Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বন্যার থাবা : সিলেটে ঈদ আনন্দ আমেজে ভাটা

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৮, ৯:০৪ পিএম

দীর্ঘ সিয়াম সাধনার পর ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠে ধর্মপ্রাণ মুসলমান। সারাদেশের ন্যায় এবার ব্যতিক্রম নয় সিলেটে। দেখা গেছে ঈদের চাঁদ, রাত পোজালে শনিবার ঈদ উৎসব। উৎসব নিয়ে প্রস্তুতি থাকে ঘরে ঘরে। ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়ার জন্য সাজ সাজ একটি রব ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। কিন্তু অনুকূল আবহ্ওায়ার কারনে হয়তো ঈদগাহে নামাজ পড়া থেকে বঞ্চিত হবে মুসল্লিরা। নামাজ শেষে কোলাকূলির বিনম্র ভালোবাসার দৃশ্য্ও এবার হয়তো ভেসে উঠবে না ক্যামরায়। কারন আকাশে মেঘের ঘনঘটা, এই সাথে বিভাগের ৪ জেলার বিভিন্ন উপজেলার এখন বন্যার পানিতে সয়লাব। সর্বত্র জবুথবু, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ প্রতিবেশ। ডুবে গেছে ঘর বাড়ি, ফসল। গবাদিপশুর খাদ্য সংকটসহ ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিশেহারা বানভাসি মানুষ। ঈদের আনন্দ যেনো তাদের হতাশায় পরিণত হয়েছে। অনেক উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় ঈদের নামাজ আদায় করার জায়গাও নেই অনেক এলাকায়। কোনো মতে মসজিদে ছোট ছোট জামাতই তাদের ভরসা। একত্রে মিলিত হ্ওয়ার বিশাল সুযোগে বাগড়া বসিয়েছে বন্যার পানি।
সংশ্লিষ্ট স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, টানা হালকা ও ভারীবর্ষণ, একই সাথে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেটে নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন করে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সীমান্তবর্তী কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলা, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলা, সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল অঞ্চল এবং হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেটের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছন্ন রয়েছে বিভিন্ন উপজেলার।
মৌলভীবাজারের মনু ও ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙ্গণে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার ৫ সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ৬টি ভাঙনের পর আরও নতুন করে আরও ২টি ভাঙ্গণের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে সিলেটে সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে পানি ১ দশমিক ৯৮ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির প্রবাহ ক্রমাগত বাড়ছে। এ কারণে কানাইঘাটের বিভিন্ন এলাকা রাস্তা ঘাট পানির নিচে রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে ১ দশমিক ০১ সেন্টিমিটার শেরপুর পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার সারিঘাট থেকে গোয়াইনঘাট রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে ১০.৯২ পয়েন্টে অবস্থান করছে যা বিপদসীমা মাত্রার ৪০ সেন্টিমিটার বেশি।

এছাড়া সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নের চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ক্যাম্পেরঘাট, বোগলা, আন্দাইরগাও, বালিছড়া, সোনাচরা, তেরাকুরি, রামনগর গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৩০০ একর আউশ ফসল তলিয়েছে। বন্যায় ধান, বিভিন্ন ফসলাদি, পুকুরের মাছ, থাকার ঘর-বাড়ীর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বন্যার কারণে তাঁদের ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বন্যার্তরা। ঈদের এই সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় অন্যত্র যেতে দেখা যায় এইসব এলাকার মানুষদের। ঈদের আনন্দের চেয়ে তাদের জীবন রক্ষা এবং দৈনন্দিন জীবন চালানোই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। বানভাসি এসব মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চলের আকাশ। পানিবন্দি মানুষদের আহাজারিতে সিলেটে ঈদ আমেজ আনন্দে শুধুই আফসোস, আর দীর্ঘশ্বাস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ