Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পলিথিন কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশগত নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে পলিথিন ব্যাগ। ঢাকা শহরে পানিবদ্ধতা, স্যুয়ারেজ লাইনে অচলাবস্থা এবং বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ সম্পর্কিত আলোচনায় সর্বাগ্রেই উঠে আসে পলিথিন প্রসঙ্গ। বুড়িগঙ্গার দুষণ রোধে এর তলদেশ পরিস্কার করতে শত শত কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে; কোন ফলোদয় হয়নি। ঢাকার নাগরিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পলিথিন ব্যাগ একটি অনিবার্য বিড়ম্বনার নাম। সঙ্গতকারণেই পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন ও বিপননের ক্ষেত্রে কিছু আইনগত প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়েছে। তবে আইন থাকলেও আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয় মনিটরিং না থাকায় নিষিদ্ধ পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার কমছেনা। মাঝে মধ্যে পলিথিনবিরোধী অভিযান পরিচালিত হতে দেখা গেলেও ঢাকা এবং তার চারপাশে গড়ে ওঠা শত শত পলিথিন কারখানা বহাল তবিয়তে তাদের উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। অবৈধ কারখানায় পলিথিন উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ নির্বিঘ্ন রেখে শুধুমাত্র খুচরা ব্যবহারকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে পলিথিনের ব্যবহার কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করা যে সম্ভব নয়, তা বলাই বাহুল্য। পলিথিনের নানামুখী প্রতিক্রিয়ায় নগরজীবনের বিড়ম্বনা ক্রমে বেড়েই চলেছে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজধানীতে ময়লার ভাগাড়ে প্রতিদিন দুইকোটি পরিত্যক্ত পলিথিন ব্যাগ জমা হচ্ছে। এই বিপুল পরিমান পলিব্যাগ যদি ময়লার ভাগাড়ে যথাযথভাবে জমা হত এবং এর একটি অংশও যদি রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে ব্যবহারযোগ্য করা যেত তাহলেও পলিথিন ব্যাগের ফলে সৃষ্ট নাগরিক জীবনের সংকট এতটা তীব্র আকার ধারণ করতো না। প্রতিদিনের দুই কোটি পলিব্যাগের এক বড় অংশই ডাম্পিং হয় পয়:নালাগুলোতে যা পুরো স্যুয়ারেজব্যবস্থাকেই প্রায় অচল করে দিয়েছে। এমনতিই ঢাকার স্যুয়ারেজব্যবস্থা অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত। শহরের নিম্নাঞ্চল, খাল, পুকুর ও জলাভ’মিগুলো দীর্ঘদিনে ভরাট ও বেদখল হয়ে পড়ার কারণে অপর্যাপ্ত স্যুয়ারেজব্যবস্থা বৃষ্টির পানি নিস্কাশনে কার্যত ব্যর্থ হচ্ছে। আর এই ব্যর্থতার নেপথ্যের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে প্রতিদিনের কোটি কোটি পলিথিন ব্যাগ। অপচনশীল পলিইথাইলিন একই সঙ্গে নগরীর পয়:ব্যবস্থা, মাটি, পানি, বায়ু ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বহু আগেই। পলিথিনের উৎপাদন, বিপনণ ও ব্যবহার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরও এর ব্যবহার মোটেও কমেনি, বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। সারাদেশে ছোটবড় অন্তত ১২০০ কারখানায় পলিথিন ব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়। পরিত্যক্ত পলিথিন নদী ও জলাধারগুলোতে জমা হয়ে মারাত্মক পানিদূষণেষর ফলে মৎস্যসহ জলজ প্রাণীর জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। একটি সাম্প্রতিক গবেষনা রিপোর্টের আলোকে পরিবেশ অধিদফতরের একজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ৭৯ শতাংশ পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য পানিতে মিশে জলজ প্রাণীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
পলিথিন থেকে সৃষ্ট নাগরিক বিড়ম্বনা এবং পরিবেশগত সংকট নতুন কোন বিষয় নয়। এ বিড়ম্বনা এড়াতে সরকারী উদ্যোগও কম দেখা যায়নি। কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। পলিথিন ব্যাগ সারাবিশ্বেই ব্যবহৃত হয়। উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নাগরিক সচেতনতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের কারনে উন্নত দেশগুলোতে পলিথিন এমন ভয়ঙ্করী হয়ে উঠতে পারেনি। আইনগত নিষেধাজ্ঞা এবং লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন সহনীয় মাত্রায় কমানো যায়নি। পলিথিনের কাঁচামাল আমদানীর ক্ষেত্রে বাড়তি শর্ত ও শুল্ক আরোপের পাশাপাশি অবৈধ পলিথিন কারখানাগুলো বন্ধ করে দিলে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে আনা অসম্ভব হতে পারে। নাগরিক জীবনে পলিথিন ব্যাগের বহুমুখী ব্যবহার উপযোগিতা ও সহজলভ্যতার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সহজলভ্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া শুধুমাত্র আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রনের উদ্যোগগুলো তেমন কাজ করেনি। অতএব পলিথিন কারখানা বন্ধের পাশাপাশি নিত্যব্যবহার্য শপিং ব্যাগ হিসেবে পাট থেকে উৎপাদিত পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব পলিমারের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। পলিথিন বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট অধিদফতর ও মন্ত্রনালয়ের যে অনীহা ও অপারগতা লক্ষ্যনীয় তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার অজুহাত দেখিয়ে পলিথিন-প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা যাবেনা বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী। পলিথিনের বর্জ্যে যেখানে ঢাকার নাগরিক জীবনের সংকট ক্রমে বেড়ে চলেছে, সেখানে মন্ত্রীর অসহায়ত্ব প্রকাশ কোন কাজের কথা নয়। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটজাত সোনালী ব্যাগ এই মুহূর্তে আমাদের হাতে এক সুবর্ণ সুযোগ, যা দেশকে পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে রক্ষার পাশাপাশি রফতানী আয়ের এক বিশাল সম্ভাবনা হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। অবৈধ পলিথিন কারখানাগুলো কঠোর হাতে বন্ধ করে পাটজাত সোনালী ব্যাগের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার কমিয়ে আনতে নাগরিক সচেতনতার কোন বিকল্প নেই।



 

Show all comments
  • ইমরান ৭ জুন, ২০১৮, ২:৩৪ এএম says : 0
    এটা এখন সময়ের দাবি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পলিথিন

১৪ আগস্ট, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন