Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পশ্চিমবঙ্গে নজরুলের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান : বাংলাদেশে চরম উপেক্ষা

মোবায়েদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

গত শুক্রবার ২৫ মে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জন্মদিবস। তিনি বাংলাদেশে জাতীয় কবি হিসাবে যেমন পরিচিত তেমনি বিদ্রোহী কবি হিসাবে তার চেয়েও বেশি পরিচিত। অথচ, এই জাতীয় কবির জন্মদিন কীভাবে যে পার হয়ে গেল সেটি মানুষ টেরও পেলনা। প্রাইভেট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তা মনে হয় কবি নজরুলের নাম ভুলেই গেছে। দু’ চারটি প্রাইভেট চ্যানেল রাতে ছোটখাটো আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। তবে সেসব অনুষ্ঠানে আলোচকরা বয়সে এত কম এবং এতই অখ্যাত ও অপরিচিত যে, দর্শক-শ্রোতা চ্যানেল টিউন করে যখন ঐসব আলোচককে দেখতে পায় তখনই চ্যানেল ঘুরিয়ে দেয়। আর যেসব শিল্পীকে দিয়ে দু’ চারটি নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করা হয় সেগুলো ছিল অখাদ্য। বরং একমাত্র বিটিভিকেই দেখলাম, ইফতারের পরপরই একটি আলোচনা অনুষ্ঠান। অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় সঙ্গীত শিল্পী শাকিল, নাশিদ কামাল, অভিনেতা জয়ন্ত প্রমুখ আলোচনা করেন এবং নাশিদ কামাল ও শাকিল ছোট করে হলেও দু’ একটি নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করেন। এই ছিল গত শুক্রবারের নজরুলজয়ন্তী পালন।
সরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালনের কোনো মাথা ব্যাথা নাই। আওয়ামী লীগের তরফ থেকেও দিবসটি পালনের কোনো উদ্যোগ ছিল না। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক নজরুলের কবরে ফুল দিয়েছেন। এই যা। অথচ বিদ্রোহী কবি নজরুলকে নিয়ে অতীতে তাদের কতই না মাতম। বিএনপি সরকার হোক, বা পাকিস্তান সরকার হোক, তাদের সময় নজরুলের বিপ্লবী গান তারা বিশাল অনুষ্ঠান করে পরিবেশন করত। নাটক করে নজরুলের বিপ্লবী বাণী ছড়িয়ে দিত। কবির বিপ্লবী গান, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট/ ভেঙে ফেল কররে লোপাট’, ‘জাগো অনশন বন্দী ওঠরে যতো/ জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত’, ‘এই শিকল পরার ছল/ এই শিকল পরার ছল/ এই শিকল পরেই শিকল তোদের/ করবো রে বিকল’ গান গেয়ে তৎকালীন সরকারসমূহের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীরা আকাশ-বাতাস গরম করেছিলেন। সেদিন তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য অনেকেই বুঝতে পারেন নাই। কিন্তু যতই দিন গেছে ততই মানুষ বুঝতে পেরেছে যে, ঐ গুলো কোনো নজরুলপ্রেম ছিল না। বরং নজরুলকে তৎকালীন সরকারসমূহের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে দেওয়ার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছিল আওয়ামী ঘরানা।
অথচ তারা যখন ক্ষমতায় আসে তখন নজরুলকে অনাদর এবং উপেক্ষা করে। নজরুলের বিদ্রোহী এবং বিপ্লবী লেখনিসমূহ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এড়িয়ে যায়। তাদের ভয়, নজরুলের কবিতা এবং গানের আসল রূপ অর্থাৎ বিদ্রোহী রূপ যদি প্রকাশ করা হয় তাহলে বিরোধী দল তথা জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে ঐসব গান গেয়ে আন্দোলন সৃষ্টি করবে। এখন ভারতের সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের হরিহর সম্পর্ক। বাংলাদেশের সম্প্রদায় বিশেষের প্রতিও তাদের বিশেষ দুর্বলতা। তাই এখন নজরুলসাহিত্য ও সঙ্গীতের অন্য সবদিক বাদ দিয়ে তারা শুধুমাত্র নজরুলকে অসাম্প্রদায়িক হিসাবে চিত্রিত করছেন। চেষ্টা করছেন নজরুলকে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী একজন কলম সৈনিক হিসাবে চিত্রিত করার।
তারা কিন্তু সবই জানে। তারা কি জানে না যে, নজরুল একদিকে যেমন রচনা করেছেন অসংখ্য ইসলামী গান তেমনি অন্যদিকে রচনা করেছেন অসংখ্য শ্যামাসঙ্গীত। তার ইসলামী গানগুলোর ভেতর দিয়ে যেমন বাক্সময় হয়ে উঠেছে আল্লাহর রসূল এবং পবিত্র ইসলামের সৌন্দর্য ও মাধুরী , তেমনি অন্যদিকে শ্যামা সঙ্গীতগুলোতে তিনি অকৃপণভাবে করেছেন হিন্দুধর্ম ও তাদের দেবদেবীদের মাহাত্মকীর্তন। আমার ভাবতে অবাক লাগে যে, আমাদের দেশে প্রগতি ও অসাম্প্রদায়িকতার তকমা আঁটা এক শ্রেণির রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়ক-গায়িকা শ্যামাসঙ্গীত গাইতে যতো স¦াচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তার বিপরীতে ইসলামী গান গাইতে ঠিক ততখানিই আড়ষ্টতা বোধ করেন।
কিন্তু তারা ভুলে যাচ্ছেন যে, নজরুলের মত বিশাল মাপের কোনো কবিকে খন্ডিতভাবে উপস্থাপন করা যায় না। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক এবং ধিক্কারের ব্যাপার হলো এই যে, নজরুলকে সাইড ট্র্যাক করে তারা রবীন্দ্রনাথকে সামনে নিয়ে আসেন। রবীন্দ্রজয়ন্তীকে মহিমান্বিত করেন আওয়ামী মন্ত্রীরা। তারা ঐসব অনুষ্ঠানে থাকেন এবং বাংলাদেশের অস্তিত্ব এবং অগ্রযাত্রার পথপ্রদর্শক হিসাবে রবীন্দ্রনাথকে চিহ্নিত করেন। এইভাবে তারাই রবীন্দ্রনাথকে ওপরে তুলে নজরুলকে নিচে নামানোর চেষ্টা করেন। অথচ এটি ওপরে উঠানো বা নিচে নামানোর কোনো বিষয় নয়। দুজনই নৃতাত্তি¡কভাবে বাঙালি। দুজনই পৃথিবী বিখ্যাত কবি। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং পৃথিবীজুড়ে যত বাঙালি বাস করছেন তাদের কাছে ক্ষণজন্মা দুই কবি হলেন নজরুল এবং রবীন্দ্রনাথ। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নজরুলকে দিয়েছেন জাতীয় কবির মর্যাদা। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি হিসাবে পরিচিত। কবিতা, গান, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক প্রভৃতি ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের প্রবল বিচরণ। আমি তার গান রজনীর স্তব্ধতায় তন্ময় হয়ে শুনি। তারপরেও তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে, তিনি বাঙালি কবি হওয়া সত্তে¡ও জাতীয়তা এবং নাগরিকতার সূত্রে একজন ভারতীয়। সুতরাং বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে বিবেচনা করলে জাতীয় কবির একটি আলাদা মর্যাদা সব সময়ই থাকবে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই সরকার এবং আওয়ামী ঘরানা তাদের জাতীয় কবিকেই খাটো করছে এবং রবীন্দ্রনাথকে উচ্চস্থানে অধিষ্ঠিত করছে। আমার বক্তব্য দুই কবিকেই একই সমতলে স্থাপন করা হোক।
আর কার কথা বলবো? বিএনপিও তার কয়েকজন নেতা ও কর্মী নিয়ে নজরুলের কবর জিয়ারতের মাধ্যমেই তার জন্ম দিবস পালনকে গন্ডিবদ্ধ করে রেখেছে। শুক্রবার রাতে টেলিভিশনের বুলেটিনে দেখলাম যে, বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল তার কয়েকজন দলীয় নেতা এবং সহকর্মী নিয়ে নজরুলের কবরে পুষ্পাঞ্জলী অর্পণ করছেন। সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন যে, এখন দরকার, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি দিয়ে জনগণকে উজ্জীবিত করা। কিন্তু তারাও লিপ সার্ভিস দিলেন। তাদেরও নজরুল প্রীতি ঐ পর্যন্তই।
\দুই\
নজরুল আমাদের জাতীয় কবি। স্বাধীনতার পর অসুস্থ কবিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ তারই উত্তরসুরী আওয়ামী সরকার জাতীয় কবিকে উপেক্ষিত রাখছে। পশ্চিমবঙ্গ কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র নয়। ভারতের ২৯টি প্রদেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্যটির ৩৪টি কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শনিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডি.লিট ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে।
শুধুমাত্র নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় নয়। পশ্চিমবঙ্গে কবি নজরুল ইসলামের নামে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে। বিমান বন্দরটির নাম কাজী নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। এটি পশ্চিম বঙ্গের দুর্গাপুর শহরে অবস্থিত। এটি দুর্গাপুর বিমান বন্দর নামেও পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগর আসানসোলের সিটি বাস টার্মিনাল থেকে ২৫ কি.মি দুরে অবস্থিত।
নজরুল চরিত্রের শুধু বিপ্লবী নয়, যে সংগ্রামী দিক রয়েছে সেটি আর কোনো কবির মধ্যে পাওয়া যায় না। সত্যভাষণের জন্য, ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে নজরুল শুধু মাত্র কলমই ধরেননি, একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীর মতো কারাবরণও করেছেন।
তিনি ছিলেন ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার সম্পাদক। ধূমকেতুর ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২২ সংখ্যায় তার একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। নাম আনন্দময়ীর আগমনে। এটি ছিল একটি রাজনৈতিক কবিতা। কবিতাটি পাঠক ভাইবোনদের পাঠের জন্য নিচে হুবহু তুলে দিলাম।
আর কতকাল থাকবি বেটী মাটির ঢেলার মূর্তি আড়াল?
স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাঁড়াল।
দেবু শিশুদের মারছে চাবুক, বীর যুবকদের দিচ্ছে ফাঁসি,
ভূ-ভারত আজ কসাইখানা, আসবি কখন সর্বনাশী?
মাদী গুলোর আদি দোষ ঐ অহিংসা বোল নাকি-নাকি
খাঁড়ায়ায় কেটে কর মা বিনাশ নপুংসকের প্রেমের ফাঁকি।
ঢাল তরবার, আন মা সমর, অমর হবার মন্ত্র শেখা,
মাদীগুলোয় কর মা পুরুষ, রক্ত দে মা রক্ত দেখা।
তুই একা আয় পাগলী বেটী তাথৈ তাথৈ নৃত্য করে
রক্ত-তৃষার ‘ময়-ভুখা-হু’র কাঁদন-কেতন কণ্ঠে ধরে।-
অনেক পাঁঠা-মোষ খেয়েছিস, রাক্ষসী তোর যায়নি ক্ষুধা,
আয় পাষাণী এবার নিবি আপন ছেলের রক্ত-সুধা।
দুর্বলেরে বলি দিয়ে ভীরু এ হীন শক্তি-পূজা
দূর করে দে, বল মা, ছেলের রক্ত মাগে দশভুজা।..
‘ময় ভুখা হুঁ মায়ি’ বলে আয় এবার আনন্দময়ী
কৈলাশ হতে গিরি-রাণীর মা দুলালী কন্যা অয়ি!
এই রাজনৈতিক কবিতা প্রকাশিত হওয়ায় ৮ নভেম্বর পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। একই বছরের অর্থাৎ ১৯২২ সালের ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একই দিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে কুমিল্লা থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি নজরুল বিচারাধীন বন্দী হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এক জবানবন্দি প্রদান করেন। চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে তিনি এই জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তার এই জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে। এই জবানবন্দীতে নজরুল বলেছেন, ‘আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজ বিদ্রোহী। তাই আমি আজ রাজ কারাগারে বন্দি এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত। আমি কবি,আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন, আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা ভগবানের বাণী। সে বাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যাদ্রোহী নয়। সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি-মশাল হয়ে অন্যায় অত্যাচার দগ্ধ করবে।’ ১৬ জানুয়ারি বিচারের পর নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।
\তিন\
আমার সবচেয়ে অবাক লাগে যে, আজ আওয়ামী লীগ এবং বামপন্থীরা, যারা এক কালে কবি নজরুলকে মাথায় তুলে নৃত্য করতো, তারা আজ নজরুলের বিপ্লবী গান তো বটেই , ইসলামী গান গুলোকেও ব্ল্যাক আউট করে দিচ্ছে। অথচ নজরুল অনেক ইসলামী গান লিখেছেন যে গুলো সরকার এবং সরকারী দল পরিহার করলেও মানুষের মুখে মুখে সেগুলো শোনা যায়। কবি নজরুল শুধুমাত্র কি ইসলামী গানই লিখেছেন?
বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামকে অমর করে রাখার জন্য দুঃসাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। কলকাতায় একটি ভবন রয়েছে। নাম ইন্দিরা ভবন। সময়ের আবর্তনে এটি হয় পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের অফিস। সিপিএমের অন্যতম পুরোধা জ্যোতি বসু বসবাস করার জন্য ইন্দিরা ভবনে ওঠেন। এবং বেশ কিছুকাল বাস করেন। তার মৃত্যুর পর সম্প্রতি সিপিএম সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তারা ঐ ভবনটি ছেড়ে দেবে। ইতোমধ্যেই মমতা ব্যানার্জী ঐ ভবনটি সরকারী দখলে নিয়েছেন এবং নাম দিয়েছেন নজরুল ভবন। তিনি আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, ইন্দিরা ভবন তথা বর্তমানে নজরুল ভবনে তার সরকার নজরুল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করবে। কংগ্রেস এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধীতা করেছে। তারা বলেছে যে, ইন্দিরা ভবন নামটির সাথে একটি আবেগ জড়িত রয়েছে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জীর সরকার এসব বিরোধীতাকে পাত্তা দেয়নি। মমতা বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ যেমন বাংলার একটি সম্পদ, তেমনি নজরুলও বাংলার আর একটি সম্পদ। সেই সম্পদকে কালজয়ী করার জন্য তার নামে সেখানে একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সেটি করার জন্য যা কিছু করা দরকার তিনি তার সব কিছুই করবেন।
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার কি আমাদের জাতীয় কবিকে অমর এবং কালজয়ী করার জন্য এমন কোনো দুঃসাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সাহস পাবে? রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে এই সরকার যেমন মুক্তহস্ত, উদার এবং সাহসী ঠিক তেমনি নজরুলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে তারা ততখানিই সংকীর্ণ এবং অনিচ্ছুক। আমার ব্যক্তিগত ধারণা এই যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি জানতেন যে, তার মৃত্যুর পর বাংলাদেশে নজরুলের এমন করুণ দশা হবে তাহলে তিনি সম্ভবত কবি নজরুলকে বাংলাদেশে আনতেন না এবং তাকে জাতীয় কবির মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতেন না।
Email: [email protected]



 

Show all comments
  • রাসেল ২৯ মে, ২০১৮, ২:৪৩ এএম says : 0
    এটাই এখনকার সবচেয়ে তিক্ত সত্য কথা
    Total Reply(0) Reply
  • জলিল ২৯ মে, ২০১৮, ২:৪৪ এএম says : 0
    এই লেখাটির জন্য লেখককে অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • এমদাদুল হক ২৯ মে, ২০১৮, ২:৪৫ এএম says : 0
    আমরা কত বড় হতভাগা আমরা আমাদের জাতীয় কবিকে সম্মান জানাতে পারি না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পশ্চিমবঙ্গ

১ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন