Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে সরকার। চলতি অর্থবছরে সরকারের কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছরে এই ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ শতাংশ বিতরণ করেছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। নির্ধারণ করা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১৭ হাজার ৯৫২ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ শতাংশ। পুরো অর্থবছরে পূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশ্লেষকরা বলছেন, শিল্পঋণ বিতরণে অনেক ঝুঁকি থাকলেও কৃষিঋণ বিতরণে তেমন ঝুঁকি নেই। তাই ব্যাংকগুলো নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্রিয় রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষি খাতে মোট ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আটটি ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা নয় হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১০ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ব্যাংকটি নয় মাসে বিতরণ করেছে চার হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকটির কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ৯০০ কোটি টাকা। একই সময়ে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বিতরণ করেছে এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। যা ব্যাংকটির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭৭ শতাংশ। এ অর্থবছরে রাকাবের লক্ষ্য ধরা হয়েছে এক হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। তৃতীয় স্থানে রয়েছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। অর্থবছরের প্রথম দম মাসে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে এক হাজার ৫৭ কোটি টাকার ঋণ। যা ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৯১ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকের পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। পরিমাণের ধারাবাহিকতায় পরের অবস্থানে রয়েছে জনতা ব্যাংক। ১০ মাসে ৬৮৪ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। যা ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রার ৯১ শতাংশ। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৫৬৯ কোটি টাকা। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৮৬ শতাংশ। ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা ৬৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কোনো ঋণ বিতরণ করতে পারেনি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেড। আর চলতি অর্থবছরে ১৫০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দি ফারমার্স ব্যাংকের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ামানুযায়ী প্রত্যেকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের মোট লভ্যাংশের ২ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ করা বাধ্যতামূলক। এবার কৃষিঋণ আগের অর্থবছরের চেয়ে কমে ধরা হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ ১৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। অথচ এবার বাড়ানো হচ্ছে মাত্র পাঁচ দশমিক ৩৯ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। বছর শেষে দেখা গেছে বিতরণ হয়েছে ২০ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা আগের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রচলিত ফসলের পাশাপাশি বিদেশি ফল ও ফসল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য নতুন কৃষি ঋণ নীতিমালায় নির্দেশনা থাকবে। ওই সব বিদেশি সবজি, ফল ও ফসলে মধ্যে কোন কোনটায় ঋণ দেয়া যাবে, সে বিষয়ে বলা থাকবে। যেমন-স্কোয়াশ ও কাসাভা চাষের ক্ষেত্রে কৃষকদের উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের কথা বলা থাকবে এবারের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায়।
কৃষি খাতের ক্রমবর্ধমান সাফল্যের বিষয় মাথায় রেখে প্রান্তিক কৃষকদের জন্য আরও দুটি ঋণ বিতরণ প্রকল্প আসছে নতুন অর্থবছরে। উদ্যোক্তা পর্যায়ের ‘সমন্বিত কৃষি’ ও ‘ভাসমান পদ্ধতির কৃষিতে ঋণ’ প্রদানের লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন কর্মসূচি আনতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই দুই খাতে ঋণ বিতরণের জন্য কৃষিবিদদের পরামর্শে আগামী কৃষিঋণ নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শুরু থেকে এই কর্মসূচি ও নীতিমালা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে ব্যাংকটির একটি সূত্র।
জানা গেছে, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কয়েকটি খাতে কৃষি ঋণ বিতরণ করে আসছে। এবার কৃষি ঋণের আওতা বাড়াতে ‘সমন্বিত কৃষি প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় কৃষি ঋণ’ ও ‘ভাসমান পদ্ধতির চাষে কৃষি ঋণ’ নামের আরও দুটি খাত বাড়াতে প্রজ্ঞাপন জারি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর এখন পর্যন্ত কৃষি ঋণ বিতরণের খাতগুলো হলো শস্য, মৎস, প্রাণিসম্পদ, কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচ যন্ত্রপাতি, বীজ উৎপাদন, শস্য গুদাম ও বাজারজাতকরণ, দারিদ্র বিমোচন ও আয় উৎসারী কর্মকান্ড। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বিত কৃষির জন্য সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণের সুপারিশ করবে ওই নীতিমালায়। কৃষি ঋণের দুটি নতুন প্রকল্পের নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করেছেন কৃষিবিদ নুরুন্নাহার ও মনজুর হোসেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষিঋণ

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ