পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপির আন্দোলন গড়ে উঠলে হেফাজত নেতারা তৃণমূল কর্মীদের ধরে রাখতে পারবেন না এবং ইসলামী দলগুলো ঘরে বসে থাকবে না : অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী
১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ দেশের রাজনীতির গতিধারার টার্নিং পয়েন্ট ধরা হলে ১৯ ডিসেম্বর দলটির ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখা’ নতুন মাত্রা দিয়েছে। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘসহ উন্নয়নসহযোগী দেশগুলোর অব্যাহত চাপ এবং বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর ফের ‘নৌকা মার্কা’য় ভোটের আহŸানে মনে হচ্ছে দেশ জাতীয় নির্বাচনের মহাসড়কে উঠতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ রওশন এরশাদকে ব্যবহার করে তাদের ‘নাচের পুতুল’ জাতীয় পার্টির লাটাই নিজের হাতে রাখার চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটকে ফের গতিশীল করা হচ্ছে। অন্যদিকে বাম ধারার দলগুলোর সমন্বয়ে ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ সক্রিয় রয়েছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করতে কিছু বামদলসহ মধ্যপন্থি সমমনা কয়েকটি দল ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ গঠন করেছে। গতকালও জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ১২টি দলের সমন্বয়ে ‘১২ দলীয় জোট’ গঠিত হয়েছে। এলডিপি ও জামায়াতে ইসলামী পৃথক পৃথকভাবে ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা’র যুগপৎ আন্দোলনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ভোটের রাজনীতিতে ৯২ ভাগ মুসলমানের এ দেশে ইসলামী ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচুর ভোটার সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ডান-বাম-মধ্যপন্থি সকল রাজনৈতিক দল যখন আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে মেরুকরণ প্রক্রিয়ায় তৎপর; তখন ইসলামী ধারার দলগুলো কোন পথে? এ নিয়ে রাজনীতি সচেতন উৎসুক মানুষের যেমন আগ্রহের শেষ নেই; তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে আলোচনা, সমালোচনা বিতর্ক চলছে। এমনো তর্ক-বিতর্ক চলছে যে, ইসলামী ধারার দলগুলো কি জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার কর্মসূচিতে থাকবে; নাকি জাতীয় পার্টির মতো ৫/১০টি আসনের লোভে নীতিনৈতিকতা বিকিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ‘নাচের পুতুল’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে? কারণ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম ব্যক্তি স্বার্থে ‘নগদ’ পাইয়ে দেয়ার কৌশলে ইসলাম ধারার দলগুলোর ‘হাব’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
দেশে বর্তমানে ইসলামি ধারার রাজনৈতিক দলের সংখ্যা কত তা নিরূপণ করা দুরুহ। নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামি ধারার দলের সংখ্যা ১০টি। বড় কিছু ইসলামি দলের পাশাপাশি প্যাড-সর্বস্ব অসংখ্য ইসলামি দল গজিয়ে উঠেছে দেশের রাজনীতিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) শায়খুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হক এমনকি মুফিত আমিনীর সময়েও দেশের রাজনীতিতে ইসলামী ধারার দলগুলোর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও এখন ইসলামি দলগুলোর নেতারা সব সময় সুযোগ-সুবিধার রাজনীতিতেই বেশি মনোযোগী। মূলত সুযোগ-সুবিধার হিসাব মেলাতে গিয়ে ইসলামি দলগুলোতে অনৈক্য দৃশ্যমান হয়। এক নেতার সুবিধার রাজনীতির পেছনে হাজার হাজার সমর্থককে অকাতরে ভোল পাল্টাতেও সময় লাগছে না। ইসলামি দলগুলোর অনৈক্য অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে বড় স্কেলে হেফাজতে ইসলাম মাঠে আসে ২০১৩ সালে। কিন্তু সেই অরাজনৈতিক সংগঠনটি এখন আদর্শের চেয়ে পর্দার অন্তরালে সুবিধার পেছনে হাঁটছে। সেই হাঁটা কখনো সরকারের পক্ষে আবার কখনো সরকারের বিপক্ষে গেছে।
ইসলামী দলগুলো কোন পথে যাচ্ছে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, শাপলা চত্বরের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর দেখা গেল হেফাজতের নেতারা পর্দার আড়ালে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে ফেললেন ভয়ে বা লোভে। পরে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমী জননী’ উপাধি দিয়ে নিজেরা সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন। এদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কিছু ইসলামী দলের নেতা। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর কেন্দ্র করে তাদের সঙ্গে ফের সংঘাত বাঁধলে হেফাজতের কয়েকজন আলেমকে গ্রেফতার করা হয়। এখন বিএনপির কর্মসূচিতে লাখ লাখ লোক সমাগম সরকারকে ভীতির মধ্যে ফেলেছে। এ অবস্থায় সরকার মনে করছে ইসলামী দলগুলো রাস্তায় নামলে সরকারের মহাবিপদ হবে। সে জন্য তারা হেফাজতের মাধ্যমে তাদের (ইসলামী দল) নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। হেফাজতের নেতারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করলেও বিএনপি যদি রাজপথ কাঁপাতে পারে তাহলে তৃণমূল পর্যায়ের হেফাজত কর্মীরা মাঠে নেমে আসবেন; নেতারা তাদের ধরে রাখতে পারবেন না। আর ইসলামী দলগুলোও মাঠে নামবেন। চরমোনাই পীরের দল যে একবার মাঠে নামে আরেকবার পিছিয়ে যাচ্ছেন; বিএনপির আন্দোলন গড়ে উঠলে তারাও মাঠ ছাড়বেন না। জামায়াত অস্তিত্ব রক্ষায় মাঠে নামবে। আমার বিশ্বাস এ সরকার যেভাবে ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করছে, ইসলামী জলসা বন্ধ করছে তাতে ইসলামী দলগুলো হেফাজতের পরামর্শে ঘরে বসে থাকবে না, জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ে মাঠে নামবে।
দেশের রাজনীতি এখন দুই ধারায় বিভক্ত। একটি ধারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও শরীক দল) চায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতোই পাতানো নির্বাচন করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে। বিএনপিসহ অন্য ধারাটি চায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। দুই ধারাই দেশ-বিদেশে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে দেন-দরবার করছেন; বিদেশি শক্তির সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক মেরুকরণের চেষ্টা এবং জনগণকে নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আরো এক বছর বাকি থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মেরুকরণ দৃশ্যমান হচ্ছে। ছোট-বড় সব দলের মধ্যে জোট গড়া নিয়ে আগ্রহ, উদ্যোগ আর দৌড়ঝাঁপ চলছে। বৈরিতা ভুলে কাছাকাছি আসার উদ্যোগ নিয়েছেন কিছু দলের নেতা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি চেয়েছে, তাদের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে সমমনা ইসলামী দলগুলোকে নিজেদের প্ল্যাটফর্মমুখী করা। অন্যান্য রাজনৈতিক দল নিজেরা পৃথক পৃথক প্ল্যাটফর্ম করে বিএনপির ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত’ কর্মসূচির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গতকাল মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানের জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), সৈয়দ এহসানুল হুদার বাংলাদেশ জাতীয় দল, কে এম আবু তাহেরের এনডিপি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের বাংলাদেশ এলডিপি, জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, আবদুর রকীবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট, মোস্তাফিজুর রহমানের বাংলাদেশ লেবার পার্টি, নুরুল ইসলামের বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, আবুল কাসেমের বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি গতকাল জোট গঠন করেছেন। আবার ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সাইফুদ্দীন আহমেদ মনির ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), খন্দকার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) একাংশ, সাদেক শাওনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ, আজহারুল ইসলামের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী) ও গরিবে নেওয়াজের বাংলাদেশ পিপলস লীগ পৃথক জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর আগে আ স ম রবের জেএসডি, ড. রেজা কিবরিয়া-নুরুল হক নূরের গণঅধিকার পরিষদ, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, সাইফুল হকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জুনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর ভাসানী অনুসারী পরিষদসহ কয়েকটি দল মিলে গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করেছে। সিপিবি, বাসদসহ কয়েকটি বাম দল মিলে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠন করেছে। কিন্তু ইসলামী দলগুলো এখনো নীরব। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামী ধারার বেশির ভাগ দলই চাইছে তাদের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে সমমনা ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা এবং এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ। এ জন্য সমমনা ইসলামী দলগুলো ইতোমধ্যে নিজেদের মধ্যে সংলাপ শুরু করেছে। কেউ কেউ হেফাজতে ইসলামী বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শাপলা চত্বরে গভীর রাতে জনসমুদ্রের ওপর বর্বরোচিত হামলার পর দায়েরকৃত বিপুল সংখ্যক মামলা কাঁধে নিয়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেয়ার জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এসব মামলার আসামি হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে কি-না তা’ এখনো সুস্পষ্ট নয়। তবে যতই দিন যাচ্ছে ইসলামী ধারার কিছু দলের ভ‚মিকা নিয়ে ততই সন্দেহ বাড়ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্তর লেখালেখি চলছে। নেটিজেনদের একজন লিখেছেন, ১৭ ডিসেম্বর হেফাজতের কয়েকজন নেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা কার্যত নিজেদের কিছু সুবিধার প্রত্যাশায় ইসলামী ধারার দলগুলো যাতে বিএনপির জোটে না যায় সেই ‘ঠিকা’ নিয়েছেন। এরা ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের রক্ত পায়ে মারিয়ে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পদপদাবিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এখন যারা মাঝে মাঝে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। এরা আগামীতে ইসলামী দলগুলো যাতে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে মাঠে না নামেন সে নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তবে ইসলামী দলগুলোর একাদিক শীর্ষ নেতা বলেন, ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলেন ক্ষমতায় গেলে তারা মদিনার সনদে দেশা চালাবেন। তা’ বাস্তবে কার্যকর করা হয়নি। ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের মধ্যদিয়ে দেশে তৃতীয় একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটানো সম্ভব। আর দলীয় সরকারের অধীনে যে কখনো সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয় তা গত দুই নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। তাই নিরপেক্ষ সরকার এবং কমিশনের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের জন্য হলেও ইসলামী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
জানা গেছে, ইসলামী দলগুলোর মাঝে আলোচনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং আন্দোলনকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ইসলামী দলগুলোর নেতাদের মতে, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ‘একলা চল’ নীতির ফল ভালো হয়নি ইসলামী দলগুলোর। তাই আগামীতে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনি লড়াইয়ে নামার বিষয়ে আলোচনা করছেন তারা। এদিকে দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়ে বলছে অধিকাংশ ইসলামী দল। তারা বলছেন, ক্ষমতার রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলোর তেমন গুরুত্ব না থাকলেও ভোটের মাঠে তাদের একটা প্রভাব আছে। সঙ্গত কারণে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে ইসলামী দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছে। মূলত পীর সাহেব চরমোনাই’র নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এবার ইসলামী দলগুরোর মাঝে সংলাপের উদ্যোগ নেয়া হয়। দলটির নেতৃবৃন্দ ইতিমধ্যেই ৮টি ইসলামী দলের সাথে বৈঠকে অংশ নিয়ে নির্বাচনী কৌশল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছে। শিগগিরই আরো দু’টি ইসলামী দলের সাথে বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছেন নেতৃবৃন্দ। দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা করছেন।
ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, এনডিএম (ববি হাজ্জাজ), খেলাফত মজলিস (ড. কাদের), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (ওয়াক্কাস), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া শিগগিরই ইসলামী ঐক্যজোট, বিকে মজলিস ও বাংলাদেশ ন্যাপের সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলীয় প্রধান আমীরে শরীয়ত আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী বলেন, একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভ‚মিকা রাখতে হবে। নির্বাচনে সকল দলের অংশ গ্রহণ এবং সবার জন্যে সমান সুযোগ তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ।
অতিসম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত যুব জমিয়তের অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেরই প্রার্থী দেয়ার সক্ষমতা রাখে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি আল্লামা শায়খ যিয়া উদ্দীন বলেন, দলের সাংগঠনিক অবস্থা এখন বেশ ভাল। আমরা চেষ্টা করছি এই শক্তি ও সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করতে। এ লক্ষ্যে আগামী ২৮ জানুয়ারী শনিবার ঢাকায় কর্মী সম্মেলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে এবং এই সম্মেলনকে সামনে রেখে অন্যান্য কিছু সাংগঠনিক জেলায়ও কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা যায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিজেদের মধ্যে কীভাবে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা যায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে সংলাপ হবে কিনা তা নিয়েও আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের বলেন, নানা কারণে ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ একটি প্লাটফর্মে পৌঁছতে পারেনি। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের বিকল্প নেই। ইসলামী দলগুলোর সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দলের সাথে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, যার পূর্বনাম ছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন সম্পর্কিত একটি রুলের রায়ে এই সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ এবং একে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করে।
ইসলামী ঐক্যজোট বাংলাদেশের একটি ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল। দলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯০। দলটির বর্তমান চেয়ারম্যানের নাম আবুল হাসানাত আমিনী। অতিসম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতী ফয়জুল্লাহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন। ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী অজ্ঞাত কারণে উপস্থিত ছিলেন না। এতে দলের অনেক নেতা হতবাক হন। জোটের অপর অংশটি জোটের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রকিবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোটের একটি অংশ ২০ দলীয় জোটে সম্পৃক্ত রয়েছে। আব্দুর রকিবের এ ঐক্য জোটেও কয়েক বছর ধরে কোনো কাউন্সিল হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।