যেভাবে মাছ ভাজলে ভেঙে যাবে না
বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে মাছ তো থাকেই। এটি সব খাবারের মধ্যে পুষ্টির অন্যতম উৎস। তাড়াহুড়ো করে
রোযা ইসলাম ধর্মের পাঁচটি প্রধান স্তম্ভের অন্যতম। রমযান মাস রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ। মুসলমানরা রমযান মাসে রোযা পালন করেন কারন এটি ফরজ ইবাদাত। মহান আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারাহ’র ১৮৩ নং আয়াতে বলেছেন- “হে ঈমাদারগন; তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে যেমন করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, সম্ভবত তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে।” তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারও কারও জন্য রোযা পালনে শিথিলতা রয়েছে। রমযানে ধৈর্য, আত্মসংযম, নিয়মানুবর্তীতার সাথে রোযাপালনের মাধ্যমে মুসলমানরা তাঁদের প্রভুর নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ লাভ করে। ধর্মীয় অনুপ্রেরণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও রোযার উপকারিতা অনেক।
আসুন আমরা জেনে নেই রমজান আমাদের শরীর-স্বাস্থ্যের কি কি উপকার করে-
১। বিষক্রিয়ার প্রশমন
২। পরিপাকতন্ত্রের বিশ্রাম
৩। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন
৪। রক্তের গøুকোজ নিয়ন্ত্রন
৫। রোযা ওজন কমাতে সাহায্য করে
৬। রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
৭। বদঅভ্যাস পরিত্যাগ ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরিতে সাহায্য করে
বিষক্রিয়ার প্রশমন-
সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাদ্য থেকে আমাদের দেহের চর্বিকোষে কিছু কিছু বিষাক্ত পদার্থ জমা হতে থাকে। রোযা এইসব বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্তি লাভের জন্য দারুন এক সুযোগ তৈরি করে দেয়। রোযা রাখার ফলে লম্বা সময় না খেয়ে থাকায় চর্বি দহনের মাধ্যমে শরীর থেকে এই বিষাক্ত পদার্থগুলো বের হয়ে যায়। লিভার, কিডনি সহ আন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
পরিপাকতন্ত্রের বিশ্রাম-
সারাদিন ব্যাপী পরিপাকতন্ত্র্রের বিশ্রামের সময় নির্ধারিত ধীর গতিতে হজমের জন্য তরল নিঃসৃত হতে থাকে। খাদ্য হজমও হয় একইভাবে। এতে আত্তীকরণ প্রক্রিয়া জোরদার হয় এবং শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী পুষ্টিকনা শোষন করতে পারে। এটি ‘এডিপোনেকটিন’ নামক হরমোনের প্রভাবে হয় যা অনেকটা সময় না খেয়ে থাকা ও শেষ রাতে খাবার গ্রহনের সাথে সম্পর্কিত।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন-
আত্তীকরণ প্রক্রিয়া শ্লথ হওয়ার কারণে এড্রেনালিন ও নরএড্রেনালিন হরমোন কম নিঃসৃত হয়, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
রক্তের গøুকাজ নিয়ন্ত্রন-
রোযার সময়ে প্রথমে গøুকাজ ও পরে চর্বি দহনের মাধ্যমে শরীরে শক্তি তৈরি হয়। এতে রক্তে গøুকজের মাত্রা কমে আসে। শরীরে ইনসুলিন ও কম তৈরি হয় অর্থাৎ অগ্ন্যাশয় বিশ্রামে থাকে, যা ডায়াবেটিস এর জন্যও উপকারি। তবে প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর রোযার শুরুতেই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।
রোযা ওজন কমাতে সাহায্য করে-
যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক রমযান তাদের জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের অসাধারণ সুযোগ। প্রথমত রোযা ক্ষুধা ও জাগতিক ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লম্বা সময় না খেয়ে থাকার ফলে পাকস্থলী ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসে, ফলে কম খাবার খেয়েই পেট ভরে যায়। এর সাথে নিয়ম মাফিক স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব। তারাবীর নামাযও মাঝারি মানের ব্যায়াম হিসাবে কাজে লাগে। এছাড়া রোযা চর্বি দহনেও সাহায্য করে। রোযা-পরবর্তীতে এ অভ্যাস ধরে রাখলে ওজন আর বাড়েনা।
রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে-
নিয়মিত রোযা পালনের ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করাও সম্ভব। “অহহধষং ড়ভ হঁঃৎরঃরড়হ ধহফ সবঃধনড়ষরুড়স ‘ এ প্রকাশিত আর্টিকেলের তথ্য অনুযায়ী এল ডি এল কোলেস্টেরল কমে ৮%, ট্রাইগ্লিসারাইড কমে ৩০%, এইচ ডি এল কোলেস্টেরল বাড়ে ১৪.৩%, যা হার্ট এটাক, স্ট্রোক, রক্তনালীতে চর্বি জমা প্রতিহত করে।
বদঅভ্যাস পরিত্যাগ ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরিতে সাহায্য করে-
ধূমপান, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন বদঅভ্যাস পরিত্যাগের উপযুক্ত সময় রমজান। রোজা ধীরে ধীরে নেশাজাতীয় দ্রব্যাদি গ্রহণের ইচ্ছাকে দূরে রাখতে সাহায্য করে এবং এই অভ্যাসে শরীর ও মন অভ্যস্থ হয়ে ওঠে, এর জন্য প্রয়োজন শুধু মানসিক একাগ্রতার। এই সময়টা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, ইউ কে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস পুরো রমজান মাসকে নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে অব্যাহতি পাবার আদর্শ সময় হিসেবে ঘোষণা করেছে।
রোজা রাখার মাধ্যমে নিজেদেরকে অধিকতর সুস্থ রাখার এই সুযোগ সকলের গ্রহণ করা উচিৎ।
০ ডাঃ রওশন আরা খানম
জুনিয়র কনসালটেন্ট
ইউনাইটেড হাসপাতাল
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।