Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সড়ক যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ঈদযাত্রায় এবার বড় ধরনের কোনো বিড়ম্বনা ও যাত্রীদুর্ভোগ দেখা যায়নি। যানজট সহনীয় পর্যায়ে থাকায় যাত্রীদের যেতে কিছুটা বিলম্ব হলেও ঈদের আগের দিনই সবাই বাড়িতে পৌঁছাতে পেরেছে। কোনো কোনো বছর অনেকের রাস্তাঘাটে ঈদের নামাজ পড়ার নজির থাকলেও এবার তেমনটি হয়নি। কষ্ট-যাতনা যেটুকুই হোক, হাসিমুখে সবাই সেটা মেনে নিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ-আনন্দ উপভোগ করতে পেরেছে। এটা অবশ্যই একটা সান্তনা ও স্বস্তির বিষয়। ঈদের অন্তত ১৫ দিন আগেও রাস্তাঘাটের যে শোচনীয় অবস্থা ছিল তাতে এ আশঙ্কা প্রবলভাবেই করা হয়েছিল যে, এবার সড়কপথের যাত্রীদের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকবে না। যাদের সড়কের বিকল্প রেল বা নৌপথে যাতায়াতের সুযোগ ছিল তারা সড়ককে এড়িয়ে বিকল্পের ওপরই জোর দিয়েছিল। ফলে ট্রেন-লঞ্চে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। যারা বাধ্য হয়ে সড়কপথ বেছে নিয়েছিল, তাদের মনে নানা শঙ্কা ছিল, ভয় ছিল। শেষাবধি তাদের খুব একটা সঙ্কট-সমস্যায় পড়তে হয়নি। এ ক্ষেত্রে ঈদযাত্রীব্যবস্থাপনার কিছুটা প্রশংসাও করতে হয়। কর্তৃপক্ষ সড়কের অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ট্রেন ও লঞ্চে যাতে অধিক যাত্রী বহন করা যায় তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন ঈদযাত্রায় সড়কপথে কোনো সমস্যা হবে না বলে। তিনি তার কথা রক্ষা করতে পেরেছেন। সকলেরই জানা, যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে সড়কপথই শীর্ষে। দেশে যতটা সড়ক ও মহাসড়ক রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট না হলেও কিলোমিটারের পর কিলোমিটার অনড় যানজট সৃষ্টি, দু’ঘণ্টার পথ ৮-১০ ঘণ্টায় যেতে না পারার মতো নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। তবে শর্ত হলো, সড়ক-মহাসড়কগুলো খান্দা-খন্দকহীন, মসৃণ ও চলাচলের উপযোগী হতে হবে, যা বাস্তবে নেই। গত বছর বন্যায় সড়ক-মহাসড়কসহ সব ধরনের সড়কের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। প্রায় এক বছরেও সেসব সড়ক-মহাসড়ক ও রাস্তাঘাটের মেরামত ঠিকমতো হয়নি। এ জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ব্যয় হয়েছে যদিও। 

বরাবরই আমরা দেখি, ঈদের আগে সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের ধুম পড়ে যায়। অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু মেরামত কাজ কিভাবে কতটা হয় তার আর খোঁজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নেয় না। যেন ঈদ কোনো রকমে পার করাই কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। বাস্তবেও দেখা যায়, সড়ক-মহাসড়কে সৃষ্টি হওয়া খানা-খন্দকে ইট-বালু বিছিয়ে সমান করা হয়। কোথাও কোথাও পিচ ঢালাই হয়, কোথাও হয় না। এভাবেই কোনো রকমে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হয়। ঈদের যাতায়াত শেষ হওয়ার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা আগে যা ছিল তাই হয়ে যায়। বলা বাহুল্য, বরাদ্দকৃত অর্থ ঠিকই ব্যয় হয়ে যায়, টেকসই মেরামত আর হয় না। জনগণের ট্যাক্সের টাকার এভাবে অপচয় বছরের পর বছর ধরে চলছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদাররা পরস্পর যোগসাজশে বরাদ্দকৃত অর্থের সিংহভাগ লুটপাট করে খায়। এই লুটতরাজ চলছে তো চলছেই। প্রতিকার নেই, জবাবদিহিতা নেই। সরকারিভাবে এই নির্দেশনা আছে, রাস্তাঘাট ও বাঁধ নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার নির্দিষ্ট সময়ে বিশেষত বর্ষা-বন্যার আগেই শেষ করতে হবে। অথচ এই নির্দেশনা কখনই কার্যকর হতে দেখা যায় না। গত বছর ঈদের আগে এ বছরের মতোই রাস্তা মেরামতের তুমুল কর্মযজ্ঞ লক্ষ্য করা যায়। এক মাস পার হতে না হতেই সড়ক-মহাসড়ক ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে যে তীব্র যানজট লেগে থাকতে দেখা যায়, তার একটা বড় কারণ সড়ক-মহাসড়কের বুকে খানা-খন্দক সৃষ্টি হওয়া। সময়মতো টেকসই মেরামত হলে এমনটি হওয়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কারের নামে যে নির্বিচার লুটপাট চলছে, তা বন্ধ করতে হবে। কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে এবং তা যাতে মানসম্পন্ন হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা জানি না, এবার যে চলনসইমতো মেরামত হয়েছে, তা কতদিন টিকবে।
সড়ক-মহাসড়ক অনেক দিন ধরেই মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়ে আছে। এমন কোনো দিন নেই যেদিন সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি না হচ্ছে। এমনও দিন গেছে যেদিন ১০-১৫টি পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং বহু সংখ্যক মানুষ তাতে হতাহত হয়েছে। এও তথ্য আছে, গড়ে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহতের সংখ্যা এর কয়েক গুণ। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানো হলেও ভাঙাচোরা ও খানা-খন্দকে ভরা সড়কও কম দায়ী নয়। আরো একটি উল্লেখযোগ্য বড় কারণ, সড়ক-মহাসড়কের দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা। রাস্তা দখল করে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তা দখল করে গড়ে উঠেছে বাস-ট্রাকের অবৈধ স্ট্যান্ড। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং রাস্তা দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে যথেষ্ট তাকিদ দেয়ার পরও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। কখনো কখনো লোকদেখানো উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও দীর্ঘ মেয়াদে তার ফলাাফল শূন্য। এ ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স প্রদর্শনের বিকল্প নেই। অবশ্যই সড়ক-মহাসড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে, সকল প্রকার দখল থেকে তা মুক্ত করতে হবে। ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, আমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলো বাঁকবহুল। অনেক বাঁকেই আবার রয়েছে বাজারঘাট, দোকানপাট। প্রায়শই এসব এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। দুর্ঘটনা কমাতে হলে সড়ক-মহাসড়ক ক্লিয়ার করতে হবে, সড়ক ব্যবস্থাপনা আরো উন্নত করতে হবে। অবশ্যই যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘœ করতে হবে। সারা বছরই রাস্তাঘাট ঠিক রাখতে হবে, যাতে মসৃণ যাতায়াত নিশ্চিত হয়। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে চালকদের সচেতনতা যেমন জরুরি তেমনি যানবাহনমালিক ও পথচারীদের সচেতনতাও আবশ্যক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন