Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মার্ক্সবাদী পতাকা আজীবন সমুন্নত রাখবে চীন

দার্শনিক কার্ল মার্ক্সের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভাষণে শি জিন পিং

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি মার্ক্সবাদের মহান পতাকাকে সমুন্নত রাখবে এবং সবসময় এ দর্শন লালন করবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কসের দ্বিশতজন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক ভাষণে এ কথা বলেন শি। ৫ মে জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্কসের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী। ১৮১৮ সালের এই দিনে জার্মানির ট্রায়ারে এ মনীষী জন্মগ্রহণ করেন। মাও সে তুংয়ের নেতৃৃত্বে বিপ্লব সংঘটিত করে ১৯৪৯ সালে চীন রাষ্ট্রীয়ভাবে মার্ক্সীয় নীতি গ্রহণ করে এবং বিশ্বের বৃহত্তম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ২০১২ সালে ক্ষমতায় আরোহণ করা শিকে মাওয়ের পর চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী নেতা হিসেবে অনেকেই বিবেচনা করে থাকেন। গতকাল শি বলেন, পার্টির (কমিউনিস্ট) কোনোভাবেই এর সমাজতান্ত্রিক শেকড় ভুলে যাওয়া উচিত নয়, যেহেতু এটি চীনা জাতির নবজীবনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে দেয়া ভাষণে শি বলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পতাকায় মার্ক্সীয় নীতি খোদাই করা ছিল সম্পূর্ণ সঠিক একটি সিদ্ধান্ত। বিরামহীনভাবে মার্ক্সবাদের চৈনিকীকরণ ও আধুনিকীকরণ সম্পূর্ণ সঠিক। শি নিজ দলের সব সদস্যকে মার্কসের কর্ম বিষয়ে পাঠ ও শিখন থেকে শিক্ষা নেয়ার নির্দেশ দেন। মার্কসের তত্ত¡ আত্মস্থ করাকে ‘জীবনদর্শন’ এবং ‘আত্মিক অভিযাত্রা’ হিসেবে আখ্যা দেন। চীনে গত কয়েক দশকে বাজার অর্থনীতি গ্রহণ করার ফলে দেশটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। তবে দেশটিতে এখনো মার্কসের গভীর প্রভাব রয়েছে। উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন ছাত্ররা মার্ক্স ও লেনিনের তত্ত¡ পড়া শুরু করে এবং কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির জন্য সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদেরও বাধ্যতামূলকভাবে মার্ক্সীয় তত্তে¡র ওপর পড়াশোনা করতে হয়। মার্কসের জন্মদিন উপলক্ষে সপ্তাহখানেক ধরে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়। ‘মার্ক্স ঠিক ছিলেন’ বাণীসহ অসংখ্য প্রচারণায় তরুণ সমাজের উদ্দেশ্যে বার্তা দেয়া হয় যে, জার্মান দার্শনিকের দর্শন আধুনিক চীন এবং এর পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও প্রাসঙ্গিক। তবে চীনে সা¤প্রতিক সময়ে ব্যাপক বৈষম্য দেখা যাচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম এ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ব্যাপক আকারে ভোগবাদ এবং শহুরে অভিজাত ও গ্রামের দরিদ্রদের মধ্যে আকাশ-পাতাল অর্থনৈতিক বৈষম্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশটিতে বর্তমানে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ৩৭০, যা যুক্তরাষ্ট্রের পরই বিশ্বের সর্বোচ্চ। এ বৈপরীত্যের কারণে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি আর মার্ক্সীয় তত্তে¡ আস্থা না রেখে বরং পুঁজিবাদী পথেই হাঁটছে। তবে শি সর্বান্তকরণে দলের প্রতিষ্ঠাকালীন নীতিমালাকে আলিঙ্গন এবং মাও যুগের মতো পাঠ অধিবেশন পুনরায় চালু করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি চীনকে এর বৈপ্লবিক ইতিহাস এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আত্মবিশ্বাস স্থাপনের ওপর জোর দিয়েছেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক অ্যাডভাইজরি প্রতিষ্ঠান ক্রাম্পটন গ্রুপের হেড অব চায়না প্র্যাকটিস জুড বø্যানচেট বলেন, যদিও এটি আমাদের কমিউনিস্ট পরবর্তী প্রচলিত প্রজ্ঞার বিরুদ্ধে যায়, তবে আমার মনে হয় আমাদের এটি মেনে নেয়া শুরু করতে হবে যে, শি জিনপিং আদতে মার্ক্স ও মার্ক্সবাদে বিশ্বাস করেন। বø্যানচেট আরো বলেন, মার্ক্সবাদের ওপর জোর দেয়ায় ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট এবং যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার মতো বিষয়গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের সঙ্গে পার্থক্য নির্দেশ করতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, মার্ক্সকে আরো জোরালোভাবে আঁকড়ে ধরে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যর্থ’ বিকল্প অর্থনৈতিক মডেলের সঙ্গে আরো বেশি বৈপরীত্য প্রদর্শন করতে পারছে। এএফপি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ