Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজনীতির পাশাপাশি সশস্ত্র পন্থায়ও বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

দীর্ঘ রাজনীতির লক্ষ্যই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। আর তাই, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পাশাপাশি সশস্ত্র পন্থায়ও বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই তিনি অনুধাবন করেন পাকিস্তান কাঠামোতে বাঙালি জাতির মুক্তি আসবে না। এ লক্ষ্যে তিনি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পাশাপাশি সশস্ত্র পন্থায়ও বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছিলেন। বাইরের রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন এবং তার গণতান্ত্রিক রূপ অর্থাৎ ‘পিপলস মুভমেন্টের’ সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিকল্প ‘সাবজেকটিভ’ স্ট্রাকচার নির্মাণ করেছিলেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগে থেকেই বাঙালি জাতিস্বত্ত্বা নির্মাণ করে ধীরে ধীরে জাতিকে স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ করে তুলেছিলেন। দ্বিজাতি তত্ত্বের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই তিনি অনুধাবন করেন পাকিস্তান কাঠামোতে বাঙালি জাতির মুক্তি আসবে না। পশ্চিম পাকিস্তান ও মুসলিম লীগ ক্রমেই আগ্রাসী, ক্ষমতাতান্ত্রিক ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, ফলে, এক নতুন রাজনীতি ও নতুন জাতির জন্য স্বাধীনতা দরকার-এটাই ছিল বৃহত্তর জনতার একান্ত আর্তি।
এ লক্ষ্য নিয়ে তিনি দু’ভাবেই এগুতে থাকেন। নিয়মতান্ত্রিক ভাবে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি প্রথমে বাঙালি জাতি গঠনের উপর জোর দেন। ধীরে ধীরে জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার তীব্র আকাক্সক্ষা জাগাতে শুরু করেন। অন্যদিকে, বিকল্প সশস্ত্র পন্থার দিকেও নজর দেন।
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র পন্থায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সম্মতি নিয়ে একটি বিপ্লবী সংস্থা যে গঠন করা হয়েছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিবরণে তাই বলা হয়েছে। আর এই মামলা যে সত্যি ছিল, মামলার আসামিরা তা বলেছেন।

অধ্যাপক সাহাবউদ্দিন খালেদ চৌধুরী যিনি ১৯৬৭ সালে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠচক্র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১২নং আসামি চট্টগ্রামের ভূপতিভুষণ (মানিক) চৌধুরীর অনুসারি। তিনি বলেন, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারির পর যখন রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো, তখন থেকেই বঙ্গবন্ধু স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ ছাড়া দ্বিতীয় কোন বিকল্প নেই।

এসময় বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ১২নং আসামি, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চট্টগ্রামের ভূপতিভুষণ চৌধুরীর (মানিক চৌধুরী) মাধ্যমে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জওহরলাল নেহেরু। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মানিক চৌধুরী ত্রিপুরা রাজ্যের তৎকালীন কংগ্রেস নেতা শচীন লাল সিংহ (পরে তিনি এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন) এর মাধ্যমে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। পাকিস্তানে সামরিক শাসন চলার সময়ে বঙ্গবন্ধু জেল থেকে বেরিয়ে মানিক চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে আগরতলা হয়ে নয়াদিল্লী যান। প্রয়াত ভূপতিভুষণ চৌধুরী (মানিক চৌধুরী) জীবদ্দশায় তাকে এ তথ্য জানিয়েছিলেন বলে জানান অধ্যাপক সাহাবউদ্দিন খালেদ চৌধুরী।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ লিখিত ‘আগরতলা মামলা, শেখ মুজিব ও বাংলার বিদ্রোহ’ গ্রন্থে মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহের বর্ণনাতেও বঙ্গবন্ধুর আগরতলা যাওয়ার বিবরণ পাওয়া যায়। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র পন্থায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সম্মতি নিয়ে একটি বিপ্ল¬বী সংস্থা গঠন করা হয়েছিল।
ঐতিহাসিক ছয়দফা দাবির মধ্য দিয়ে স্বায়ত্তশাসন দাবির আগেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলেন। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির আন্ডারগ্রাউন্ড নেতাদের একাধিক বৈঠকে তিনি কয়েক দফা স্বাধীনতার কথা বলেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজনীতির পাশাপাশি সশস্ত্র পন্থায়ও বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ