Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা বাড়ছে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভাগ্য এই যে, তারা বরবারই অপরাজনীতির শিকার হচ্ছে। ক্ষমতা এবং ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থের রাজনীতির মধ্যে আটকে পড়ে আছে। তারা ভাল করেই জানে, যাকে তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে বা করছে, তিনি তার স্বার্থের বাইরে গিয়ে তাদের স্বার্থ খুব কমই দেখবে। তারপরও তাকে নির্বাচিত করে এ আশায়, যদি তাদের কল্যাণে তিনি কাজ করেন! তাদের সে আশা খুব কমই পূরণ হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বেশিরভাগই জনগণের স্বার্থের চেয়ে নিজ এবং নিজস্ব গোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নেই প্রাধান্য দেন। জনগণের স্বার্থ গৌণ হয়ে পড়ে। এখন তো ভোটের রাজনীতিতে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, জনগণ ভোট দিয়ে যে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের আশা করবে সে সুযোগ নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাদের ভোটাধিকার বলতে কিছু নেই। বিষয়টি এমন যে, জনগণকে পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে, কষ্ট করে রোদের মধ্যে লাইন ধরে তোমাদের ভোট দেয়ার দরকার নেই। তোমাদের ভোট আমরাই দিয়ে দেব। ৫ জানুয়ারির বিনা ভোটের নির্বাচনের পর থেকে এ অপসংস্কৃতি অনেকটা শেকড় গেঁড়ে বসেছে। তৎপরবর্তী স্থানীয় নির্বাচনগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কীভাবে ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ভোটারদের অধিকার হরণের এই অপসংস্কৃতি কবে বন্ধ হবে বা তারা আবার অবাধে ভোট দিতে পারবে কিনা, তা এখন অনিশ্চিত। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনটি কীভাবে হবে, কেমন করে হবে, হলেও তাতে ভোটাররা নির্বিঘেœ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারবে কিনা, নাকি কষ্ট করে তাদের ভোট দিতে হবে নাÑএমন অপসংস্কৃতি বহাল থাকবে, তা এখন নিশ্চিত করে বলা যায় না। ক্ষমতাসীনদের কথা-বার্তা এবং আচার-আচরণে সাধারণ মানুষের কাছে এটাই প্রতীয়মাণ হচ্ছে, যে কোনো উপায়েই তারা আবার ক্ষমতায় থাকতে বা আসতে চান। এর বিপরীতে দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বিএনপি কী করবে এবং কীভাবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সরকারকে বাধ্য করবে, তার কোনো আলামত তার কর্মকাÐে অস্পষ্ট। অথচ এ নির্বাচনে তার এবং সাধারণ মানুষের মতামত ও ভোটারদের ভোটাধিকারের অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে আছে। এটা তো সকলেরই জানা, ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ রয়েছে, তারা মনস্থির করে রেখেছে। প্রয়োজন শুধু তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং তার ফলাফল যথাযথভাবে প্রকাশ করার সুযোগটি নিশ্চিত করা। তাদের এ অধিকার প্রতিষ্ঠার বড় দায়িত্ব অর্পিত হয়ে আছে বিএনপির ওপর। বিএনপি তার এবং ভোটারদের ভোটাধিকার রক্ষায় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাই এখন দেখার বিষয়। তবে ধারণা করা যায়, বিএনপি হয়তো নির্বাচনের আগে একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। এতে অনিবার্যভাবে তাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। এই ত্যাগ বিফলে গেলে পরিণতি কী হবে, তা বোধ করি সকলেরই জানা।
দুই.
রাজনীতিতে যে ডেডলক সৃষ্টি হয়েছে, আগামী পাঁচÑছয় মাসে এই লক খুলবে কিনা, তা বলা মুশকিল। তবে এটা অনুমান করা যায়, অভাবনীয় অনেক ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ আশঙ্কা একজন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সচেতন ও চিন্তাশীল প্রত্যেকেই করছেন। তারা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতার নিরঙ্কুশ ব্যবহার এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এতে যদি তৃতীয় কোনো শক্তি বা ক্ষমতাসীন দলের ভাষায় অসাংবিধানিক সরকার আসে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত হওয়া নিয়ে সংবিধান প্রণেতা ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহŸায়ক ড. কামাল হোসেন গত সোমবার ‘সর্বগ্রাসী লুণ্ঠন বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনাকে ধ্বংস করছে’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, গাজীপুরের নির্বাচন কিভাবে বন্ধ করে দেয়া হলো? এ আলামত কোনোভাবেই শুভ লক্ষণ নয়। এতে আবার ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থাই স্থগিত হয়ে যায় কিনা? তিনি বলেন, আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধিকে দেখেছি একরকম আর এখন অনির্বাচিত প্রতিনিধিকে দেখছি আরেক রকম। এখন যারা আছেন তারা আসলে নিয়োগ করা। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তবে দলটি ক্ষমতায় এলে যে খুব পরিবর্তন হয়ে যাবে তা নয়। কাজেই এখন দরকার জাতীয় ঐক্যের সরকার। তাদের এসব বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও প্রচার সম্পাদক হাসান মাহমুদ। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ড. কামাল হোসেনরা আরেকটি ওয়ান ইলেভেন সরকারের পায়তারা করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এমন আশঙ্কা করছেন কেন? তারা কি বুঝতে পারছেন, গণতন্ত্রকে সংকুচিত ও পেছনে ফেলে যেভাবে জোর জবরদস্তি করে দেশ শাসন এবং যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার বিষয়টি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ পছন্দ করছে না? গণতান্ত্রিক উপায়ে সুশাসনের মাধ্যমে যদি দেশ পরিচালিত হতো, তাহলে তো এমন আশঙ্কার কোনো কারণ ছিল না। এটাতো আমাদের দেশে নতুন কিছু নয় যে, যখন রাজনৈতিক দলগুলো যথাযথভাবে দেশ পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে, তখনই অসংবিধানিক সরকার এসেছে। বিনাভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতাসীন দল এখন যেভাবে দেশ শাসন করছে এবং যেনতেনভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে চাচ্ছে, তাতে দেশের সচেতন শ্রেণীর মানুষ শঙ্কা প্রকাশ করতেই পারে। তারা এর পরিবর্তনও চাইতে পারে। বলা বাহুল্য, ভোটারবিহীন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। বিনা ভোটের সরকারকে কেউ পছন্দ করছে না। এই সরকার পাঁচ বছর ধরে যেভাবে দেশ শাসন করছে, তা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। ক্ষমতায় থেকে বিরোধী রাজনীতি নির্মূলীকরণ প্রক্রিয়া চালানো এবং আগামী নির্বাচনের আগে সংঘাতের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তার দায় কি ক্ষমতাসীন দল এড়াতে পারবে? দেশ যদি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে, তখন ওয়ান-ইলেভেনের মতো সরকার আসা কি খুব অস্বাভাবিক মনে হবে? দেশের সচেতন নাগরিক মহলের এ আশঙ্কা তো অমূলক কিছু নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, যদি ওয়ান-ইলেভেনের মতো সরকারের পুনরাবৃত্তি ঘটে তবে ত্যক্ত-বিরক্ত সাধারণ মানুষ তাকে স্বাগত জানালে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ওয়ান-ইলেভেনের সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাধারণ মানুষের এ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতার মোহে এতটাই অন্ধ হয়ে আছে যে, কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতার চিন্তাই করছে না। তারা সংবিধানের উসিলা দিয়েই আগামী জাতীয় নির্বাচন করতে চায়। এর অর্থ হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই নির্বাচনটি হবে। আর ক্ষমতায় আসতে এবং থাকতে এর চেয়ে বড় সুযোগ দলটির হাতে নেই। কারণ সে নিজেও জানে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তার ভরাডুবি অনিবার্য হয়ে উঠবে। এই ভরাডুবির হাত থেকে বাঁচতেই নিজের অধীনে নির্বাচনের কথা অনর্গল বলে যাচ্ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রীÑএমপিরা সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদ বহাল রেখে প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচন হবে। এতে কোন দল আসলো কি আসলো নাÑএটা তাদের ব্যাপার। নির্বাচনের ট্রেন কারো জন্য থেমে থাকবে না। খুব কঠিনভাবে এসব কথা তারা বলে যাচ্ছেন। তাদের এ অনড় মনোভাব থেকে বোঝা যায়, ক্ষমতা নামক তালগাছটি ক্ষমতাসীন দল কিছুতেই ছাড়তে চাচ্ছে না। যদি কোনোভাবে ক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে যায়, তবে তার পরিণতি কী হবে তা সে ভালভাবেই বুঝতে পারছে। দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের জন্য দুই ধরনের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। প্রথমত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে না পারার শঙ্কা এবং যেনতেনভাবে ক্ষমতায় থাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা। দ্বিতীয়ত অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় আসার প্রবল সম্ভবনা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের তার প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়া। এই দুই কারণে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাতে তৃতীয় পক্ষের ক্ষমতায় আসার পথকে প্রশস্ত করে দেবে।
তিন.
ক্ষমতাসীন দলের কথা-বার্তা এবং আচরণ দেখে মনে হতে পারে সে খুবই নির্ভার এবং পুনরায় তার ক্ষমতায় আসা সময়ের ব্যাপার মাত্র। রাজনীতিতে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা সে আমলেই নিচ্ছে না। তার মনোভাব এমন এ জটিলতা কোনো ব্যাপার না। দমন করে দেয়া যাবে। তার চেয়ে বরং জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরাই শ্রেয়। ফলে সে শ্লোগান তুলেছে ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা’ ধরে রাখতে হলে তাকেই পুনরায় ক্ষমতায় আনতে হবে। বিগত দশ বছরে সে কী উন্নয়ন করেছে তার একটি তালিকা করে তা প্রচারের ব্যাপক আয়োজন শুরু করেছে। এজন্য সরকারিভাবে প্রায় ৬০ কোটি টাকার তহবিলও বরাদ্দ করা হয়েছে। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দল সরকারি অর্থে দলীয় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে যাচ্ছে। আগামী জুলাই থেকে গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ প্রচারণার দামামা বেজে উঠবে। ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে প্রচারণার অংশ হিসেবে থাকবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, লোকগীতি অনুষ্ঠান, নারী সমাবেশ, ফেসবুক, ইউটিউব, রেডিও এবং টেলিভিশনে উন্নয়ন কার্যক্রম প্রচার। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে আসা লোকজনের জন্য নাস্তা-পানিরও ব্যবস্থা করা হবে। খালি মুখে তারা বসে থাকবেন না। এই উন্নয়ন প্রচার প্রকল্পের শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। যদিও বিশিষ্টজনরা সরকারি অর্থ ব্যয়ে দলীয় প্রচারণার বিষয়টি ভালভাবে দেখছেন না। তারা বলছেন, এ ধরনের প্রচারণামূলক প্রকল্প নেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এসব প্রকল্পে কোনো উন্নয়ন হয় না। উন্নয়ন হলে তো জনগণ দেখতেই পায়। নতুন করে প্রচার-প্রচারণার দরকার হয় না। এ ধরনের প্রকল্প থেকে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের লাভবান হওয়া ছাড়া আর কিছুই হয় না। সরকারি অর্থ ব্যয়ে ক্ষমতাসীন দলের এ ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না, দলটি ক্ষমতায় থাকতে কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে! অথচ একটি দেশের উন্নয়নই যথেষ্ট নয়, এর সাথে গণতন্ত্র, সুশাসন, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কার্যক্রম চালানো এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুষম বিকাশ থাকতে হয়। ক্ষমতাসীন দল যে এসবের কোনো তোয়াক্কা করছে না, তা বহু বছর ধরেই সাধারণ মানুষ দেখছে। বিরোধী দল ও মতের লোকজন এসব নিয়ে কথা বলতে গেলেই সরকার তাদের তীক্ষè বাক্যবাণে জর্জরিত করে ফেলে। তার মতে, এসব নিয়ে কথা না বলে কেবল তার উন্নয়ন নিয়েই যেন কথা বলা হয়। এজন্য ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক এবং দলবাজ কিছু বুদ্ধিজীবীও প্রতিনিয়ত টেলিভিশন টকশোতে উপস্থিত হয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। কারণ তারাও জানেন, তাদের সমর্থিত দল যদি ক্ষমতায় থাকতে না পারে, তবে তাদের সুযোগ-সুবিধায়ও টান ধরবে। ফলে তাদের কথা-বার্তায়ও এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যে করেই হোক এ সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে সাপোর্ট দিতে হবে। এ সরকারের পক্ষে বেশি বেশি কথা বলতে হবে এবং বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির পিন্ডি যেভাবে পারা যায় চটকাতে হবে। অথচ তারাও বুঝতে পারছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিরই বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তবে এটা বুঝতে পারছেন না যে, সাধারণ মানুষের কাছে তাদের কথার গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। টক শোগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সমর্থকদের উপস্থিতি দেখলেই দর্শক অন্য অনুষ্ঠান দেখা শুরু করে। এ থেকে প্রতীয়মাণ হয়, সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিচের দিকে। এ প্রেক্ষিতে, যদি পুনরায় ৫ জানুয়ারির মতো একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়, তবে তা যে তৃতীয় পক্ষের পথকে সহজ করে দেবে তার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
চার.
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রায়ই একটি কথা বলেন, বিএনপি খাদের কিনারে চলে গেছে। মরা গাঙে পরিণত হয়েছে। এ গাঙে আর জোয়ার আসবে না। এর বিপরীতে তার দলের ভরা জোয়ার চলছে এবং আগামী নির্বাচনেও তার দলই বিজয় লাভ করবে। ভাল কথা, তাহলে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে তার দলের জয় তুলে নিয়ে ক্ষমতায় গেলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। রাজনৈতিক এত অনিশ্চয়তা এবং অস্থিতিশীলতা থাকে না। মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। তা না করে কেবল সংবিধানের দোহাই দিয়ে নিজেদের অধীনে নির্বাচন করার কথা বলছেন কেন? এটা তার দলের জন্য নিরাপদ বলে? সুরক্ষিত অবস্থায় থেকে যে কেউই বলতে পারে, পারলে আমাকে ঠেকান! এটা তো ভীতু লোকের আচরণ। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার যুক্তি হিসেবে ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে ক্ষমতাসীন দলের অধীন ছাড়া নির্বাচন হয়? তারা এটা বলেন না, পৃথিবীর কোন গণতান্ত্রিক দেশে ক্ষমতাসীন দল বিরোধী রাজনৈতিক দলকে রাজনীতি করতে না দিয়ে মেরে-কেটে, পিটিয়ে চিরশত্রæ করে তোলা হয় এবং তার অধীনে নির্বাচন করতে বলা হয়? আর যে দেশ বিশ্বের পাঁচটি স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় থাকে, সে দেশে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা কি নিরাপদ? এখন যে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, দেশে ওয়ান-ইলেভেন পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা চলছে, এ জন্য দায়ী কে? ওয়ান-ইলেভেন সরকার আসার জন্য তৎকালীন বিএনপি সরকারের ভুল পদক্ষেপকে দায়ী করা হলে, আগামীতে এ ধরনের সরকারের আগমন ঘটলে তার দায় কি ক্ষমতাসীন দলকে নিতে হবে না? এখন তো দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই ওয়ান-ইলেভেনের মতো সরকার বা অসাংবিধানিক সরকারের আগমনের আশঙ্কায় বেশি কথা বলছেন। তাদের কথা-বার্তায় মনে হচ্ছে, এ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। এ উদ্বেগ কি তাদের কারণেই হচ্ছে না?
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজনীতি

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন