Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পার্বত্যাঞ্চলে খুনোখুনি রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পার্বত্যাঞ্চল আবার অশান্ত হয়ে উঠেছে। একের পর এক খুন ও অপহরণের ঘটনায় পুরো অঞ্চলে জনমনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। বিগত প্রায় পাঁচ মাসে এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দুই পার্বত্য জেলায় নিহত হয়েছেন ১৭ জন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একদিন পর গত শুক্রবার তারই শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া পাঁচজনকে দুর্র্বৃত্তরা ব্রাশফায়ারে হত্যা করেছে। এতে আরো গুলিবিদ্ধ হয়েছেন দশ জন। শক্তিমান চাকমা জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ছিলেন। খুনোখুনির এ ঘটনায় অশান্ত হয়ে উঠেছে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। হত্যাকাÐের জন্য পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফকে দায়ী করেছে অপর দুই আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) ও ইউডিএফ গণতান্ত্রিক দল। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একটি মতলবি মহল পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্ত করে তোলার চেষ্টা করছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাবর্ত্যাঞ্চলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার মতো অবস্থা চলছে।
পাবর্ত্যাঞ্চলে গত কয়েক মাস ধরে যে খুন ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। ঐ অঞ্চলে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। শুধু তারাই নয়, পর্যটন এলাকা হওয়ায় পর্যটকরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রæপের তৎপরতা এবং আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর মধ্যে কেন রেষারেষি ও সংঘাতের সৃষ্টি হলো, তা গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবী রাখে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকলেও এর মধ্যেই পুরো পার্বত্যাঞ্চল অশান্ত ও অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান ও বিষোদগার পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। হত্যাকাÐের মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, শক্তিমান চাকমা হত্যাকাÐ ও তৎপরবর্তী পাঁচ হত্যাকাÐের ঘটনা এবং সংগঠনগুলোর পারস্পরিক দোষারোপের ঘটনা প্রতিহিংসার জন্ম দেবে। এ থেকে আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাবর্ত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পরও কিছু প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়। এতে অনেক মানুষ নিহত হয়েছিল। পাবর্ত্য এলাকার প্রধান তিন সংঘঠনের সমঝোতায় ২০১৫ সালে তা বন্ধ হয়। পরবর্তীতে সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভক্তিও দেখা দেয়। গত বছর ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন দল ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক গঠন করা হয়। এর আগে ২০০৭ সালে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বিভক্ত হয়। ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা থেকে সুধাসিন্ধু খীসার নেতৃত্বে জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা) গঠন করা হয়। এ দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ছিলেন সদ্য খুন হওয়া শক্তিমান চাকমা। তিনি ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বোঝা যাচ্ছে, দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি পারস্পরিক বিদ্বেষের জন্ম দিচ্ছে। শক্তিমানের খুন হওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যকার দোষারোপের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রæপগুলো খুন, গুম, অপহরণের মতো ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সংগঠনগুলোর মধ্যকার কোন্দল এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রæপের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় পাবর্ত্যাঞ্চলে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চল নিয়ে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এবং সন্ত্রাসী গ্রæপগুলোকে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে মদদ দেয়ার বিষয়টি কারো অজানা নেই। এমন কথাও শোনা যায়, পাবর্ত্যাঞ্চলকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে।
শক্তিমান চাকমার খুন, ব্রাশফায়ারে পাঁচ জন হত্যার মাধ্যমে পাবর্ত্য অঞ্চল কেন অশান্ত হয়ে উঠছে তার কারণ খুঁজে বের করা দরকার। এর নেপথ্যে কারা আছে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পারস্পরিক দোষারোপে লিপ্ত হওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না। কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য করাও সমীচিন হবে না। সন্ত্রাসীরা কোথা থেকে কীভাবে অত্যাধুনিক অস্ত্র পাচ্ছে এবং কোথায় সংরক্ষণ করছে তা খুঁজে বের করতে হবে। এ ব্যাপারে যেহেতু আমাদের সেনাবাহিনী সেখানে দীর্ঘদিন কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তাই তাদের সহায়তা কাজে লাগানো যেতে পারে। ধারাবাহিকভাবে সংঘটিত খুনের ঘটনা তদন্ত করে এর নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করতে হবে। সরকারকে এদিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত করতে হবে।
শক্তিমান চাকমার খুন, ব্রাশফায়ারে পাঁচ জন হত্যার মাধ্যমে পাবর্ত্য অঞ্চল কেন অশান্ত হয়ে উঠছে তার কারণ খুঁজে বের করা দরকার। এর নেপথ্যে কারা আছে তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পারস্পরিক দোষারোপে লিপ্ত হওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না। কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত মন্তব্য করাও সমীচিন হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন