব্রিয়েল জেসুস আর মাঝে নেইমার ও কুতিনহো। মেক্সিকো রক্ষণে বারবার উঠছিল হলুদের ভয়ঙ্কর সব ঢেউ। কিন্তু গোলটাই হচ্ছিল না। এর নেপথ্যে ছিলেন গিজেরমো ওচোয়ার অসামান্য গোলকিপিং। চার বছর আগে গ্রæপ পর্বের ম্যাচে মেক্সিকোর এই গোলরক্ষকই কার্যত একাই আটকে দিয়েছিলেন নেইমারদের। এ দিনও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠেন ওচোয়া। মেক্সিকো গোলরক্ষক একাধিক নিশ্চিত গোল প্রতিহত না করলে স্কোরবোর্ডে ব্যবধান আরো বাড়ত বৈকি।
প্রথমার্ধে বলতে গেলে দুই দলেই ছিল সমতা। স্কোরবোর্ডেও তাই বলছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে তিতের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে শুরু থেকেই ভয়ঙ্কর রুপ নেয় সেলেসাওরা। ছয় মিনিটের মাথায় এর ফলও পেয়ে যায়। জালের দেখা পেয়ে যান নেইমার। নেইমারের এই গোল এটাও প্রমাণ করে, ফুটবল খেলতে হয় দলীয়ভাবে। ব্রাজিলও জানান দেয় দলগত সংহতিই তাদের প্রধাণ শক্তি।
নেমারের ব্যাকহিল ধরে গতি বাড়িয়ে মেক্সিকোর পেনাল্টি বক্সের ভিতরে বিদ্যুৎবেগে ঢুকে পড়েন উইলিয়ান। এরপর ঠান্ডা মাথার ক্রস। পিছন থেকে ধেয়ে আসে জেসুস ও নেইমারের পা। বল খুঁজে নেয় নেইমারের পাকে। যেখান থেকে গোল না করে উপায় ছিল না নেইমারের সামনে। আসরে এটি ছিল তার দ্বিতীয় গোল। নেমারের পাস থেকেই ৮৮তম মিনিটে খানিক আগেই বদলি নামা রবের্তো ফির্মিনহোর গোল। যে গোলে নিশ্চুপ মেয়ে যায় মেক্সিকান শিবির। হলুদে সজ্জিত গ্যালারিতে ওঠে সাম্বার নাচন। গোল করে ও করিয়ে সমালোচকদের মুখে যেন কুলুপ এঁটে দেন পিএসজি তারকা।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই নেইমারকে প্রচুর সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। তার আবেগ নিয়েও কম বিদ্রæপ কম হয়নি। আর মাঠে তিনি অযথা পড়ে যান এমন অভিযোগ করে সেদিকে রেফারিদের বাড়তি নজর রাখতে বলেছিলেন স্বয়ং মেক্সিকো অধিনায়ক। কিন্তু বিশ্বাস ছিল তিতের। আগেই বলেছিলেন, সেরা ফর্মে ফিরতে অন্তত পাঁচটা ম্যাচ দরকার নেইমারের। এ দিন নেইমারকে দেখে মনে হয়েছে আরো ধারালো। এবার নিশ্চয় চুপ থাকবেন তার সমালোচকরা।
জয়ের নায়ক হয়েও এদিনও অবশ্য নেইমারকে বিদ্রæপ শুনতে হয়েছে সেই ‘অভিনয়ের’ কারণেই। ম্যাচের ৭২তম মিনিটে ফাউলের শিকার হলে দুই পায়ের ফাঁকে বল আটকে রেখেছিলেন নেইমার। বল নিতে এসে বুটের ডগা দিয়ে নেইমারের ডান পা আলতো মাড়িযে দেন মিগেল লাইয়ুন। সঙ্গে সঙ্গে ছটফট করা শুরু করে দেন নেইমার। এমন দৃশ্য দেখে ব্রাজিল সমর্থকদের মনে কাঁপুনি ধরাটাই স্বাভাবিক। অথচ পরে কোন সমস্যা ছাড়াই পুরোটা সময় খেলেছেন নেইমার।
নেইমারের এই ঘটনায় বিবিসি ধারাভাষ্যকার কনর ম্যাকনামারা বলেন, ‘সে এমনভাবে গড়াগড়ি দিচ্ছিল যেন তাকে কুমিরে কামড়েছে, যেন একটা অঙ্গ হারিয়ে ফেলেছে।’ এটাও ঠিক এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি (২৩ বার) ফাউলের শিকার হয়েছেন নেইমার। তবে ডাইভ দেয়ার কারণে উপহাসের পাত্রও হচ্ছেন সমালোচকদের কাছে। ম্যাচ শেষে নেইমার বলেন, ‘তারা আমাকে মাড়িয়ে দিয়েছিল। এটা ঠিক ছিল না। আপনি এটা করতে পারেন না। তারা অনেক কথা বলেছিল কিন্তু এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।’
ম্যাচ পরবর্তি সংবাদ সম্মেলনেও এই ঘটনা নিয়ে রেফারির সমালোচনা করেন মেক্সিকো কোচ ওসোরিও, ‘ম্যাচে ব্রাজিলকে পুরোপুরি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। রেফারির পক্ষ থেকে খুব বেশি হস্তক্ষেপ ছিল। আমরা দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের খেলার স্টাইল হারালাম রেফারিংয়ের কারণে। খুব বেশিবার খেলা থামানো হয়েছিল। ওই সময় চার মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। বিশ্ব ফুটবলের জন্য এবং যেসব শিশুরা ফুটবল অনুসরণ করে তাদের জন্য এটা খুবই নেতিবাচক উদাহরণ।’
মেক্সিকো কোচের অভিযোগের বিপরীতে ব্রাজিলের কোচ তিতে বলেন, ‘আমি ওসোরিওর কথার জবাব দেব না। আমি দেখেছি কি ঘটেছে। আমি একেবারে পাশেই ছিলাম এবং আমি এটা টিভিতে আবার দেখেছি। আমার কিছু বলার দরকার নেই। আপনাদের কেবল এটা দেখতে হবে।’
দুরন্ত জয়ের রাতে একটাই ধাক্কা খেয়েছে ব্রাজিল। হলুদ কার্ড দেখায় পরের ম্যাচ খেলতে পারবেন না মাঝমাঠের অন্যতম কারিগর কাজিমিরো।

 

কেয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি
তারিখ বার ম্যাচ সময়* ভেন্যু
৬ জুলাই শুক্রবার উরুগুয়ে-ফ্রান্স রাত ৮টা নভগোরোদ
” ” ব্রাজিল-বেলজিয়াম রাত ১২টা কাজান
৭ জুলাই শনিবার ম্যাচ ৫৫ ও ৫৬ বিজয়ী* রাত ৮টা সামারা
” ” রাশিয়া-ক্রোয়েশিয়া রাত ১২টা সোচি
*বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী তখনও নির্ধারিত হয়নি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নেইমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ