দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রশ্ন: রিযিক আল্লাহর ইচ্ছায় কি বাড়ে-কমে?
উত্তর: সকল মাখলুক আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি। আল্লাহ তা‘আলা সকল প্রাণী সৃষ্টির পূর্বে তার রিযিকের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আল্লাহই একমাত্র সকল প্রাণীর রিযিকদাতা। আল্লাহর সৃষ্টি জগতের মধ্যে মানুষ একমাত্র প্রাণী, যারা রিযিকের জন্য কাজ কর্ম করেন। অথচ একটু দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, পশু-পাখি, সাপ-বিচ্ছু ও তরুলতা কেউ কোনো কাজ কর্ম করে না। পশু-পাখিদের কেউ কোনো দিন উপোষও থাকেনি। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘ নিশ্চয় আল্লাহই রিযিকদাতা, তিনি শক্তিধর, পরাক্রমশালী।’ (সূরা যারিয়াত: ৫৮)। ‘যমিনের উপর বিচরণশীল এমন কোনো জাতি নেই, যার জীবিকা আল্লাহর উপর নেই।’ (সূরা হুদ : ৬)।
কোন প্রাণী কখন কি খাবে, কোন প্রাণী কোথায় মৃত্যুবরণ করবে, ইহার সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী ও বন-জঙ্গলসহ সর্বত্রই আল্লাহ তা‘আলার অফুরন্ত রিযিকের ভান্ডার রয়েছে। যমিনের ফসল উৎপাদনের জন্য আল্লাহ তা‘আলা আকাশে মেঘমালা পুঞ্জিভ‚ত করে রেখেছেন। তিনি ফসল উৎপাদনের জন্য আকাশ থেকে জমিনে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। তিনি নদ, নদী ও সমূদ্রে অফুরন্ত মৎস ভান্ডার রেখেছেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তাতে তোমাদের জন্য এবং তোমরা যার রিযিকদাতা নও তাদের জন্য রেখেছি জীবনোপরণ। আর প্রতিটি বস্তুরই ভান্ডারসমূহ রয়েছে আমার কাছে এবং আমি তা অবতীর্ণ করি কেবল নির্দিষ্ট পরিমানে।’ (সূরা হিজর: ২০-২১)। ‘আর এমন কত জীব-জন্তু রয়েছে, যারা নিজেদের রিযিক নিজেরা সঞ্চয় করে না, আল্লাহই তাদের রিযিক দেন এবং তোমাদেরও। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।’ (সূরা আনকাবুত : ৬০)।
রিযিক বৃদ্ধি বা কমানোর ক্ষেত্রে মানুষ কিছুই করতে পারে না। কিছু সংখ্যক মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা অপরিমিত রিযিক দান করে থাকেন। কিছু সংখ্যক মানুষকে অভাব অনটন দিয়ে পরীক্ষা করেন। অনেকে অভাব অনটনের ভয়ে নিজের সন্তান পর্যন্ত বিক্রি করে দেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘অভাব-অনটনের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমিই তাদেরকে রিযিক দেই এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ।’ (সূরা বনী ইসরাইল : ৩১)। ‘আসমানসমূহ ও যমীনের চাবি তাঁর কাছে; যার জন্য ইচ্ছা তিনি রিযিক প্রশস্ত করেন এবং নিয়ন্ত্রিত করেন; নিশ্চয়ই তিনি সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞাতা।’ (সূরা শুরা:১২)। ‘আল্লাহ পাক যাকে চান তাকে অপরিমিত জীবিকা দান করেন।’ (সূরা বাকারা: ২১২)। ‘আল্লাহ ত’আলা যার জীবনোপকরণের প্রশস্ততা দিতে চান তাই করেন, আবার যাকে তিনি চান জীবিকা সংকীর্ণ করে দেন।’ (সূরা রা-দ:২৬)।
রিযিক তালাসের ক্ষেত্রে অবশ্যই হালাল খাদ্য তালাস করতে হবে। হালাল খাদ্য গ্রহন করা ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। কোরআনে এররশাদ হয়েছে,‘আল্লাহ পাক তোমাদের যে বৈধ ও পবিত্র রিযিক দান করেছেন তোমরা তা খাও।’ (সূরা মায়েদা: ৮৮)। রিযিক কমে গেলে কিংবা সংসারে অভাব অনটন দেখা দিলে মানুষ পেরেশান হয়ে যায়। রিযিক বৃদ্ধি হওয়া বা হ্রাস পাওয়ার মধ্যে পরীক্ষা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে যা ঘটে, ইহার মধ্যে কোনো না কোনো রহস্য লুকায়িত থাকে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে,‘যদি আল্লাহ পাক তাঁর বান্দাদের রিযিকে প্রাচুর্য দিতেন তাহলে তারা নিঃসন্দেহে যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতো, তিনি পরিমান মতো যাকে (যতটুকু) চান তার জন্যে (ততটুকু রিযিকই) অবতীর্ণ করেন; অবশ্য তিনি নিজের বান্দাদের (প্রয়োজন) সর্ম্পকে পূর্ণাঙ্গ অবহিত রয়েছেন, তিনি নযর রাখেন।’ (সূরা শুরা: ২৭)। ‘যদি তিনি তোমাদের জীবিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেন, তাহলে এমন আর কে আছে যে তোমাদের রিযিক সরবরাহ করতে পারে।’ (সূরা মূলক : ২১)। মখলুক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো রিযিক বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থণা করা। আল্লাহ তা‘আলা সকলের রিযিকের মধ্যে বরকত দান করুক। আমীন।
উত্তর দিচ্ছেন: ফিরোজ আহমাদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।