দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
১৯৫৮ইং সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাঃ গোলাম মুয়াযযম সাহেব কর্তৃক ‘‘মানব শরীরের উপর রোজার প্রভাব’’ সম্পর্কে যে গবেষণা চালানো হয়, তাতে প্রমাণিত হয় যে, রোযার দ্বারা মানব শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। কেবল ওজন সামান্য কমে। ১৯৬০ ইং সালে তার গবেষণায় থেকে প্রমাণিত হয়েছে, যারা মনে করে রোজা দ্বারা পেটের শূলবেদনা বেড়ে যায়, তাদের এ ধারণা নিতান্ত অবৈজ্ঞানিক। কারণ উপবাসে পাকস্থলীর এসিড কমে এবং খেলেই এটা বাড়ে। এ অতি সত্য কথাটা অনেক চিকিৎসকই চিন্তা না করে শূলবেদনার রোগীকে রোজা রাখতে নিষেধ করেন। ১৭ জন রোজাদারের পেটের রস পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যাদের পাকস্থলীতে এসিড খুব বেশি বা খুব কম রোজার ফলে তাদের এ উভয় দোষই নিরাময় হয়েছে। হৃদপিন্ডের উপর অথচ ১১ জন রোজাদারের হৃদপিন্ড অত্যাধুনিক ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম যন্ত্রের সাহায্যে (রোজার পূর্বে ও রোজা রাখার ২৫ দিন পর) পরীক্ষা করে দেখা গেছে রোজা দ্বারা তাদের হৃদপিন্ডের ক্রিয়ার কোনই ব্যতিক্রম ঘটে নাই।
ডা. আব্রহাম জে হেনরী বলেছেন: রোজা হলো পরমহিত সাধনকারী ওষুধ বিশেষ। ডা. এফ. এম গ্রিমী বলেন: রোজার সামগ্রিক প্রভাব মানব স্বাস্থ্যের ওপর অনড়, অটল, অটুটভাবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে এবং রোজার মাধ্যমে কেবল শরীরের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর ক্লান্তিই দূর করে না, বরং দেখা গেছে যে, এগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ডা. আর ক্যামফার্ড বলেন: রোজা হচ্ছে পরিপাক শক্তির শ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী কিংবা পরিপাক শক্তির অন্তরঙ্গ বন্ধু। ডা. লিউ ফার্ট বলেছেন: দেহের জন্য রোজা একটা অত্যন্ত হিতকর টনিক। রোজাদাররা বেশ কয়েকটি রোগ থেকে মুক্ত থাকেন। ডা. লইস ডি ফ্রন্ট বলেছেন: রোজা পালনে মানবদেহে যথেষ্ট পুষ্ট এবং বলিষ্ঠ হয়ে থাকে। মুসলমানরা নিশ্চয় রোজার মাসকে সুস্বাস্থ্যের মাস হিসাবে গণ্য করে থাকেন।’
ডা. ফারাদেই আজিজি এবং ডা. শিয়াকোলা ডায়াবেটিস রোগীদের উপর এক বিশেষ জরিপ চালান। সেখানে কিছু রোগীকে রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয় এবং কিছু রোগীকে অনুৎসাহিক করা হয়। তিনি তার ওয়েব সাইটে তার রোগীদের জন্য বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন: মেধাশক্তি ৩টি আমলের দ্বারা বৃদ্ধি করা যায়। (ক) মেসওয়াক করা (খ) কোরআন তেলাওয়াত করা এবং (গ) রোজা রাখা।
১৯৯৪ সালে মরোক্কোর ক্যাসাবলাঙ্কায় আন্তর্জাতিক কন্ফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সারা বিশ্ব থেকে বহু মুসলিম ও নন-মুসলিম মেডিক্যাল রিসার্চারগণ উপস্থিত হন। সেখানে ৫০টি রিসার্চ পেপার উপস্থাপন করা হয়। আর রমজানে রোজার এই বেনিফিটগুলোকে সমর্থন করা হয়।
জর্ডানের আম্মান ইউনিভারসিটি হসপিটালের ডাঃ সোলেমন ১৯৮৪ সালে রমজানের পুরু একমাস ১৫-৬৪ বছর বয়সের ৪২ জন পুরুষ এবং ১৬-২৮ বছর বয়সের ২৬ জন মহিলার মধ্যে পরীক্ষামূলক গবেষনা চালিয়ে এই উপকারিতা গুলোর প্রমাণ পান। সৌদি মেডিক্যাল জার্নালে একদল রিসার্চার ২০০৩ সালে গবেষনা করে এই উপকারিতার সত্যতা প্রমাণ করেছেন। মনগড়া যুক্তি দিয়ে অবান্তর কথায় মেডিক্যাল রিসার্চে প্রমাণিত নয় বলে মানুষকে উপকারীতা থেকে দূরে রাখা জ্ঞানীর কাজ নয়।
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে রোযাদার নয় যে কারোর সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ ইসলাম ধর্ম বা বিজ্ঞান কোনটাই সমর্থন করেনা। রমজানে অতি মুনাফালোভীরা খাদ্য সামগ্রি দীর্ঘক্ষণ মচমচা রাখার জন্য গাড়ির পোড়া মবিল পোড়া তেলের সঙ্গে ব্যবহার করেন। এগুলো খেয়ে কেউ অসুস্থ হলে রোযাকে দায়ি করা বুদ্ধিমান চিকিৎসকের কাজ নয়?
গাইনী, শিশু, কিডনী, মেডিসিন, লিভার ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন: পোড়া তেল ও পোড়া মবিল সংমিশ্রণে তৈরি সিঙ্গারা, সমুচা, জিলাপী, বেগুনি, পুরিসহ নানা খাদ্যসামগ্রী খেলে ক্যান্সার, কিডনী ও লিভারসহ মরণব্যাধি হবেই এবং মায়ের পেটের বাচ্চা বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই সমস্যাটি আমাদের সামাজিক ও নাগরিক সমস্যা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্বলতার কারণে, রোযার কারণে নয়।
সাহরীর কিছু সময় পূর্বে ওষুধ সেবন করতে হবে এবং ইফতারের তালিকায় শর্করা ও স্নেহ জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ কম রাখতে হবে। রোজা রাখার ফলশ্রুতিতে প্রকৃত মুমিনগণ অতিরিক্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লাভ করে থাকেন। সুতরাং ঈমানদারদের রোজা রাখা পুরোপুরী সাইন্টিফিক।
ইসলামে রোজা রাখার ব্যাপারে, কোথাও অতি ভোজনের উল্লেখ নাই। সব সময় পরিমিত ও পুষ্টিকর খাবারের কথা বলা হয়েছে। হযরত মুহম্মদ (সাঃ) বলেছেন: পেটের তিনভাগের একভাগ খাবার, একভাগ পানীয় দিয়ে পূরণ করতে। অপর ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখতে বলেছেন। আর বর্তমান মেডিক্যাল সাইন্সও সেই কথাই বলে।
রমজানে সারাদিন অভুক্ত থেকে কেউ কেউ অতিরিক্ত এবং বাজে খাবার খেয়ে ক্ষেত্র বিশেষে অসুস্থ্ হয়ে পড়েন। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগান কিছু মানুষরূপী জ্ঞানপাপী শয়তান। আর একেই কেন্দ্র করে রোজার ক্ষতিকারক দিকগুলো প্রচার করে মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়। রমজান এলেই অনেত ক্ষেত্রে খাবারগুলো আমাদের দেশে তৈরী হয়, সেগুলো মোটেই স্বাস্থ্য সম্মত নয়। আর অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে যে কেউ অসুস্থ হবে সেটাই স্বাভাবিক। ঐ খাবারগুলো যদি রমজান মাস বাদে অন্য কোন মাসে খাওয়া হয় তাহলে ঐ ব্যক্তি অসুস্থ্ হয়।
এ আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, রোজা ফ্যাট বা কোলেস্টেরল কমায়, এজিং প্রসেস ব্যহত করে। শরীরের ডিটক্সিফিকেশন করে ও ইম্যুনিটি বৃদ্ধি করে, হজমতন্ত্রের এসিড নিঃসরণ কমায়, কিডনী স্টোন হওয়ার ঝুঁকি কমায়, নন ইনসুলিন ডিপেন্ডেন্ট ডায়াবেটিস কমায়, হার্ট আর্টারি প্রেশার এবং লিভার আর্টারি প্রেশার কমায়। রোযা রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ থাকার অন্যতম উপায়। যা আধুনিক মেডিক্যাল সাইন্স ধারা প্রমাণিত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।