মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মেক্সিকোতে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সাধারণ নির্বাচন। একজন প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস সদস্যগণ এবং স্থানীয় ও আঞ্চলিক পরিষদের নেতারা একই সঙ্গে নির্বাচিত হবেন। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে দেশটির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রচারণার শেষ সময় গত বুধবার পর্যন্ত এই হত্যাকাÐ ঘটে। এমন কি দেশটির মিচাওকান নগরীর ভারপ্রাপ্ত মেয়রকে হত্যা করা হয়।
ইটিলেক্ট বার্তা সংস্থাকে জানায়, নিহতদের মধ্যে ৪৮ জন ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নিহত হন। তাদের মধ্যে ২৮ জন প্রাথমিক নির্বাচনি প্রচারণার সময় ও অপর ২০ জন সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণার সময় নিহত হন। ইটিলেক্ট পরিচালক রুবেন সালাজার বৃহস্পতিবার বলেন, ‘দেশটির স্থানীয় পর্যায়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ৭১ শতাংশ হত্যাকাÐের ঘটনা নির্বাচিত কর্মকর্তার ও প্রার্থীদের উপর প্রচারণার সময় ঘটে’। রেডিও নেটওর্য়াক “ফরমুলা” জানায়, এই হত্যাকাÐ স্থানীয় পর্যায়ের জন্য বড় ধরনের প্রশাসনিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এদিকে সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থী আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর (৬৪) যাকে মেক্সিকোর জনগণ এএমএলও বলে ডাকেন, বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বীর সঙ্গে তার ব্যবধান ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। মাত্র কয়েক বছর আগেও তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ মোটেও পরিষ্কার ছিল না। মেক্সিকোর সাবেক মেয়র এএমএলও’র জন্য এ এক অভাবনীয় প্রত্যাবর্তন। শাসকগোষ্ঠীর প্রতি সাধারণ মানুষের তীব্র বিতৃষ্ণা তাকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে এনেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
স¤প্রতি গুয়াদালাজারায় এক জনসভায় বিরাটসংখ্যক মানুষ এএমএলও’র কথা শুনতে আসেন। হালিস্কো অঙ্গরাজ্যের এই রাজধানী শহরে বিত্তবানদের বাস। এর আগে তারা এএমএলও’র বাম মঞ্চকে আমূল সংস্কারবাদী মনে করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।
জনসমাবেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের ইতিহাসে আমরা তিনটি রূপান্তর পেয়েছি: আমাদের স্বাধীনতা, সংস্কার ও বিপ্লব। এবার আমরা চতুর্থটি ছিনিয়ে নিতে যাচ্ছি।’
ন্যাশনাল রিজেনারেশন মুভমেন্ট (এমওআরইএনএ)-এর ব্যানারে প্রতিদ্ব›িদ্বতাকারী এএমএলও লেবার পার্টি ও সোশ্যাল ইকোনোমিক পার্টির সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছেন। প্রেসিডেন্ট পদে এএমএলও’র তৃতীয় দফা নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বী তিনজন। ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টির রিকার্ডো আনায়া, ইনস্টিটিউশনাল রেভুল্যুশনারী পার্টির হোসে অ্যান্থনিও মিয়াডে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জেমি এল ব্রাঙ্কো রডরিগেজ।
ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টি জোটবদ্ধ হয়েছে ডেমোক্রেটিক রেভুল্যুশনারি এবং সিটিজেন’স মুভমেন্ট এর সঙ্গে। মিঃ মিয়াডের ইনস্টিটিউশনাল রেভুল্যুশনারি পার্টি গাঁটছড়া বেঁধেছে নিউ অ্যালায়েন্স পার্টি ও ইকোলোজিস্ট গ্রিন পার্টির সঙ্গে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও এএমএলও ৫১ থেকে ৫৪ শতাংশ ভোট তথা নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বীর চেয়ে ২০ শতাংশেরও বেশি ভোটে জয়লাভ করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
গত জানুয়ারী থেকে এএমএলও’র জনপ্রিয়তায় ব্যাপক উত্থান হয়েছে। সে সময় তিনি ৩৮ শতাংশ ভোট পাবেন বলে জরিপে দেখানো হয়েছিল। বর্তমানে মিঃ মিয়াডে পেতে পারেন ২২ শতাংশ এবং তার প্রায় কাছাকাছি ২১ শতাংশ ভোট পেতে পারেন মিঃ আনায়া। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী এল ব্রাঙ্কো রডরিগেজ মাত্র ৩ শতাংশ ভোট পেতে যাচ্ছেন।
এর আগে তিনবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন তিনি এবং একবার অল্প ব্যবধানে হেরে গিয়ে কয়েক মাসের জন্য রাজধানী মেক্সিকো সিটি অচল করে দিয়েছিলেন। এবার লোপেজ ওব্রাদর আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে মোকাবিলা করতে পারবেন। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের বিষোদ্গারের কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে খারাপ। নিজে চরিত্রগতভাবে যুদ্ধংদেহী হলেও এএমএলও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিষয়ে বিস্ময়কর রকমের মধ্যপন্থী। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখব। কিংবা বলা যায়, আমরা একটি সুন্দর দ্বিপক্ষীয় সুসম্পর্ক বজায় রাখব, কারণ তা অপরিহার্য।’
বস্তুত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ কয়েক ব্যাপারে এএমএলও’র মিল আছে। উভয়েই তাদের সমালোচক ও অনুমিত শত্রুদের কঠোর ভাষায় আক্রমণ করে থাকেন। উভয়েই গণমাধ্যম ও তাদের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করাকে সন্দেহের চোখে দেখেন। তাদের ভিত্তি ও আবেদনের কেন্দ্র রয়েছে জাতীয়তাবাদী বোধ ও হৃতগৌরবের প্রতি নস্টালজিয়া। তবে ট্রাম্প যেখানে ডানপন্থী, এএমএলও সেখানে বামে যান। পাশাপাশি, ট্রাম্প যেখানে মেক্সিকোকে তার আক্রমণের প্রিয় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছেন, এএমএলও সেখানে নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টকে মেক্সিকোর জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করেন।
‘ব্রাজিলিয়ান, ফরাসি, ওরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঝগড়া করতে পারে, কিন্তু মেক্সিকোর জন্য, ভূরাজনৈতিক কারণে, আমরা তা করতে পারি না,’ তিনি বলেন। ‘আমাদের একটা সমঝোতায় আসতেই হবে।’ সূত্র : দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
সন্ত্রাসী চক্রের বিরুদ্ধে এক বিধবার লড়াই
এদিকে বিবিসি জানায়, আজ অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় ১৩০ জনের বেশি প্রার্থী নিহত হয়েছেন। এরকম একজন প্রার্থী নিহত হওয়ার পর ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তার বিধবা স্ত্রী। নিজেই নেমেছেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। একজন প্রার্থীকে হামলার ভিডিও একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়। মারিও চ্যাভেজ মেক্সিকোর একটি শহরের মেয়র পদের প্রার্থী। দুইবার তার ওপর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হামলা করেছিল। ‘তারা আমাকে বহুবার খুন করতে চেয়েছে। আমি শুনেছি তারা এই ক্যাম্পেইন শেষ হওয়ার আগেই আমাকে মেরে ফেলার জন্য ঘাতকদের ভাড়া করেছে। এই প্রার্থী তার নিজের জন্য দেহরক্ষী চেয়ে আবেদন করেছেন, কিন্তু এখনো মেলেনি।
‘আমার মনে হয় যেসব মানুষ ক্ষমতা হাতে পায়, তারা হয় অপরাধীদের সাথে যুক্ত হয়ে যায় নাহলে নিজেরাই অপরাধী সংগঠন গড়ে তোলে লোকজনকে আতঙ্কিত ও বাধ্য রাখার জন্য। তারা অনেকেই আমার বিপক্ষে, কারণ তারা চায় না যে আমি মেয়র নির্বাচিত হই। আমার ভয় আছে, কিন্তু এইসব মানুষদের জন্য কিছু করতে চাই। তাই আমি লড়াই চালিয়ে যাবো। তারা সত্যিকার পরিবর্তন চায়’।
৩৫ বছর বয়সী হোসে রেমেডিওস আরেক শহরের মেয়র পদের প্রার্থী ছিলেন। ছয় সপ্তাহ আগে রাজনৈতিক এক সভা শেষে প্রকাশ্য দিনের আলোয় তাকে হত্যা করা হয়।
তার স্ত্রী কারমেন ওর্তিয। স্বামীর মৃত্যুর পর বদলে গেছে তার জীবনের গতিধারা।
‘ভয় দুই ধরনের হয়। এক ধরনের ভয় আপনাকে পঙ্গু করে দেবে, আরেকটি আপনাকে আগের চেয়েও বেশি দৃঢ়তা দেবে’। প্রথমে ভেঙে পড়লেও সন্তানদের জন্য দৃঢ়তা পান কারমেন।
‘আমার কাছে আমার স্বামী ছিল আমাদের ঘরের ভিত্তি। আমি তাকে বলতাম, তুমি কখনো ভেঙে পড়লে আমাদের পুরো ঘর ভেঙে পড়বে। তাকে মেরে ফেলার পর দুই তিনদিন আমি বিছানা থেকে উঠতেই পারিনি। কিন্তু একটা সময় আমার বাচ্চারা এসে বলতে থাকে তারা ক্ষুধার্ত। তখন আমি আর পারিনি। আমাকে উঠে দাঁড়াতে হয়েছে।’
কারমেন এবং তার তিন শিশু সন্তানকে এখন সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষীরা সর্বদা অনুসরণ করে। যখন সে তাদের স্কুলে দিয়ে আসে কিংবা নিয়ে আসে। এমনকি সে যখন তার স্বামীর সমাধিস্থলে যায় তখনো।
কারমেন নিজের স্বামীর জায়গায় লড়াই করতে মাঠে নেমেছেন। বলেন, ‘আমার নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে হয়, কিন্তু কোনও সন্দেহ নেই, আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম আরও দৃঢ়চেতা হিসেবে। কারণ আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি আমাকে আমার স্বামীর ভূমিকাও পালন করতে হবে’।
কারমেন জনসভায় সাধারণ মানুষকে সচেতন করছেন অধিকারের বিষয়ে। তিনি তাদের বলেন, ‘আমি এখানে আপনাদের কাছে এসেছি তার স্বপ্নগুলো পূরণ করতে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমি ক্লান্ত এবং আমি জানি আপনারাও। আমরা আমাদের সমাজে শান্তি ও সহাবস্থান ফিরিয়ে আনতে চাই’। তবে মনোবল শক্ত করে নির্বাচনের লড়াইয়ে নামলেও কারমেনের মন থেকে শঙ্কার মেঘ পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি।
‘এখন আমার সামনে আশঙ্কা কেবল একটি পিতার অবর্তমানে আমার সন্তানদের সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলা’।
কারমেন জানান, তার স্বামী একটি শান্তির ও নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। স্ত্রী হিসেবে মৃত স্বামী যে কাজটি শুরু করেছিল সেই কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলেছেন একলা কারমেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।