পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অনলাইন বা ফেসবুকের মাধ্যমে পেজ খুলে ব্যবসা-বাণিজ্য করার পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাকে বলে অনলাইন শপিং। এই শপিং ক্রেতাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফেসবুক বা অনলাইন সম্পর্কে যাদের একটু ভাল আইডিয়া রয়েছে তারা এ ব্যবসা দ্রুত শুরু করতে পারেন। বিশেষ করে যাদের পক্ষে বড় ধরনের পুঁজি বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়, তারা প্রায় বিনা পুঁজিতে এ ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এখন ফেসবুক খুললে যে কেউ বিভিন্ন নামের পেইজ দেখতে পান। এসব পেইজে পোশাক থেকে শুরু করে প্রসাধন সামগ্রী, চাল, ডাল, তেল, ডাক্তারি পরামর্শসহ হেন কোনো পণ্য নেই যা বিক্রি করা হয় না। ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য মূল্য হ্রাসসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় অফার দেয়া হয়। দুইটি কিনলে একটি ফ্রি বা ইন্সট্যান্ট ক্যাশব্যাকসহ আরও নানা গিফটের অফার থাকে। অনেক সময় গ্রুপ পেইজে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়কে বিশেষ পুরস্কার দেয়া হয়। এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় মূলত পেইজ ও পণ্যের প্রসারের জন্য। অনলাইন ব্যবসার সুবিধা হচ্ছে, এখানে শুধু পণ্যের জন্য পুঁজির প্রয়োজন হয়। লাখ লাখ টাকা খরচ করে কোনো বড় শপিং মলে বা অন্য কোথাও শো রুম দিতে হয় না। বিজনেস লাইসেন্স ও অন্যান্য সার্ভিস চার্জ ও বড় পরিসরের কর্মচারীদের বেতন বাবদ খরচ নেই। বাসায় বসেই কম্পিউটার বা মোবাইলে এ ব্যবসা করা যায়।
অনলাইন শপিং সারাবিশ্বেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ঝক্কি-ঝামেলা সামলে মার্কেটে গিয়ে শপিং করার চেয়ে ঘরে বসে অর্ডার দিলেই তা একদিন বা দুইদিনের মধ্যে চলে আসছে। ক্রেতাকে কোনো ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয় না। পণ্য পছন্দ না হলে শুধু ডেলিভারি চার্জ দিয়ে ফেরত দেয়া যায়। অনলাইন শপিং শহরের ভেতর যারা বসবাস করেন তাদের জন্য বেশি সুবিধার। অর্ডার দিলে দিনের পণ্য দিনেই বুঝে পাওয়া যায়। অবশ্য অনেক সময় পণ্যের হেরফেরও হয়। এটা অর্ডার ও ডেলিভারির গোলমালের জন্য হয়ে যায়। অনলাইনের সুবিধা হচ্ছে, পণ্যের মান খারাপ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পেইজে গিয়ে এর সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা যায়। এতে অন্য ফলোয়াররা সতর্ক হতে পারেন। আবার অনলাইনে প্রতারক চক্রও রয়েছে। তারা একেক সময় একেক নামে পেইজ খুলে বিভিন্ন পোশাক, জুতা ও অন্যান্য দামী পণ্য সামগ্রীর ছবি তুলে অত্যন্ত কম মূল্য লিখে দেয়। এতে আকৃষ্ট হয়ে পছন্দনীয় পণ্যের অর্ডার দিলে দেখা যায় অর্ডারকৃত পণ্যের পরিবর্তে অন্য নিম্নমানের পণ্য পাঠিয়ে দেয়। এ ধরনের পেজে অর্ডার দিলে তা ডেলিভারি ম্যানের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় না। বিকাশে টাকা পাঠিয়ে বা পেইজের প্রতারক চক্রের সুবিধাজনক স্থানের কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসে গিয়ে টাকা পরিশোধ করে পণ্য আনতে হয়। তাদের ফোন দিলে পরিবর্তন করে দেয়া হবে বলে পণ্যটি তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতে বলে। এতে ক্রেতা পণ্য এবং অর্থ দুটোই হারায়। এ ধরনের প্রতারণাপূর্ণ অনেক পেইজ রয়েছে। তবে পেইজের ধরণ এবং কনটেন্ট দেখে ক্রেতাদের বুঝে নিতে হয় কোনটি আসল আর কোনটি প্রতারক চক্রের। অনেক সময় পেইজে ছবি দেখে বিশেষ করে পোশাকের রং ও ডিজাইন দেখে পণ্য অর্ডার দেয়ার পর বাস্তবে তার সাথে মেলে না। রং ও ডিজাইনে হেরফের হয়। যদিও অনেক পেইজের অ্যাডমিন বলে দেন, ছবির রংয়ের সাথে বাস্তবের রংয়ের সামান্য হেরফের হতে পারে। এটা সাধারণত মোবাইল বা কম্পিউটারের রেজুলেশনের ওপর নির্ভর করে। অনলাইনে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় মেয়েদের পোশাক ও প্রসাধন সামগ্রী। অনেক পেইজ আছে যারা সরাসরি বিদেশ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রসাধনী আমদানি করে বিক্রি করে। পোশাকের ক্ষেত্রেও তা করা হয়। অনেক পেইজের অ্যাডমিন পণ্যসামগ্রী নিয়ে সরাসরি লাইভ করেন। পণ্যটির গুণাগুণ তুলে ধরে অর্ডার করার আহ্বান জানান। সরাসরি দেখার কারণে ক্রেতারাও আকৃষ্ট হন। তবে এসব ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, এখানে এক্সক্লুসিভ বলে কিছু থাকে না। যে পণ্যটি তুলে ধরা হচ্ছে, তা সবাই দেখে ফেলছে। পণ্যটি কমন হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ পোশাকের ক্ষেত্রে অনলাইন শপিং কমন হয়ে পড়ে। যারা এক্সক্লুসিভ পোশাক পরতে চান তাদের জন্য অনলাইন মোটেও সুবিধার নয়। তাছাড়া অনলাইনের সমস্যা হচ্ছে, যারা দূরে যেমন রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলা শহর কিংবা গ্রামে বসবাস করেন, তাদের অর্ডারকৃত পণ্য পেতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক সময় বেশি সময় লেগে যায়। তার ওপর যদি অর্ডারকৃত পণ্যের পরিবর্তে অন্য পণ্য চলে আসে, তাহলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পণ্যটি পুনরায় ফেরত পাঠানো এবং কাক্সিক্ষত পণ্য আবার ফিরে পেতে অর্থ, শ্রম এবং সময় তিনটারই অপচয় হয়। দোকানে গিয়ে যেমন সরাসরি দেখে বুঝে এবং দামাদামি করে কেনা যায়, অনলাইনে এর কোনো সুযোগ নেই। ছবি ও বিবরণ দেখেই কিনতে হয়। এতে অনেক সময় বাস্তবে মিলতেও পারে, নাও মিলতে পারে।
অনলাইন ব্যবসা প্রসার ইতিবাচক হলেও এই ব্যবসাকে একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে আনা জরুরী। এখানে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া এবং বিনা স্ট্যাবলিশমেন্টে ব্যবসা করা হচ্ছে। এতে সরকার যথেষ্ট রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে বড় শপিংমল থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেটে যারা ব্যবসা করেন তাদের দোকান খরচ থেকে শুরু করে কর্মচারির বেতনসহ অন্য অনেক খরচ করতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা করতে হয়। সরকারও প্রচুর রাজস্ব আদায় করতে পারছে। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে এসবের কোনো বালাই নেই। বলা যায়, পণ্যমূল্য ছাড়া ঘরে বসে এ ব্যবসা করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেখা যাবে একসময় শপিং মল বা মার্কেট বলতে কিছু থাকবে না। এতে মার্কেটকে ভিত্তি করে যে বিশাল অর্থনীতি গড়ে উঠেছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিষয়টি আমলে নিয়ে অনলাইন ব্যবসাকে সুষ্ঠু ধারায় পরিচালিত এবং রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনায় নেয়া দরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।