Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনা শিপইয়ার্ডে কোস্টগার্ডের জন্য ২টি টাগবোট ও ১৩টি পন্টুন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দেশের উপক‚ল রক্ষী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আধুনিকায়নের লক্ষ্যে খুলনা শিপইয়ার্ডে ২টি বড় মাপের টাগ এবং ১৩টি পন্টুন নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছেন কোষ্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী এনবিপি, ওএসপি, বিসিজিএম, বিসিজিএমএল, এনডিসি, পিএসসি-বিএন। গতকাল দুপুরে খুলনা শিপইয়ার্ডের রিভার সাইড পার্কে কিললে অনুষ্ঠানে কোষ্ট গার্ডের ডিজি এসব নৌযানের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বলেন, উপকূল রক্ষী বাহিনী দেশের আইন-শৃংখলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকার কোষ্ট গার্ডের আধুনিকায়নসহ এ সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচীগ্রহণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এসব টাগ ও পন্টুন নির্মাণ করা হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতেই বাংলাদেশ কোষ্ট গার্ড একটি আন্তর্জতিক মানের উপক‚ল রক্ষী বাহিনীতে পরিনত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর আনিসুর রহমান মোল্লা (এল) এনইউপি, পিএসসি-বিএন’এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, নৌ-বাহিনী ও কোষ্ট গার্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিল থেকে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব নৌযান নির্মিত হচ্ছে।
কোষ্ট গার্ডের মহাপরিচালক বলেন, দেশের সমুদ্র সীমা নির্ধারিত হওয়ায় বাংলাদেশ এক বিশাল সমুদ্র এলাকার অধিকারী হবার পাশাপাশি আমাদের ‘ব্লু-ইকনমী’র অপার সম্ভবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কোষ্ট গার্ডের ভূমিকা ও গুরুত্ব যথাযথ বিবেচনায় নিয়েই সরকার এ আধাসামরিক বাহিনীটির উন্নয়নে ২০১৫ থেকে ’৩০ সাল পর্যন্ত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়ন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোপূর্বে ৩টি ‘ইনশোর পেট্রোল ভেসেল’ ও ‘সেলফ প্রপেলড ফ্লোটিং ক্রেন’ এর নির্মাণ কাজ শুরুর পরে গত নভেম্বরে হাইস্পীড বোট-এর নির্মাজ শুরু হয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ডে। চলতি বছরের মধ্যে এসব নৌযানের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার সম্ভবনা রয়েছে। এসব নৌযান কোষ্ট গার্ডের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এর ধারই ধরাবাহিকতায় নতুন ২টি টাগবোট ছাড়াও ১৩টি পন্টুন নির্মাণ কাজের সূচনা হল।
কোষ্ট গার্ডের মহা পরিচালক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃতপ্রায় খুলনা শিপইয়ার্ডকে ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে যে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন, তা প্রমাণিত হয়েছে। খুলনা শিপইয়ার্ড আজ দেশের গর্ব। পাশাপাশি তিনি এ প্রতিষ্ঠান আজ দেশের অভ্যন্তরীন নৌ নির্মাণ শিল্পে যে অবদান রাখছে তাকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিয়ে যাবারও আহবান জানান। তিনি বলেন, কোরিয়ার ডাইউ শিপ বিল্ডার্স মাত্র ৬ মাসে সাড়ে ৪ লাখ টন ক্ষমতার অয়েল ট্যাংকার তৈরী করছে। আমরা ততটা না পারলেও আরো দ্রুত যেন নৌযান নির্মাণ করতে পারি সে বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি কোষ্টগার্ড ও বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর নিয়ন্ত্রনাধীন খুলনা শিপইয়ার্ডের মধ্যে এসব নৌযান নির্মানে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নেদারল্যন্ডের টাগ ও ড্রেজার নির্মান প্রতিষ্ঠান ‘ডামেন’র নকশা ও যৌথ কারিগরি সহায়তায় সাড়ে ৩ হাজার টন লোডেড জাহাজ অপসারন ছাড়াও ১শ’ মিটার দুরবর্তী নৌযানে অগ্নি নির্বাপন এবং বন্দর ও পোতাশ্রয়ে দূষন প্রতিরোধী স্প্রে নিক্ষেপন ক্ষমতা সম্পন্ন এ দুটি টাগ বোট নির্মিত হচ্ছে। প্রায় ১শ’ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৫ ফুট প্রস্থ এসব টাগ বোটের ড্রাফট প্রায় ১৫ ফুট। ২ হাজার ৫০০ অশ্ব শক্তির দুটি করে আমেরিকার ‘ক্যাটার পিলার’ কোম্পানীর মূল ইঞ্জিন সমৃদ্ধ এসব টাগ ৫৬৫ টন পানি অপসারন করে ঘন্টায় প্রায় ২৪ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম হবে। টাগগুলোতে ১৬ কিলোওয়াটের ২টি করে জেনারেটর ছাড়াও ইকোসাউন্ডার, নেভিগেশনাল রাডার ও জিপিএস সহ অত্যাধুনিক নৌচলাচল সরঞ্জাম সংযোজন করা হবে বলে জানা গেছে। এসব টাগ একসাথে প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার নৌপথ অতিক্রমে সক্ষম হবে। টানা জাহাজগুলো ‘স্কট টাগ’ হিসেবেও ব্যবহৃত হবে বলে জানা গেছে। প্রতিটি টাগে ১৬ জন করে জনবল নিয়োজিত থাকবে। একইসাথে খুলনা শিপইয়ার্ডে প্রায় ১শ’ ফুট দৈর্ঘ্য, ৩০ ফুট প্রস্থ ও ৭ ফুট উচ্চতা স¤পন্ন আড়াই ফুট ড্রাফটের ১৩টি পন্টুন নির্মান কাজের সূচনা হচ্ছে। এসব পন্টুনের প্রতিটিতে ১টি করে ২০ কেভিএ জেনারেটর ছাড়াও অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা থাকবে। অনুষ্ঠানে খুলনা শিপইয়ার্ডের এমডি কমোডর আনিসুর রহমান মোল্লা-বিএন বলেন, এ প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে সাবমেরিন টাগ সহ অত্যন্ত শক্তিশালী টাগ তৈরীর মাধ্যমে যথেষ্ঠ সক্ষমতা অর্জন করেছে। এখন আমরা কোষ্টগার্ডের জন্য আরো শক্তিশালী টাগ নির্মাণ করতে যাচ্ছি। এর ফলে অদুর ভবিষ্যতে দেশ টাগ নির্মাণে সক্ষমতা অর্জন করবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ কোষ্ট গার্ড তার টহল নৌযানসমুহের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীন ও উপক‚লীয় এলাকায় নিয়মিত টহল প্রদান করছে। চোরাচালান ও মাদক বিরোধী অভিযান এবং ইলিশসহ দেশের অভ্যন্তরীন ও উপকূলীয় মৎস্য সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি আইন-শৃংখলা রক্ষায়ও বাংলাদেশ কোষ্ট গার্ড ইতোমধ্যে দেশের মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিপইয়ার্ড

২১ নভেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ