দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রশ্ন : “সুফিমনের মাধুরীতে আল্লাহ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ” কিভাবে হয়?
উত্তর : চোখের সামনে ঐ বিশাল আকাশ। আদি-অন্ত নাই। রাতের আধারে তারকা খচিত আকাশের বুক যেন মহাসমুদ্রের ঝিকিমিকি ঝিনুকতুল্য এবং ভোরের শিশিরবিধৌত বিন্দুবিন্দু রোদ্দুর খেলা। অপূর্ব দৃষ্টিসুখে মনের আকাশটিও অসীম হৃদয়ে পূর্ণ হয়ে যায়। আল্লাহর শিল্পাচার্য শিল্পনৈপুণ্য কতটা নান্দনিক সৌন্দর্যবিজ্ঞানে পরিপূর্ণ তা হৃদয়চোখে না হেরিলে কখনো ধরা পড়বেনা। যখন রাতের বিছানা থেকে আড়মোড়ে হেলে -দুলে রাজবেশে প্রশান্তির চাদর বিছিয়ে দিয়ে রাজসিংহাসনে আসন গেড়ে বসে শুভ্রাংশু তখন অস্থির পৃথিবী শান্ত হয়ে যায়, পৃথিবী ফিরে পায় নতুনত্ব । প্রেমিক হৃদয় ক্রমশ উৎফুল হয়ে উঠে। এই রকম সৌন্দর্যময় দৃশ্য দেখে মনের গহীন থেকে বারবার ডেকে উঠে- সুবহানআল্লাহ, আল- হামদুলিল্লাহ।
মৃদুমন্দ বাতাসে রাতের ফুলগুলি মুচকি হেসে কথা কয়। চাঁদের সাথে মিতালি ভাব জমায়। শতশত ফুল ঠোঁটে মনমাতানো হাসি এনে কোমর দুলিয়ে নাচে। ফুলের সুরভিত বিমুগ্ধ গন্ধে মুহূর্তে মস্তিষ্ক নির্মল আনন্দ আর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে উঠে। বাতাবিলেবুর গন্ধরসে অনায়েসে মস্তিষ্ক থেকে কালিমা দূর হয়ে যায়। ভুবনমোহিনী গ্রামের চাঁদনী রাতের সুনিবিড় দর্শন যেন বেহেশতি বালাখানার মোহিনীরূপ। সুখোদয় মনভুলানো রূপোন্মাদে রহস্যপুরীর প্রেমে দিগ্বিদিক উতলা হয়ে উঠে। ধ্যানমগ্ন প্রেমিকের প্রেমের বাঁধ ভেঙে যায়। পুলকিত হয়ে উঠে তনুমন। উর্দ্ধাকাশ থেকে তার হৃদয় পৌঁছে যায় আরশে আযিম পর্যন্ত। জিজ্ঞেস করে- ওগো কারিগর! এতো সুন্দর সৃষ্টির স্রষ্টা তুমি তবু কেন থাকো বহুদূর? বড় সাধ জাগে, প্রেমের প্রার্থনা করি- তোমার লাগি হৃদয় ব্যাকুল!
নিশিঘরের দরজা খুলে যায়। ভোরের পাখিরা সুরের ব্যঞ্জনায় প্রফুল হয়ে উঠে। ধীরেধীরে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে আযানের সুমধুর সুর ভেসে আসে কানে। পাতার মর্মরধ্বনিতে, জলাধারের নিরব স্রোতে আযানের সুর দিগন্তে হারিয়ে যায়। খোদার প্রেমে নিশি-রাতের মোহ কেটে ভুবন জেগে উঠে। হৃদয় প্রেমের মোহ পূর্ণ হতে থাকে। নতুন জগতের দেহলতা এলিয়ে ধরে তুনমনে। দিগন্তব্যাপী ভোরের বিহঙ্গ সূর্যের রক্তিমাভাব ডানায় রাঙিয়ে উড়ে চলে যায় ভুবন থেকে ভুবনে। প্রশান্তচিত্ত করা এই সবুজ পৃথিবী ফিসফিস করে প্রেমিকের কানে কথা কয়। হৃদয় পাপিয়া কুহু -কুহু করে জিকির রব তুলে। এ কেমন ভালবাসা! এ কেমন প্রেম!
বটবৃক্ষ ছায়ায় ধ্যানরত প্রেমিক, হৃদয় দিয়ে অনুভব করে বাতাসে হেলানো-দুলানো গাছের মমতা। গায়ে বাতাস জড়িয়ে ধরে। মোহিত বাতাস। বিমোহিত সুর। নির্মল বাতাসে অশুভচিহ্ন দূর হয়ে যায়। শুদ্ধ হয় দেহ।
পবিত্র মনের গহীন থেকে বেজে উঠে- সুবহানআল্লাহ- সুবহানআল্লাহ। ধীরেধীরে পা বাড়াতে থাকে পথিক। উর্দ্ধাকাশে ফিরে তাকায়, বারবার তাকায়। চোখ জুড়িয়ে যায় খোদার দেয়া নীলআসমান দেখে। আল্লাহর নেয়ামত দেখে আল্লাহর দান চোখেরজল আল্লাহর জন্যই বইতে থাকে। এ এক অপূর্ব সন্ধিক্ষণ। এর চেয়ে শুকরান আল্লাহর দরবারে আর কী হতে পারে? পথিক হেঁটে চলে। পুকুরের নিরবতা তাঁর মনকে নিরব বিধৌত করে তুলে। ময়লাযুক্ত পা চুবিয়ে দেয় জলে। তৃষ্ণার্ত জিহŸা এক অঞ্জলি পানি পান করে। গলা ভিজে যায়।ক্লান্তি দূর হয়। সুফিমনে সূরা আর- রাহমান ভেসে উঠে- “ফাবিআইয়্যি আ-লা ইরাব্বিকুমা তুকাযযিবান.....
হে জ্বিন ও মানবজাতি! তোমরা আল্লাহর কোন কোন নিয়ামতকে অস্বীকার করবে? সুফি সিজদায় পড়ে যায়। বলে, ইয়া রব! তোমার কোন কিছুই অস্বীকার করা যায়না। তুমি প্রভু! মহা প্রভু। আমার অভিভাবক।
উত্তর দিচ্ছেন : -জামাল-আল-সাবেত
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।