পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে দেশ ও জাতি আজ বিপর্যস্ত। এর বিরুদ্ধে নানামুখী পদেক্ষপ গ্রহণ করেও আশানরূপ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ ক্রামগতভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদকের মরণ নেশায়। যুব সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এতে করে কেবল নিজেদেরই সর্বনাশ করছে এমন নয়, দেশ, জাতি ও সমাজকেও নিক্ষেপ করছে নানামুখী সমস্যা ও বিপর্যয়ের মুখে। মরণনেশা মাদকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে দেশ ও জাতি। লাখ লাখ তরুণ-তরুণী এ মরণনেশায় আক্রন্ত। এ নেশায় আক্রন্ত হয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য যুবক-যুবতী। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, হালে যুবকদের পাশাপাশি স্কুলের কিশোর ও পথশিশুরাও আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদকে। নেশা গ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের অধিকাংশই নি¤œবিত্ত পরিবারের। যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এ মরণ নেশারই মর্মান্তিক শিকারে পরিণত হয়েছিল পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এর কর্মকর্তা মাহফুজ দম্পত্তির সন্তান যা তখন দেশব্যাপী রীতিমতো ঝড় তুলেছিল। ইয়াবা আসক্ত অষ্টাদশী মেয়ে ঐশির হাতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন তারা। ভয়ানকভাবে মাদকাসক্ত মেয়ের উপর খবরদারী ও নজরদারী জোরদার করায় সে তার বন্ধুদের নিয়ে পরিকল্পনা আঁটে নিজের জন্মদাতা বাবা-মাকে হত্যা করার। পরিকল্পনা মাফিক কফিতে মিশিয়ে দেয় চেতনানাশক ট্যাবলেট। কফি খাওয়ার পর তারা যখন অঘোর ঘুমে, তখন ছুরিকাঘাতে তাদের হত্যা করে। হত্যার পর বাসা থেকে টাকা ও গহনা নিয়ে পালিয়ে যায় সে। পরবর্তীতে সে নিজেই ধরা দেয় পুলিশের হাতে। মিডায়ার কল্যাণে এই লোমহর্ষক সংবাদ জানার পর দেশের মানুষ হকচকিয়ে যায়। নড়েচড়ে উঠে পুলিশ, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ। নেশার ছোবল যুব সমাজকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এ দুর্ভাবনায় আতকে উঠে সবাই। মধ্যরাতের টকশোগুলো হয়ে উঠে সরগরম। আসলে আমাদের অবস্থা হলো সর্বনাশ যখন তার সবগুলো বিষদাঁত এক সঙ্গে বসিয়ে দেয়, তখনই আমাদের কানে পানি যায়। এর আগে কোনো বিষয়ই কেউ গায়ে লাগাতে চায় না। মাদকবিরোধী চলমান অভিযানেও বেরিয়ে আসছে ভয়াবহ তথ্য। আশির দশকে প্রথম বাংলাদেশে হেরোইনের আগ্রাসন ঘটে। এ দশকের শেষের দিকে ফেনসিডিল মাদক রাজ্যের পরিচালিকা শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে মাদক রাজ্যে আগমন ঘটে ইয়াবার। প্রথম দিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি এর আগ্রাসনকে। আগে এটি অভিজাত পাড়া ও স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটি পড়ুয়া ধনীর দুলালদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন এর বিস্তার সর্বত্র। অভিজাত এলাকার সীমা ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। মফস্বল এলাকাতেও এখন তা সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। রাজধানীর আপাত অভিজাত শ্রেণির তরুণ-তরুণীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইয়াবায় আসক্ত। এ নেশার অর্থ জোগাতে তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। তরুণীদের কেউ কেউ দেহপসারিণী হয়ে জোগাচ্ছে মাদক কেনার অর্থ। দেশের বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণী ও প্রভাবশালী চক্র জড়িত রয়েছে মাদক ব্যবসার সঙ্গে। মাদকের নেটওয়ার্ক দ্রæত ছড়িয়ে পড়ছে অভিজাত এলাকার ক্লাব, রেস্তোরাঁ, আবাসিক হোটেল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে। যত্রতত্র দেদারসে মিলছে সর্বগ্রাসাী মাদক। দেশ-জাতির এহেন সংকটকালে ‘জাতির বিবেক’ বলে খ্যাত নাগরিক সমাজ রীতিমতো গলদঘর্ম হচ্ছেন সর্বনাশা মাদকের এ সয়লাব রোধ কল্পে নানা ধরনের প্রেসক্রিপশন দিয়ে দিয়ে। কিন্তু মাদকের মরণ থাবা থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হচ্ছে না সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্রকে। সকল প্রেসক্রিপশন ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু বড় পরিতাপের ব্যাপার হলো, ভুলেও তাদের মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছে না ইসলামী অনুশাসন পরিপালনের কথা। অথচ কল্যাণের ধর্ম ইসলামই পারে মাদকমুক্ত সামাজ ও রাষ্ট্র উপহার দিতে। রুখে দিতে পারে সর্বগ্রাসী মাদকের আগ্রাসনকে। এ যেন ‘নিজের নাকে খত দিয়ে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা’র মতো। যে ইসলামই পারতো সর্বনাশা মাদকের ছোবল থেকে দেশ, জাতি ও সমাজকে মুক্ত করতে ও মুক্ত রাখতে, সে ইসলামের বিরুদ্ধেই তো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতির ‘দায়িত্বশীল’ শ্রেণি। এরপর শুধুই লৌকিকতাপূর্ণ সচেতনতামূলক সভা-সেমিনার, গোল টেবিল বৈঠক, টকশো এবং কিছু শপথ বাক্য পাঠের পর্ব কীভাবে এই ভয়াবহ ব্যাধি থেকে মুক্তি দিবে? মুক্তির একমাত্র উপায় ইসলাম। যে সমাজে ইসলামের প্রথম বিকশিত হয়েছিল সে সমাজে মাদক ছিল জীবন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। মাদক ছাড়া আরব্য আভিজাত্য ও সংস্কৃতির কল্পনা করাও সম্ভব ছিল না। অথচ ইসলামের কল্যাণে সেই সমাজ থেকে মাদক ও মাদকের ব্যবহার শুধু নির্মূলই হলো না; চরম ঘৃণিত ও অপবিত্র বস্তুতে পরিণত হলো। আর মাদকাসক্ত সমাজের চোখে চরম ঘৃণিত, লাঞ্চিত, অপমানিত ও দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর স্থানে নেমে এলো। মাদকের বিষয়ে মদীনা সমাজের এই আমূল পরিবর্তন একমাত্র ইসলাম ও ইসলামের নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরই অবদান। রোজ কিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগ ও জাতির জন্য এ এক আলোকিত দৃষ্টান্ত। কল্যাণের ধর্ম ইসলামে মাদকদ্রব্য হারাম ও চরম ঘৃণ্য বস্তু। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয় মদ, জুয়া, পুজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়কশর ঘৃণ্য বস্তু ও শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর। এতে তোমরা (ইহকাল ও পরকালে) সফল হবে। নিশ্চয় শয়তান তো চায় মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মাঝে শত্রæতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং আল্লাহর স¥রণ ও নামাযে বাধা দিতে। অতএব তোমরা কি এ কাজগুলো পরিহার করবে? (সূরা মায়েদা: ৯০-৯১) এ আয়াতে মাদকের চূড়ান্ত বিধান দেয়া হয়েছে এবং একে ঘৃণ্য ও শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, একে উল্লেখ করা হয়েছে পূজার বেদীর সাথে। এতেই মাদকের ভয়াবহতা অনুমান করা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিলেন। বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী পদার্থই হারাম।’ [বুখারী, হাদীস: ২/৮৩৭; মুসলিম: ২/১৬৭; আবু দাউদ: ২/৫১৮, হাদীস: ৩৬৮০; তিরমিযী: ২/৮; ইবনে মাজা: ২৪২] বর্ণিত হাদীসের ভাষ্যমতে, নেশা ও মাদক সম্পূর্ণরূপে হারাম, তা যে নামেরই হোক আর যেভাবেই গ্রহণ করা হোক। সাহাবী হযরত জাবের (রা.) এর বর্ণনায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম বলেন, যা অধিক পরিমাণে সেবন করলে নেশা সৃষ্টি করে তা সামান্য পরিমাণ সেবন করাও হারাম। [নাসাঈ: ২/২৭৮; আবু দাউদ: ২/৫১৮, হাদীস: ৩৬৮০; তিরমিযী: ২/৮; ইবনে মাজা: ২৪২) আরেক বর্ণনায় এসেছে, সাহাবী দাইলাম হিময়ারী (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লামকে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা এক শীত প্রধান রাষ্ট্রের নাগরিক, আমাদের কঠোর পরিশ্রমের কাজ করতে হয়। আমরা গম দিয়ে এক ধরনের পানীয় তৈরী করি। (এবং তা পান করি) যার দ্বারা আমরা কাজের শক্তি সঞ্চার করি এবং শীতের মোকাবিলা করি। এ কথা শুনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, সেটা কি নেশা সৃষ্টি করে? আমি বললাম, হ্যাঁ, নেশা সৃষ্টি করে। তখন তিনি বললেন, তাহলে তা বর্জন কর। আমি বললাম, লোকেরা তো তা বর্জন করবে না। এ কথা শুনে তিনি বললেন, বর্জন না করলে তাদের সাথে যুদ্ধ কর। অর্থ্যাৎ যদ্ধু করে হলেও তা বর্জনে তাদেরকে বাধ্য কর। (আবু দাউদ: ২/৫১৮, হাদীস: ৩৬৮৩)
এতো গেল মাদক সেবন সংক্রান্ত শরীআতের বিধি-নিষেধ। এ ছাড়াও মাদকের সাথে যে কোন পর্যায়ের সংশ্লিষ্টতা ইসলামী শরীআতে নিষিদ্ধ এবং আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের লানত ও অভিশাপের কারণ। সাহাবী হযরত জাবির ইবেন আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়্ সাল্লাম মক্কায় অবস্থান করছিলেন, তখন তাঁকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মাদক দ্রব্য বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। [বুখারী, হাদীস: ১/২৯৭; মুসলিম: ২/২৩] সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, পরম দয়ালু আল্লাহ তাআলা অভিশাপ করেছেন মাদকের উপর, মাদক সেবনকারীর উপর, পরিবেশনকারীর উপর, বিক্রয়কারীর উপর, ক্রয়কারীর উপর, প্রস্তুতকারীর উপর, যার নির্দেশে প্রস্তুত করা হয় তার উপর, বহনকারীর উপর, যার নিকট বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় তার উপর এবং তার উপর যে মাদকদ্রব্য বিক্রয়লব্ধ অর্থ ভোগ করে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ৫৭১৬ ; তিরমিযী: ১/২৪২ ; আবু দাউদ: ২/৫১৮, হাদীস: ৩৬৭৪ ; ইবনে মাজা: ২৪২) সারকথা, মাদক এতোই ঘৃণ্য ও অস্পৃশ্য যে, উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয়, বহন, ও সেবনের যে কোন পর্যায়ে এর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের অভিসম্পাতের কারণ। এখানেই শেষ নয়। মাদক দ্রব্যের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা তো অপরাধ ও নিষিদ্ধই, এমনকি যে মজলিসে মাদক সেবন করা হয়, সেখানে উপস্থিত থাকাও নিষিদ্ধ ও চরম ঘৃণ্য। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যবানে উচ্চারিত হয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারী। এক হাদীসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে সে যেন সেই দস্তরখানে না বসে যাতে মাদক গ্রহণ করা হয়। [দারেমী; ২/১৫৩; মুস্তাদরাকে হাকীম: ৪/১৪৩]
মাদক গ্রহণের পার্থিব ক্ষতি ও কুফল তো আমরা অহর্নিশ দেখছি ও শুনছি। সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতি এর কড়া মাশুল দিচ্ছে। এর বিষ ক্রিয়ায় উচ্ছৃংখলতা, উন্মত্তা, শত্রæতা, হানাহানি, খুনাখুনি ও রাহাজানী সমাজের সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো তো দুনিয়ার ক্ষতি ও শাস্তি। আর পরকালে এ জন্য যে শাস্তি ভোগ করতে হবে সে সম্পর্কে দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্তক করে গেছেন স্বীয় উম্মতকে। সাহাবী ইবনে আব্বাসের বর্ণনায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী পদার্থই হারাম। আর যে কেউ নেশা সৃষ্টিকারী পদার্থ সেবন করবে, তার চল্লিশ দিনের নামায নষ্ট হয়ে যাবে। এরপর যদি সে তাওবা করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। (এভাবে তিনবার তার তাওবা কবুল করবেন। এরপর) যদি চতুর্থবার আবার সেবন করে, তাহলে সে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা নিজের উপর অপরিহার্য করে নিয়েছেন যে, তাকে তিনি ‘তীনাতুল খাবাল’ পান করাবেন। জিজ্ঞাস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! তীনাতুল খাবাল কি? তিনি বললেন, তীনাতুল খাবাল হলো, জাহান্নামীদের দেহ থেকে নির্গত পুঁজ। এরপর তিনি আরও বলেন, যে কেউ এমন কোন শিশুকে মাদকদ্রব্য সেবন করাবে, যে মাদকের হারাম হওয়া সম্পর্কে জানে না, আল্লাহ তাআলা নিজের উপর অপরিহার্য করে নিয়েছেন যে, তাকেও তিনি ‘তীনাতুল খাবাল’ পান করাবেন। [আবু দাউদ: ২/৫১৮, হাদীস: ৩৬৮০; মুসলিম: ২/১৬৭; তিরমিযী: ২/৮; ইবনে মাজা: ২৪২] সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ার শরাব তথা মাদক দ্রব্য সেবন করবে পরকালে জান্নাতের শারাবান তহুরা পান করা থেকে বঞ্চিত থাকবে। [বুখারী, হাদীস: ২/৮৩৬; আবু দাউদ: ২/৫১৮, হাদীস: ৩৬৮০; তিরমিযী: ২/৮; ইবনে মাজা: ২৪২] এক কথায় কল্যাণের ধর্ম ইসলামে নেশা ও মাদক চরম ঘৃণ্য ও বর্জনীয় বস্তু এবং তার ব্যবহার দÐযোগ্য অপরাধ। এই ঘৃণ্য ও পরিত্যাজ্য বস্তুরই ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে ‘সভ্য দুনিয়া’র ‘আধুনিক’ মুসলিম সমাজে। প্রচার, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের এই ডিজিটাল যুগে ব্যবস্থাপনার সকল আয়োজন সত্তে¡ও কেন আমরা নিরুপায়? কিসের অভাবে বর্তমান সভ্য ও সভ্যতার দাবিদারগণ অনাচার নির্মূল ও সভ্য সমাজে বিনির্মাণে চরমভাবে ব্যর্থ? আমরা যদি ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে না থাকি কিংবা ধর্মের কথা শুনে আমাদের গায়ে এলার্জির আবির্ভাব না ঘটে, তাহলে এ সত্য অনুধাবন করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, অভাব আমাদের কোনো কিছুর নেই; অভাব শুধু ধর্মের অনুশাসনের। ধর্মের অনুশাসনের কল্যাণেই মদিনা রাষ্ট্র ছিল নেশা ও মাদক মুক্ত এবং এর কল্যাণেই সম্ভব হয়েছিল মদিনা রাষ্ট্র থেকে সকল প্রকার অন্যায়-অনাচার নির্মূল।
লেখক: গ্রন্থ প্রণেতা, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া মিফতাহুল উলূম মাদরাসা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।