Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই অর্থবছরে খুলনা শিপইয়ার্ডে ১২৫ কোটি টাকা মুনাফা

আয়কর ও ভ্যাট প্রদান ১৮৩ কোটি টাকা

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২২, ১২:০৭ এএম

করোনা মহামাররী চোখ রাঙানিকে পাশে রেখে বাংলাদেশ নৌবাহিনী নিয়ন্ত্রিত খুলনা শিপইয়ার্ড গত দুটি অর্থ বছরে প্রায় ১৮৩ কোটি টাকা আয়কর ও ভ্যাট প্রদানের পরেও প্রায় ১২৫ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। শুধুমাত্র সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানটির বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধ্যবসায় ও নিরলস পরিশ্রমের ফলে এককালের লাগতার লোকশানী এ প্রতিষ্ঠানটির গত দুটি অর্থ বছরে টার্ণওভার ছিল ১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকারও বেশি। আইএসও সনদপ্রাপ্ত খুলনা শিপইয়ার্ড সরকারি বিধি অনুযায়ী শুধু গত অর্থ বছরেই প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা প্রদান করেছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের একাধিক আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের পদকে ভূষিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

শতাধিক কোটি টাকার দায়দেনা ও লোকশানের বোঝা নিয়ে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শী সিদ্ধান্তে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি প্রতিষ্ঠানটিকে। ইতোমধ্যে লাগাতার কয়েকবছর খুলনা শিপইয়ার্র্ড দেশের পশ্চিমাঞ্চলের সেরা করদাতার গৌরব অর্জনেও সক্ষম হয়েছে। গত দুটি অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটির স্টিল ব্যবহারের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নিট সম্পদের পরিমান প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।

মাত্র ৩২ জন সামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে ১ হাজার ৬৭৬ জন বেসামরিক কর্মকর্তাÑকর্মচারী নিরলস পরিশ্রম করে শুধু নৌযান নির্মাণ ও মেরামতেই নয়, অটোমোবাইল ট্রান্সপোর্ট মেরামত, নদ-নদীতে ড্রেজিং ও ভাঙন প্রতিরোধ ছাড়াও ১০ টন পর্যন্ত গান মেটাল ও হোয়াইট মেটাল ঢালাই, যেকোন নৌযানের নকশা, স্টিল স্ট্রাকচারের ফেব্রিকেশন ও নকশা প্রনয়ণ ছাড়াও যেকোন নৌযানের মেরামতও দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করছে।

এ ইয়ার্ডটি ইতোমধ্যে যুদ্ধ জাহাজসহ প্রায় ৮শ’ বিভিন্ন ধরনের নৌযান নির্মাণ ছাড়াও আড়াই হাজারের মেরামতের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে খুলনা শিপইয়ার্ড দেশের মাটিতে সফলভাবে প্রথম যুদ্ধ জাহাজ হিসেবে ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট্ এবং ২টি লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফট্ নির্মাণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে হস্তান্তর করেছে। নৌবাহিনীর জন্য চীনা কারিগরি ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিএসওসি সহযোগিতায় ২য় ব্যাচের আরো ৫টি প্যাট্রোল ক্রাফট্ নির্মাণ করছে খুলনা শিপইয়ার্ড। ইতোমধ্যে ‘বিএনএস শহিদ দৌলত’ নামের একটি যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ শেষে ইয়ার্ডটির সিøপওয়ে থেকে রূপসা নদীতে ভাসান হয়েছে।

খুলনা শিপইয়ার্ডে প্রায় ৩ ফুট দৈর্ঘের ৭শ’ টন উত্তোলনক্ষম ১০টি ট্র্যাকের সøীপওয়ে রয়েছে। এখানের জেটিতে একই সাথে ৮টি নৌযান বার্থিং বা ভেরার ক্ষমতা রয়েছে। বছরে ৪ হাজার টন লৌহজাত সামগ্রী তৈরি করার ক্ষমতা সমৃদ্ধ এ ইয়ার্ডে বিভিন্ন ক্ষমতার একাধিক ওভারহেড ক্রেনসহ মোবাইল ক্রেন এবং ফর্ক লিফটারও রয়েছে। ফেব্রিকেশন সেডসহ সময় বাঁচিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করার লক্ষে প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে অত্যাধুনিক সহায়ক যন্ত্রপাতি দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে।

খুলনা শিপইয়ার্ডের প্লাটারসপ, ফেব্রিকেশন সেড, মেরিন ওয়ার্কসপ, ইলেকট্রিক্যাল ও রেডিও ইলেক্ট্রিক্যাল ওয়ার্কসপ, ফাউন্ডেরী সপ, কার্পেন্ট্রি সপ এবং রাবার ফ্যাক্টরী ছাড়াও ডকিং সেকশন ইতোমধ্যে অত্যাধুনিক মেশিনারীতে সমৃদ্ধ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ৩৩ মিটার উচ্চতা, ১শ মিটার লম্বা দ্বৈত ট্রাক সমৃদ্ধ ফেব্রিকেশন সেড-এ ২০ টন ক্ষমতার দুটি ওভারহেড ক্রেন রয়েছে।

খুলনা শিপইয়ার্ড ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য ছোটÑবড় যুদ্ধ জাহাজ ছাড়াও সার্ভে ভ্যাসেল এবং দেশের মাটিত ইতোমধ্যে ‘সাবমেরিন হ্যান্ডলিং টাগ’ও তৈরি করেছে সফলতার সাথে। এছাড়াও কোস্ট গার্ড-এর জন্যও একাধিক আধা সামরিক নৌযানসহ ফ্লোটিং ক্রেন বোট, টাগ বোট, পন্টুন ও ইনশোর পেট্রোল ভ্যাসেলও নির্মাণ সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি দেশের ৩টি সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষের হেভি ডিউটি স্পীড বোট, পাইলট ভ্যাসেল ছাড়াও একাধিক টাগও নির্মাণ করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড।

এ ব্যাপারে খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর সামসুল আজীজ -বিএন জানান, আমাদের প্রতিটি কর্মী অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেই সব প্রতিকুলতাকে জয় করে প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিচ্ছে। খুলনা শিপইয়ার্ডের এ সফলতা সমগ্র জাতীর সামনে এখন নতুন সম্ভবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। সফলতার ক্ষেত্রে খুলনা শিপইয়ার্ড অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে বলেও জানান তিনি। যা অদুর ভবিষ্যতেই প্রতিষ্ঠানটিকে আরো উচ্চ শিখরে নিয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুই অর্থবছরে খুলনা শিপইয়ার্ডে ১২৫ কোটি টাকা মুনাফা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ