Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৌলভীবাজারে বন্যার পানি কমছে, শঙ্কা বাড়ছে দুর্গতদের

মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৮, ১১:৩৬ এএম

বোরো ধান ঘরে উঠেছে আগেই। এরপরও মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ, মনু নদীর বাঁধ ভেঙে আসা বন্যা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে গোলার ধান। শুধু ধানই নয়, বিধ্বস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, ভেসে গেছে গোয়ালের গরু। এখন এলাকার অবস্থাসম্পন্ন কৃষকেরাও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।

মনু ও ধলাই নদীর মাঝামাছি কামারচাক ইউনিয়ন। বন্যায় এই ইউনিয়নের ৪২ গ্রামের ২৯ হাজার মানুষই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সাড়ে ৩ হাজার বাড়িঘর ধসে পড়েছে। ফলে সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।

গ্রামীণ সড়কের কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও পানি কোমর সমান। আশ্রয় কেন্দ্র থেকেই মাঝেমাঝে কলার ভেলায় চড়ে ঘরবাড়ি দেখে আসছেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের ভবন লাগোয়া মশাজান গ্রাম ফাঁকা। পশ্চিম দিকে যে দু’একটা ভিটে ভেসে উঠেছে, তা এখনো বসবাসের অযোগ্য। এক সপ্তাহের বন্যায় এসব বাড়িঘরের বাঁশ-বেতের বেড়া, মাটির দেয়াল সব নষ্ট হয়ে গেছে।

সেখানেই স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শিহাব উদ্দিন বিধ্বস্ত ঘরের ভেতর থেকে কোদাল দিয়ে টেনে কাদা-মাটি সরাচ্ছে। মা ঘরকে বসবাসের যোগ্য করার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। শিহাবে বাবা আলাল মিয়া ঘর ঠিক করতে প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে বাইরে গেছেন।

শিশু শিহাব পরিবর্তন ডটকমকে জানায়, ঈদের দিন সকালে বন্যার পানি ঘরে প্রবেশ করে। এরপর সবাই আত্মীয়দের বাড়িতে উঠি। কারও এবার ঈদ করা হয়নি। গত বুধবার থেকে পানি নামছে খবর পেয়ে বাড়ি ফিরে ঘরবাড়ি ঠিক করতে শুরু করেছি।

একই গ্রামের মানিক ও মনির মিয়ার বাড়িঘরের অবস্থাও একই। উঠোনে কোমর পানি। নানা স্থানে বন্যার ক্ষতের চিহ্ন।

এই গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক জয়নাল আবেদিন শিবু। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে জানান, এই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। বসবাস উপযোগী করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু, এসব পরিবার খুবই গরীব।

তিনি আরও জানান, এখন পানি নামছে। দুর্গত এলাকার বাতাসে দুর্গন্ধ। শিশুরা খুবই কষ্টে আছে।

সিলেট মদন মোহন কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক মশাজান গ্রামের আবুল কাশেম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি এসেছিলাম। কিন্তু, ঈদের দিন ভোরে ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে। উপায়ন্তর না দেখে বুক পানি ভেঙে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে যাই। ঈদের নামাজও পড়তে পারিনি। এখন বন্যার পানি নামছে। সঙ্গে মানুষের দুর্দশাও বাড়ছে।’

এরই মধ্যে কামারচাক ইউনিয়ন কার্যালয়ে ত্রাণ নিতে হাজার হাজার নারী-পুরুষের লাইন চোখে পড়ল। ইসলামপুর গ্রামের কৃষক মফিজ মিয়া (৬০) স্ত্রী ফয়জুন্নেছা (৫০) ও কন্যা হাসনাকে (২২) নিয়ে ইউনিয়ন কার্যালয়ের কিছুদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন বিষণ্ন মুখে।

তিনি জানালেন, নিজের ১২ কিয়ার (৩০ শতকে ১ কিয়ার) বোরো খেতের ধান তুলেছিলেন। কিন্তু, বন্যা সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সঙ্গে দুটি গরুও। এখন সাহায্য ছাড়া তার চলার উপায় নাই।

দক্ষিণ কড়াইয়া গ্রামের ছাদ আলী (৪৫), আবদার নির্মল দাশ (৪০), জয়নাল মিয়া (৪২), হাটিকড়াইয়ার খতিফুন বেগম (৩৫), পঞ্চাননপুর গ্রামের কদর মিয়াসহ (৪০) অনেকেই জানান, চলতি মৌসুমে বোরো ফসল ভালো হয়েছিল। দুর্যোগ ছাড়াই সবাই ঘরে ফসল উঠাতে পারেন। সবার মুখে হাসিও চিল। কিন্তু, হঠাৎ করেই বন্যা সব শেষ করে দিলো।

কামারচাক ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হক সেলিম জানান, ইউনিয়নের ২৯ হাজার মানুষের সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ৪২টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেগুলো দুর্গতদের দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, বোরো ঘরে তোলার পর কৃষকের মুখে যে হাসি ছিল, বন্যা এখন সব কেড়ে নিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের কামারচাকের ভোলানগরের অংশে ভাঙন শুরু হয়। এরপর দেখা দেয় বন্যা। বিগত ২০-২২ বছরের ইতিহাসে এমন বন্যা কামারচাকবাসী দেখেনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ