Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছিনতাই-ডাকাতি আতঙ্ক

নূরুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

 ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের ট্রেন যাত্রীরা ছিনতাই ও ডাকাতি আতঙ্কে থাকেন। এ রেলপথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে প্রায়ই ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনা ঘটে। কথায় কথায় যাত্রীদেরকে মারপিট করে আহত করা, চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া, ট্রেনে ঢিল ছুঁড়ে যাত্রীদের মাথা ফাটানোর ঘটনাও ঘটে প্রতিনিয়ত। তিন দিন আগেও মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ২৬৪ নং লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিনে উঠে উপমন্ত্রীর ভাতিজা পরিচয় দিয়ে এক যাত্রী ওই ট্রেনের চালককে নাজেহাল করে। এসময় ট্রেনটি ঠাকুরকোনা স্টেশনে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় আটকে থাকে। রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এ ঘটনায় ওই ট্রেনের চালক একটি জিডি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে মে মাসে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে কমপক্ষে ৫টি। এর বাইরেও অনেক ঘটনা আছে যেগুলো রেকর্ড করা হয় না। ভুক্তভোগিরা জানান, চলন্ত ট্রেনে ছিনতাইকারীচক্র হামলা করলেও ট্রেনে কর্তব্যরত রেল পুলিশকে তখন খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার খুনের ঘটনাগুলোর বেশিরভাগই অপমৃত্যু মামলার বেড়াজালে আটকে থাক। রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনী ময়মনসিংহ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ময়মনসিংহ জিআরপি থানার অধীন ৩৯টি মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই অধিকাংশই অপমৃত্যু মামলা। একটি অপমৃত্যু মামলা পরে হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয় এবং এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অভিযোগে দুই জনকে গ্রেফতরার করে পুলিশ। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন কয়েকজন যাত্রী জানান, এই রেলপথে ছিনতাই ও যাত্রীদের কাছে থেকে টাকা, দামী জিনিসপত্র ও মোবাইল সেট কেড়ে নিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। যাত্রীবেশি ডাকাতদল ট্রেনের দরজার কাছে সংঘদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কোন যাত্রী টয়লেট ব্যবহারের জন্য বগীর শেষের দিকে আসলে তাকে কৌশলে দরজার কাছে ডেকে নিয়ে ডাকাতদল তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরে। এরপর তার পকেটে থাকা মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন সেট হাতিয়ে নিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। কোনো কোনো সময় ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া সেই যাত্রী চলন্ত ট্রেনে কাটা পড়ে, আবার কখনও দেহ অক্ষত থেকে যায়। রেললাইন থেকে উদ্ধারের পর সেই লাশকে দুর্ঘটনায় নিহত বলেই ধরা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লাশের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। অজ্ঞাত বা বেওয়ারিশ হিসাবেই সেই লাশ দাফন করা হয়। ভুক্তভোগিরা জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে সবচেয়ে বেশি ছিনতাই ও হত্যার ঘটনা ঘটে রাতে। আর ছিনতাই ও ডাকাতির স্পটগুলো হচ্ছে, গফরগাঁও, ত্রিশাল ও ময়মনসিংহ সীমানা। রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে গত ২৩ এপ্রিল। ওই দিন রাত ৯টার দিকে ময়মনসিংহের কাছে ট্রেন থেকে পড়ে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। রেল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, এটি দুর্ঘটনা। এর আগে ১ এপ্রিল ঢাকা-জামালপুর রেলপথের তিস্তা এক্সপ্রেসের এক যাত্রীকে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনাটি ঘটে গফরগাঁও সীমান্ত এলাকায়। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হত্যার কথা স্বীকার করেছে। গত ২৩ মার্চ একইভাবে ছিনতাই শেষে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়। আলাপকালে জিআরপি থানার এক কর্মকর্তা জানান, চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা দুর্ঘটনা বলে চিহ্নিত করা হয়। আবার মাঝপথে পড়ে থাকায় লাশের পরিচয় সনাক্ত করার কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য প্রথমে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়।
ভুক্তভোগি একজন যাত্রী জানান, মাস দেড়েক আগেও তিনি রাতের ট্রেনে ঢাকা থেকে জামালপুর যাওয়ার সময় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীচক্র তার সাথে থাকা বৃদ্ধ বাবাকে আসন থেকে তুলে দিতে গেলে তিনি প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীর দল তাকে ডেকে নিয়ে বেদম মারপিট করে। জামালপুর স্টেশনে গিয়ে ছিনতাইকারীরা নেমে গেলে তিনি তার অসুস্থ বৃদ্ধ বাবাকে হারিয়ে ফেলেন। কয়েক ঘণ্টা পর সেই বাবাকে খুঁজে পান । ওই যাত্রীর অভিযোগ, ছিনতাইকারীচক্র তাকে অযথা মারধর করার সময় তিনি কারো সহযোগিতা পান নি। ট্রেনে কর্তব্যরত পুলিশও এগিয়ে আসেনি। বরং পুলিশ ওই বগী থেকে সটকে পড়ে। যাত্রীদের অভিযোগ, ছিনতাইকারীরা সাধারণত দলবেঁধে প্রথমে ট্রেনের ছাদে ওঠে। পরে সুযোগ বুঝে তারা ট্রেনের বগীতে আসে। সামান্য জিনিসের জন্যও তারা মানুষ হত্যা করতে দ্বিধা করে না। কখনো কখনো ট্রেনের জানালা বন্ধ করে ছিনতাই করে। এরপর স্টেশনে ট্রেন থামলে নির্বিঘেœ নেমে যায়। পুলিশ এদের চেনে, কিন্তু ব্যবস্থা নেয় না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ছিনতাই


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ