Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ম্যাক্স যেন মৃত্যুফাঁদ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০১৮, ৬:০৪ পিএম

শিশু রাইফার মৃত্যু ষ দুই কমিটির তদন্ত চলছে
আগাগোড়া অনিয়মেই চলছে চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতাল। নগরীর মেহেদীবাগে অনুমোদনবিহীন এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবাও যাচ্ছে তাই। অভিযোগ রয়েছে, রোগীদের জরুরী প্রয়োজনেও চিকিৎসকরা হাসপাতালে আসার গরজবোধ করেন না।
জীবন রক্ষাকারী ওষুধও দেন টেলিফোনে, সেবিকাদের মাধ্যমে। সেখানে এমন এক চিকিৎসকের অবহেলা ও ‘ভুল চিকিৎসা’য় করুণ মৃত্যু হয় আড়াই বছরের শিশু রাইফা খানের। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত তদন্ত কমিটিও হাসপাতালটিতে এসে নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। ম্যাক্স হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে রোববার রাতে কমিটির প্রধান স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্সে ত্রæটি পাওয়া গেছে। তারা স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) কোনো অনুমোদন ছাড়াই হাসপাতাল চালাচ্ছে। এ বিষয় আমরা শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ম্যাক্স হাসপাতালের শিশু মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে আসবে।
ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটিও কাজ শুরু করেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক তদন্ত চলছে পুরোদমে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ শিশুর করুণ মৃত্যুর ঘটনায় যথাযথ তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নিহত শিশুর বাসায় গিয়ে তার বাবা-মাকে সান্ত¦না দিয়েছেন। তদন্তে কারো গাফিলতি কিংবা ভুল চিকিৎসার প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন সিটি মেয়র।
স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্ত কমিটির সদস্যরা জানান, নগরীর ব্যস্ততম আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠা এ হাসপাতালটি পুরোপুরি অনিয়মের মধ্যে চলছে। সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স আর জয়েন্ট স্টক কোম্পানির সার্টিফিকেট নিয়ে চিকিৎসা সেবার মতো জরুরী সেবা দিচ্ছে তারা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন নিয়ে তৈরি বিশাল ভবনটিতে হাসপাতাল চালু করা হয়। অনুমোদনবিহীন এ হাসপাতালের নামে ব্যবসা চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করছেন বিএমএর কতিপয় নেতা তদন্ত কমিটির কাছে এমন অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী অনেকে।
এ ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর নির্দেশে গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। রোববার রাতেই ঢাকা থেকে এসে সরাসরি ম্যাক্স হাসপাতালে যান কমিটির তিন সদস্য। অপর দুই সদস্য হলেন শেখ মোঃ মনজুরুর রহমান ও মাকসুদুর রহমান। তারা সেখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেন এবং শিশু রাইফার চিকিৎসার যাবতীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেন।
বৈঠক চলাকালে বিএমএর নেতা মুইজ্জুল আকবর চৌধুরী ও ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী আপত্তিকর আচরণ করলে সাংবাদিক নেতারা বৈঠক বয়কট করেন। পরে ম্যাক্স হাসপাতালের সামনে আধা ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা। রাতে তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রেস ক্লাবে গিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। সেখানে সাংবাদিক নেতারা ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও বিএমএর সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে সিভিল সার্জন আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটির অপর দুইজন সদস্য হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ প্রণব কুমার চৌধুরী ও দৈনিক আজাদীর সিনিয়র সাংবাদিক সবুর শুভ। কমিটির প্রধান সিভিল সার্জন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ইতোমধ্যে নিহত শিশুর বাবা-মার বক্তব্য এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্রও সংগ্রহ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
অপরদিকে ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিক কন্যার করুণ মৃত্যু এবং বিএমএর নেতাদের দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে গতকালও জামাল খান প্রেস ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সাংবাদিকরা। সমাবেশ থেকে অবিলম্বে অবৈধ ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধ ঘোষণা এবং ভুল চিকিৎসার নামে শিশু হত্যাকারী সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়। অন্যদিকে ম্যাক্স হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগে তদন্ত শুরু হওয়ার প্রতিবাদে বিএমএর উদ্যোগে গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে সড়ক অবরোধ করেন বিএমএর নেতারা। প্রায় দুই ঘণ্টা রাস্ত বন্ধ করে সমাবেশ করায় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই এলাকার বাসিন্দা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা।



 

Show all comments
  • Dilsat Nasir ৩ জুলাই, ২০১৮, ৩:০৭ পিএম says : 0
    Ai hospital ta bondho kora hok. Ar sob laisence batil kora hok.
    Total Reply(0) Reply
  • ৪ জুলাই, ২০১৮, ১০:২৩ এএম says : 0
    মানুষ কেন আরেক দেশে যায় তা বুঝা উচিত
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ