Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইসরাইলি গুলিতে রক্তে ভেসে যায় প্রেস লেখা নীল জ্যাকেট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০১৮, ১১:২০ এএম | আপডেট : ৫:৩৯ পিএম, ২৩ জুন, ২০১৮

ইয়াসের মুর্তজা। বয়স ৩০ বছর। গাজা উপত্যকায় ছবি তুলতেন। আচমকা তার তলপেট ফুঁড়ে দেয় ইসরাইলি স্নাইপারদের গুলি। পাশেই ছিলেন তার বন্ধু আশরাফ আবু আমরা। তিনি দেখলেন, রক্তে ভেসে যাচ্ছে ‘প্রেস’ লেখা নীল জ্যাকেট। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ইয়াসের।

ঘটনাটা প্রায় আড়াই মাস আগের। সে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে কেঁপে ওঠেন তার বন্ধু আশরাফ আবু আমরা। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ভূমি দিবসের বিক্ষোভে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে ইসরাইলি স্নাইপাররা।

গত ৩০ মার্চ শুরু হওয়া বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ১৩২ জন নিহত হয়েছেন। তবু মধ্য গাজার ফ্রিল্যান্স চিত্রসাংবাদিক আশরাফ বলেন, যেখানে বিপদ, সেখানেই ছবি তুলব।

বিপদের সঙ্গে নিত্য সংসার দায়ের আল-বালাহর বাসিন্দা আশরাফ ও তার সহকর্মীদের।-খবর আনন্দবাজারপত্রিকা অনলাইন।

দিনটা ৬ এপ্রিল। সকালে অন্য সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলতে বের হয়েছিলেন আশরাফ। খবর ছিল, ওই দিন গাজ়ার দক্ষিণপ্রান্তের শহর খান ইউনিসে বিক্ষোভ হতে পারে।

আশরাফরা গিয়ে দেখেন, ফিলিস্তিনি তরুণ ও ইসরাইলি সেনা— প্রস্তুত দুপক্ষই। এই বিবদমান দুপক্ষের বাইরে তারা যে তৃতীয় পক্ষ, তা বোঝাতে আশরাফরা সেদিন গায়ে দেন নীল জ্যাকেট। যার গায়ে বড় বড় অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা ছিল ‘প্রেস’।

শুরু হল ফিলিস্তিনিদের ভূমি দিবসের প্রতিবাদ। আশরাফের অভিজ্ঞতা, ট্রাকে করে আনা হল অজস্র টায়ার। তাতে আগুন দিলেন ফিলিস্তিনি তরুণরা।

উল্টো দিক থেকে ধেয়ে এসেছে গ্যাস বোমা, বুলেট। আচমকা আকাশ ফুঁড়ে দেখা দিল যুদ্ধবিমান। পড়তে থাকল একের পর এক বোমা।

আশরাফ দেখলেন, সীমান্তে লুটিয়ে পড়ছে মানুষ। সেই যুদ্ধভূমির একের পর এক ছবি ক্যামেরাবন্দি করছিলেন আশরাফরা।

কাছেই ছিলেন ইয়াসের। হঠাৎই আশরাফের ক্যামেরার ফোকাস নড়ে গেল। দেখলেন রক্তে ভেসে যাচ্ছে ‘প্রেস’ লেখা নীল জ্যাকেট। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ইয়াসের।



সেই মৃত্যুতেই দিনটা শেষ হয়নি। আশরাফ লিখেছেন- বন্ধুকে হারানোর যন্ত্রণা চেপে রেখেই ছবি তুলছিলাম, কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঝলসে গেল বাঁ হাতটা। মনে হল সব শেষ।

প্রায় অচেতন অবস্থায় আশরাফকে উদ্ধার করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। আশরাফের লেখায়- ভেবেছিলাম, আর ছবিই তুলতে পারব না। আন্দোলনকারী ও সাংবাদিকদের সেদিন আলাদা করে দেখা হয়নি। তাই এত বড় বিপদ ঘটল।

আসলে গাজ়ায় সাংবাদিকদের বিপদ নানা রকম। বেশ কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় আশরাফ দেখেছেন, প্রথমত বোমা-গুলিতে মৃত্যুর ভয়। দ্বিতীয়ত সাংবাদিক স্বীকৃতি না পাওয়ার ভয়।

যেমন মৃত্যুর পর ইয়াসের আদৌ সাংবাদিক কিনা তা স্বীকার করতে চায়নি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।

তৃতীয়ত বিদেশে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিস্তর বাধা রয়েছে গাজ়ার সাংবাদিকদের।

যেমন ২০১৬-তে রাশিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছিলেন আশরাফ। কিন্তু ইসরাইলি অবরোধের জেরে পুরস্কার নিতে যেতে পারেননি তিনি।

দীর্ঘ চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে আশরাফ ফের ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’ নেমেছেন, বিপদের ছবি তুলতে। হাতে ক্যামেরা। গায়ে নীল জ্যাকেট। তাতে বড় বড় অক্ষরে ইংরেজিতে লেখা ‘প্রেস’।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসরাইলি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ