Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিরাপত্তা ও নাগরিক সচেতনতা

| প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আমাদের সমাজ এক নজিরবিহীন অবক্ষয়ের শিকার। অবক্ষয়ের হাত ধরেই বেড়ে চলেছে নাগরিক নিরাপত্তাহীনতা। ঘরে-বাইরে কেউই এখন নিরাপদ নয়। দুর্নীতি-দূরাচার, মাদক ও অপসংস্কৃতির শিকার হয়ে আমাদের সমাজ এক প্রকার বন্ধ্যাত্ব্রে শিকার হয়ে পড়েছে। অবক্ষয় ও নিরাপপত্তাহীনতা রোধ নানাক্ষেত্রে সামাজিক শিক্ষা ও সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহনের তাগিদ উচ্চারিত হচ্ছে। বিশেষত: যানজট, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নাগরিক জীবনে ক্রমবর্ধমান দুর্ভোগের জন্য আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ণ না হওয়ার পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা ও দায়িত্বহীনতাকেও দায়ী করা যায়। শুধু দায়ী করলেই হবে না। এ অবস্থা পরিবর্তনে মৌলিক উদ্যোগ হিসেবে এখন প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা কারিকুলামে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও ট্রাফিক আইনের পাঠ সংযোজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত সোমবার ঢাকায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি(পিইডিপি-৪)’র জন্য ৩৮ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিকের পাঠ্যসূচিতে বাংলা ও ইংরেজীর পাশাপাশি আরেকটি বিদেশী ভাষাশিক্ষা, পরিচ্ছন্নতা ও ট্রাফিক আইন বিষয় অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দেন। সাধারণ পরিচ্ছন্নতা, নাগরিক সচেতনতা এবং ট্রাফিক আইনের মত বিষয়গুলো বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে এসব বিষয়ে নাগরিক সচেতনতা বাড়বে।
ঢাকার যানজট সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। সবর্ত্রই যানজট, অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, নিরাপত্তাহীনতা, অপরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশগত অবক্ষয়ের ছাপ স্পষ্ট। সড়ক-মহাসড়কে যানজট, দুর্ঘটনা ও অব্যবস্থাপনার জন্য স্বাভাবিকভাবেই আমরা ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগহীনতা এবং আইন অমান্য করার প্রবণতাকে দায়ী করছি। সেই সাথে সবচেয়ে বেশী যে বিষয়টি এসব বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনার পেছনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে, তা হল নাগরিক সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার অভাব। বিশেষত: গাড়ী চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে ন্যুনতম শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা এবং সব নাগরিকের জন্য রাস্তা পারাপারের নিয়ম কানুন, ট্রাফিক আইন ব্যক্তিগত ও পাবলিক প্লেসে শৃঙ্খলা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা এসব ক্ষেত্রে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। অনুমোদিত পিইডিপি-৪ প্রকল্প চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শ্রেণীর পাঠ্যসূচিতে নাগরিক সচেতনতামূলক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি সার্বজনীন ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমুহ দূর করতে হবে। সব শিশুর জন্য ন্যুনতম প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পিতামাতা, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জন্য সুনির্দ্দিষ্ট দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
গত কয়েক মাসে ঢাকার গণপরিবহনে বেশ কয়েকটি রোমহর্ষক ঘটনা সংঘটিত হয়। এর মধ্যে তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজিব হোসেনের হাত হারানো ও মৃত্যুর ঘটনাটিতে নাগরিক সমাজে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। একই সময়ে প্রায় অনুরূপ আরো কয়েকটি ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আমাদের গণপরিবহনের বাস্তব অবস্থা ও নাগরিক নিরাপত্তাহীনতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় গণমাধ্যম সরগরম হয়ে ওঠে। ভ’য়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারি চালকদের অদক্ষতা, বেপরোয়া গাড়ী চালনা এবং পুলিশের ঘুষবাণিজ্য ও চাঁদাবাজির কারণে অপরাধি, আইন অমান্যকারী চালকদের পার পেয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনেক লেখালেখি হলেও পাশাপাশি নাগরিক সমাজের অসচেতনতা, রাস্তায় চলাচলের নিয়ম-কানুন ও নিরাপত্তা সম্পর্কে দায়িত্বহীন আচরণের বিষয়গুলো তেমন আলোচিত হয়না। ব্যস্ত সড়কে গণপরিবহণের ওভারটেকিং প্রতিযোগিতা বা যেখানে সেখানে গাড়ী থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করানো যেমন বেআইনী ও শাস্তিযোগ্য অবরাধ একইভাবে চলন্ত গাড়ীতে ঝুঁকি নিয়ে উঠানামা করা অথবা বাইরে হাত রাখার মত অপরিনামদর্শি আচরণের জন্য একশ্রেনীর যাত্রীরও দায় রয়েছে। এ ছাড়া গাড়ী বা মোটর সাইকেল চালনা অবস্থায় মোবাইল ফোন রিসিভ করা, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হওয়া, কানে হেডফোন ও মোবাইলফোন লাগিয়ে রাস্তায় চলাচলের কারণেও অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হন। বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি ট্রাফিক ও নাগরিক শৃঙখলা ও নিরাপত্তা বিষয়ক আইনের সময়োপযোগী সংস্কার করতে হবে। সেই সাথে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যকর সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি শিশুকাল থেকেই শিশুদেরকে তার সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীলতা, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, ট্রাফিক আইন ও নাগরিক অধিকারের মত প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর ধারনা ও শিক্ষা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই সামগ্রিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভবপর হয়ে উঠতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিরাপত্তা


আরও
আরও পড়ুন