দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রশ্ন : পুরুষরা নামাযে হাত বাঁধবেন কোথায়?
উত্তর : মহান আল্লাহ তাআলার সামনে নিজেকে সোপর্দ করে তাঁর কুদরতি পায়ে সেজদায় মাথা অবনত করার নাম হচ্ছে নামায। ক্ষণস্থায়ী এই আবাসভূমিতে মানব ও দানব এ দু’টি জাতিকে সৃষ্ঠি করা হয়েছে ইবাদাতের জন্য আর ইবাদাতের শাখা-প্রশাখা বিস্তর। অনেক শাখা-প্রশাখা আর উপশাখা জুড়ে রয়েছে ইবাদাত। যদিও হাদিসে নববীর ভাষায় একেক সময় একেকটি ইবাদাতকে উত্তম বলা হয়েছে। সে যা-ই হোক, ইসলাম যে পাঁচটি খুটির উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে তন্মধ্যে নামায হচ্ছে দ্বিতীয়। সৃষ্ঠিকুলের মধ্যে মানবজাতি উত্তম আর মানবজাতির মধ্যে উম্মতে মুহাম্মদি শ্রেষ্টতার উচ্চাসনে রয়েছে। সেই শ্রেষ্টতাকে ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন কুরআন-সুন্নাহর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন। নবীয়ে করীম সা. বলেছেন, ‘তোমরা নামায পড়ো যেভাবে আমাকে নামায পড়তে দেখেছো’।
আমি দেখিনি, আমরা দেখিনি, আমার পূর্বপুরুষরা, আমাদের পূর্বপুরুষেরা দেখেননি মহানবী সা. কীভাবে নামায পড়েছেন। না দেখলেও নবী সা.’র যুগ থেকে হাল যামানা পর্যন্ত সহস্রাধিক ধর্মপ্রচারক, হাদিস সংরক্ষণকারী ব্যক্তিদের মাধ্যমে তা যথাযথ আমাদের মাঝে পৌছেছে। যুগের তালে তাল মেলালে চলবেনা। টেলিভিশন দেখে আর লাইভ প্রোগ্রামে মুখস্ত লেকচার শুনে প্রতারিত হয়ে আমলকে ডাইভার্ট করার মাধ্যমে আমরা আজ শ্রেষ্টত্ব হারাতে বসেছি। হাদিসে তো বলা হয়েছে সেভাবে নামায পড়ার কথা যেভাবে প্রিয়নবী সা. কে নামায পড়তে দেখা হয়েছে। সালাতুর রাসুল তথা নবীজির নামায দেখিনি তাই যেভাবে খুশী সেভাবে পড়লে চলবে। পুরুষরা পড়বে পুরুষদের নিয়মে আর মহিলারা তাদের তরিকায়। এখানে কপি পেস্ট করা চলবে না।
বর্তমানে হাদিসবিরোধী চক্রের শিকার হয়ে ইয়াং জেনারেশনসহ প্রবিণরাও নামাযে মহিলাদের হাত বাঁধার নিয়মকে কপি করে বুকে বেঁধে থাকেন। আশা করি বক্ষমান প্রবন্ধে এখানে উপস্থাপিত তথ্যের দ্বারা কপি করা বন্ধ হয়ে আসলে ফেরা সম্ভব হবে।
তাকবীরে তাহ্রীমার পর পুরুষ নাভীর নিচে আর মহিলা বুকের বা সিনার উপর ডান হাতের ‘কর’ বাম হাতের করের উপর স্থাপন করবে। পুরুষ কোন অবস্থায়ই সিনার উপর হাত বাঁধবে না। কথিত স¤প্রদায় মহিলাদের ন্যায় সিনার উপর হাত বেঁধে নিজে নামায পড়ে এবং এর তালিমও দেয়। ইমাম আযম আবু হানিফা, ইমাম সুফিয়ান সওরী ও ইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেন যে, পুরুষের জন্য নাভীর নিচে ও মহিলার জন্য বুকের উপর হাত বাঁধা সুন্নাত। এর খেলাফ করলে নামায মাকরুহ হবে । এসংক্রান্ত দলিলাদি নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
১) হযরত আবু ওয়াইল হতে বণিত হযরত আবূ হুরায়রা রা. বলেছেন, নামাযের মধ্যে এক হাত অন্য হাতের উপর রেখে নাভীর নিচে স্থাপন করবে। (আবু দাউদ শরীফ)
২) আল্লামা ইমাম নববী রাহ. মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগগ্রন্থে লিখেছেন হযরত আলী রা. বলেন, নামাযের মধ্যে নাভীর নিচে হাত স্থাপন করা সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত। (দারে কুতনী, বায়হাকী ও আবূ দাউদ)
৩) রাসূল সা. এরশাদ করেন, ‘ডান হাত-বাম হাতের উপর রেখে নাভীর নিচে স্থাপন করা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত’।
(হিদায়া ১/ ৮৬)
৪) হযরত কাবীসা ইবনে হলব তার পিতা হলব রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সা. যখন আমাদের ইমামতি করতেন, তখন তিনি ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরতেন। ইমাম তিরমিযী রাহ. বলেন, সাহাবী, তাবেয়ী ও পরবর্তী যুগের আলিমগন এই হাদীস অনুসারে আমল করেছেন।
তবে হাত রাখার ব্যাপারে আলিমগন মতভেদ করেছেন । যেমন কেউ কেউ উভয় হাত নাভীর উপর স্থাপন করার অভিমত প্রকাশ করেছেন । আবার কেউ কেউ নাভীর নিচে স্থাপন করার অভিমত দিয়েছেন । আলিমগনের নিকট এই উভয় নিয়মের অবকাশ রয়েছে। (তিরমিযী শরীফ) ৫) ইমাম মুহাম্মদ রাহ.’র কিতাবুল আছারে আছে নবী করিম সা. নাভীর নিচে বাম হাতের কব্জির উপর ডান হাতের তালু রাখতেন।
৬) সহীহ আবু দাউদে আছে, হযরত আলী রা. বলেছেন-নাভীর নিচে এক হাত অন্য হাতের উপর রাখা নামাজের সুন্নাত।
৭) আওজাযুল মাসালিক কিতাবে উল্লেখ আছে, ‘হযরত আনাস রা. হতে বর্নিত, তিনি বলেন, তিনটি নবীদের আখলাকী কাজ বা আদর্শ। উদাহরণ স্বরূপ সূর্য অস্ত যাওয়ার পরই ইফতার করা, সাহরী দেরী করে খাওয়া, তৃতীয় নামাযের মধ্যে নাভীর নিচে ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে নামায আদায় করা।
৮) হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নাভির নিচে ডান হাতের পাঞ্জাকে বাম হাতের উপর রেখে নামায আদায় করা সঠিক নিয়ম। (আওজাযুল মাসালিক)
৯) মসনদে ইবনে আবি শায়বা হাদীস গ্রন্থে আছে যে, হযরত ওয়াসেল রা. বলেন, আমি নবী করিম সা. কে নাভীর নিচে বাম হাতের উপর ডান হাত বাঁধতে দেখেছি।
আল্লামা আবূ তাইয়েব মাদানী বলেছেন, মসনদে ইবনে আবি শায়বার হাদিসটি সহিহ; সনদ অতি সহীহ্?। এটাই হানাফী মাযহাবের দলিল।
১০) হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্নিত হযরত আলী রা. বলেছেন, নামাযের মধ্যে হাত বাঁধা সুন্নাত এবং দুই হাত নাভীর নিচে স্থাপন করবে।
উপরোক্ত দলীলসমূহের দ্বারা প্রতিভাত হল যে, ইমাম আযম আবূ হানিফা ও তার অনুসারীদের নামাযে নাভীর নিচে হাত রাখার সিদ্ধান্ত খেয়াল-খুশী মত নয় বরং সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। সুতরাং পুরুষগণ বুকের উপর হাত না রেখে নাভীর নিচে হাত রেখে নামাজ পড়তে পারেন, তজ্জন্য আল্লাহপাক আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমল আর মানার জন্য উপরোক্ত রেফরেন্সই যথেষ্ট তাছাড়া তিলকা আশারাতুন কামিলাহ তো আছেই।
তথ্যপঞ্জিকা : ১. আনোয়ারুল মুকাল্লেদিন, ২. হিদায়া, ১ম খন্ড, ৩. জামে তিরমিযী শরীফ, ৪. তুহ্ফাতুল মু’মিনীন, ৫.আবূ দাউদ শরীফ, ৬.আওযাজুল মাসালিক, ৭. মাযহাবে হানাফীর জরুরী মাসায়েল।
উত্তর দিচ্ছেন : আতিকুর রহমান নগরী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।