পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সোহাগ খান : প্রত্যেক বছর হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংক মিলে মাত্র ৬শ’ কোটি টাকা কৃষিঋণ আদায়ের জন্য স্টিমরোলার চালাচ্ছে গরিব অসহায় কৃষকদের ওপর। কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সাধারণ কৃষকদের ওপর এই হয়রানি। উল্টো হয়রানির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন এসব ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকরা।
বিশেষ করে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকরা এই সামান্য ঋণ আদায়ে নিয়মিত সার্টিফিকেট মামলার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। কে কত মামলা করে ব্যাংকের টাকা নষ্ট করতে পারে, কে বেশি ওয়ারেন্ট জারি করে কৃষকদের বাড়িছাড়া করতে পারবে। এমনই প্রতিযোগিতা চলছে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। বিশেষ করে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে এই প্রতিযোগিতা। ইনকিলাবের জেলা প্রতিনিধিরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য জানিয়েছেন। গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা শাখার ব্যবস্থাপক গোলাম রব্বানী চলতি বছর জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ মামলা করেছে বলে জানিয়েছে গাইবান্ধা জেলা অর্থঋণ আদালতের একটি সূত্র।
কিছুদিন পূর্বে তার নামে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি তিনি সকাল-বিকাল পুলিশ পাঠাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ঐ এলাকার একজন কৃষক। মাদারদহ গ্রামের কৃষক ওবাইদুর রহমান বলেন, ম্যানেজার গোলাম রব্বানীর বাড়ি একই এলাকার বারকোনা বাজারে। সে ঋণ আদায়ে মামলা ছাড়াও ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাধারণ কৃষকদের হয়রানি করছে। সম্প্রতি মথরপাড়া গ্রামের এক কৃষকের কাছে মামলা করবে না বলে উৎকোচ আদায় করেছে।
এছাড়াও মথরপাড়া গ্রামের শেখ সাদীর ছেলে কামরুজ্জামান সাইদী জানিয়েছেন, তাকে বিভিন্ন ফোন থেকে কল দিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করছে। কামরুজ্জামন বর্তমানে ঢাকা ব্যবসা করে এবং ঢাকার রাষ্ট্রায়ত্ত ২ ব্যাংকের প্রায় ৫ কোটি টাকার চলতি মূলধন গ্রাহক। যে সময় ঋণ নিয়েছে বলে গোলাম রব্বানী দাবি করেছেন সে সময় কামরুজ্জামান লন্ডনে গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য, যা তার কাছে সংরক্ষিত পাসপোর্টই প্রমাণ দিবে বলে কামরুজ্জামান তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লে তিনি হুমকি দিয়েছেন গ্রেফতারের।
গাইবান্ধার বোনারপাড়া শাখা, ফুলছড়ি শাখা, সুন্দরগঞ্জ শাখা, তুলসীহাট শাখাসহ সাতটি শাখায় নতুন করে ১১শ’ মামলা করেছে ব্যাংকটি। এছাড়া কুড়িগ্রামে মোট ৭৫০টি নতুন সার্টিফিকেট মামলা, দিনাজপুরে ৫৬৬, লালমনিরহাটে ৮৭৭টি, রংপুরে ১২শ’ ঠাকুরগাঁওয়ে ১ হাজার নতুন মামলা হওয়ায় কৃষকরা ঘরছাড়া হয়েছেন।
রংপুরের পীরগঞ্জ ইপজেলার কৃষক আফজাল হোসেন জানান, তার রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের পীরগঞ্জ শাখায় ২৫ হাজার টাকা ঋণ ছিল। যা সুদে আসলে এখন ৩৩ হাজার টাকা হয়েছে। ম্যানেজার এই টাকার জন্য তার নামে মামলা করে জমি নিলামে তুলেছেন। নিলামে দরদাতা না পাওয়ায় এখন তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করিয়েছেন। যার ফলে তিন মাস আগে তার বাড়িতে পুলিশ এলে তিনি পালিয়ে ঢাকায় এসে রিকশা চালান। কিন্তু সামনে ইরির মওসুম। তিনি বাড়ি যেতে না পারলে তার ছেলে-মেয়েরা না খেয়ে মরবে।
এই কৃষক আরো জানান, অবরোধের সময় আলুর আবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়েছিলেন। কিন্তু দাম না পাওয়ায় তার আলু নষ্ট হয়ে যায়। সেই লোকসান এখনও পুষিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। যার ফলে এবার তার নামে ওয়ারেন্ট হয়েছে।
তিনি ঋণটি মওকুফ হলে দেশে যেতে পারবেন বলে জানান। তার এখনো দেশে ৩ বিঘা সম্পত্তি আছে, যা চাষাবাদ করলে তার পক্ষে ঋণ শোধ করা সম্ভব বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় মোবাইলে প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়গুলো সম্পর্কে আমি অবগত নই। সুতরাং সংশ্লিষ্ট জোনাল হেডদের ফোন দিয়ে জেনে নিন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, নির্দিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপকদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীকে ডেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেবো। কারণ কৃষকদের হয়রানি বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোচ্চার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।