দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
জীবনের প্রতিটি স্তরে ইসলামের যোগসূত্র প্রমাণের লক্ষ্যে সমাজ পরিচালনায় অবতীর্ণ হন ইমাম শেরে বাংলা। সমাজসেবক ও বিদগ্ধ রাজনীতিবিদ ইমাম শেরে বাংলা সুদীর্ঘ ১৭ বছর হাটহাজারী মেখল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ফুড কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সুবিচারক ও সাম্যের মূর্ত প্রতীক, দেশপ্রেমিক সফল চেয়ারম্যান ইমাম শেরে বাংলার ব্যাপারে উনার চিরশত্রু মুফতি ফয়জুল্লাহর মূল্যায়ন প্রণিধানযোগ্য, তিনি বলেন তোমরা শেরে বাংলাকে ভোট দিবে, এই মূহুর্তে তাঁর মত সুবিচারক ও ন্যায় বণ্টনকারী বিশ্বস্ত কোন লোক পাওয়া বিরল”। ১৯৫৭ সালে ইমাম শেরে বাংলা হজ্জ পালন করতে পবিত্র সৌদি আরবে গমন করেন। ইতোমধ্যে মুনাফিক চক্র ইমামের বিরুদ্ধে সৌদি আরব সরকারকে অভিযোগ দিলে তিঁনি বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন। সাহসিকতাপূর্ণ অসীম জ্ঞানের মাধ্যমে হুজুরের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা এবং উনার আক্বিদাসমূহ সত্য প্রমাণ করলে ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন সৌদি প্রশাসন। হজ্জ ও প্রাণের মদিনা জিয়ারত শেষে রওজামুবারকের পাশে মা ফাতেমা (রা.)র মাজারে শ্রদ্ধা ও ভক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে পুলিশ বলে এখানে কারো মাজার নেই। ইমাম শেরে বাংলা বলেন আমার স্থির বিশ্বাস এটাই মা ফাতেমা তুজজাহারার পবিত্র মাজার। পুলিশ বিশ্বাস না করলে শেরে বাংলা মিশর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত কিতাব থেকে প্রমাণ দিলেন এটাই মা ফাতিমার মাজার। ইমামের এ তীক্ষ্ণ মেধা ও পা-িত্যপূর্ণ জ্ঞান এবং অসীম সাহসীকতার স্বীকৃতিস্বরূপ সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি সরকারের পক্ষে ইমামকে শেরে ইসলাম উপাধিতে ভূষিত করে লিখিত সনদ প্রধান করেন। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে কাদিয়ানীরা মোনাজেরায় ইমামের অসীম জ্ঞানের কাছে মুহূর্তেই পর্যুদস্ত হয়ে গেলে সেখানে উপস্থিত বৃটিশ সরকার কর্তৃক ‘ফখরে বাংলাথ উপাধি প্রাপ্ত যুগশ্রেষ্ঠ আলেম মাওলানা আবদুল হামিদ (রহ) বাংলাদেশের সকল ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে ইমামকে শেরে বাংলা” উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৫৬ সালে ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে আবুল আলা মওদুদীর বক্তব্য চলাকালীন সিংহ শার্দূল বেশে বজ্রকণ্ঠে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া, কুমিল্লা আদালত ভবনে ছিদ্দিক আহমদকে পরাস্ত করাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইমামের মোনাজারার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এখনো লোকের মুখে বর্তমান। সুন্নি মুসলমানদের পালনীয় দিবসসহ শরীয়তের কঠিন ও স্পর্শকাতর মাসয়ালার সহজ সমাধান দিতেন ইমামে পাক। আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন, প্রিয় নবী পাককে বড় ভাইয়ের মতো বলা, নবীর গায়েবকে অস্বীকার, মদিনার মুনিবকে নূর না মানা, হাজের নাজের অস্বীকার করা, নবী মোস্তাফার সম্মানিত পিতামাতাকে মুমিন না মানা, নবীর স্মরণ নামাজে আনার চেয়ে পশুর স্মরণ উত্তম, বাতিল সম্প্রদায়ের এহেন ইমান বিধ্বংসী বক্তব্যকে ভুল প্রমাণ করে সব বিতর্কিত মাসয়ালার সমাধান দিয়েছেন তিনি। আখেরি চাহার সোম্বা পালন, দ্বীনি কাজ করে হাদিয়া গ্রহণ, নফল নামাজ জামাতে পড়া এবং দাঁড়িয়ে সালাতু সালাম দেওয়ার ফতোয়া ছিল যুগান্তকারী। ইমাম শেরে বাংলা আউলিয়া কেরামের মাজার নির্মাণ ও ওরশ-ফাতেহার পক্ষে যেমন ক্ষুরধার ছিলেন। তেমনি ভন্ড নবী, ভন্ড অলী, অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে ছিলেন অগ্নিশর্মা। তিনি সদা বলতেন, আমি নবী অলী বিরোধীদের জন্য শানিত তলোয়ার। মুমিন মুসলমানদের মহান অভিভাবক ইমাম শেরে বাংলার বিশ্ববিখ্যাত কিতাব দিওয়ান-ই আযীয ও মজমুআহ-ই ফাতাওয়া-ই আযীযিয়া এখনো সত্যান্বেষীদের পথ দেখিয়ে চলছে, আগামীতেও পথ দেখাবে নিঃসন্দেহে। আধ্যাত্মিক সাধক পুরুষ হিসেবে ইমামের ছিল জগৎ জুড়ে খ্যাতি। আউলাদে রাসূল (দ.) ও গাউসুল আজম জিলানী (রা.)থর বংশধর বিশ্বনন্দিত সুফি সাধক আল্লামা সৈয়দ আব্দুল হামিদ বোগদাদি (রা.)-এর মুরিদ ও প্রধান খলিফা ছিলেন ইমাম শেরে বাংলা। হানাফি মাজহাব ও কাদেরিয়া তরিকতের অনুসারী ও প্রচারক ছিলেন তিঁনি। মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ আধ্যাত্মিক ক্ষমতায় ইমামে পাক সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম ও আউলিয়ায়ে কেরামের রূহ মোবারক হাজির করে সরাসরি আলাপ করতেন যা উনার জীবদ্দশায় কাজীর দেউড়ীস্থ বাসভবনে প্রতি বুধবার রাতে আউলিয়ায়ে কেরামের রূহানী কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রমাণ দিতেন। বর্তমান সময়ের প্রবীণ ওলামায়ে কেরাম ইমাম শেরে বাংলার অসাধারণ বেলায়তের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বের নন্দিত সুফি সাধক, বুজুর্গানে দ্বীন, আউলায়ায়ে কেরাম, যুগশ্রেষ্ঠ ওলমায়ে কেরামের সাথে ছিলেন ইমামের হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। এদেশের ওলামায়ে কেরাম ও সুফিবাদী মুসলমানদের জীবনমান উন্নয়নে মুজাদ্দিদ ইমাম শেরে বাংলার অর্ধশত বছর আগের বিবিধ সংস্কারের সুফল জাতি এখনো ভোগ করে চলছে। দেশ জাতির গর্বের ধন, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, সমাজসংস্কারক, সুন্নিয়তের মহান অভিভাবক, মুজাদ্দিদে জামান ইমামে পাক ১৩৮৯ হিজরির ১২ রজব, ১৯৬৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার দিবাগত রাতে ৬৩ বছর বয়সে নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করেন। জ্ঞানীরা ইমামের ৬৩ বছর বয়সের সংখ্যায়ও নবীপ্রেমের দৃষ্টান্ত খুঁজে পাবেন। প্রতি বছর মহান ১২ই রজব মিল্লাতের মহান রাহবার ইমামে পাকের ওরশ মোবারক মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়।
লেখক: খতিব: এ কে এম ফজলুল কবির চৌধুরী জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।