পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিদেশে কর্মরত এককোটির বেশী প্রবাসী বাংলাদেশির পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে। বৈশ্বিক মন্দা এবং বিনিয়োগে স্থবিরতার মধ্যেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মূদ্রার রির্জাভ বৃদ্ধির মূলে রয়েছে বৈদেশিক কর্মসংস্থান। দেশে কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা বাড়লেও উপযুক্ত বিনিয়োগ না থাকায় কর্মসংস্থানের বড় চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বৈদেশিক কর্মস্থানের উপর। তবে সউদি আরব, মালয়েশিয়ার মত বৈদেশিক কর্মসংস্থানের প্রধান বাজারগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের বেশীরভাগই অদক্ষ ও অশিক্ষিত শ্রমিক। তাহলে দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে যে বছরে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী পাস করে বেরিয়ে যাচ্ছে তারা কোথায় কাজ করছে। এই উচ্চশিক্ষিত যুবকদের একটি অংশ সরকারী-বেসরকারী চাকুরীর পিছনে ছুটছে, অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে, কেউ কেউ আত্মকর্ম সংস্থানের চেষ্টা করছে। তবে গতানুৃগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুবকদের এক বড় অংশই বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে দেশের রফতানীমুখী শিল্প কারখানা ও উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে উপযুক্ত দক্ষ শ্রমিক ও জনবলের যথেষ্ট সংকট রয়েছে বলে জানা যায়। বিশেষত রফতানীমুখী গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীগুলোতে কর্মরত উচ্চ বেতনের শ্রমিক-কর্মকর্তাদের একটা বড় অংশই পুরণ হচ্ছে বিদেশ থেকে রিক্রুট করা জনবল দিয়ে। এ এক বিষ্ময়কর, দু:খজনক বাস্তবতা।
দেশের শিল্পায়ণ ও কর্মসংস্থানের উপযোগি জনবল গড়ে তুলতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কার্যত ব্যর্থ হচ্ছে। আমাদের শ্রমিকরা বিদেশে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে, আবার দেশেও প্রতিবেশী দেশের শ্রমিক-কর্মচারীদের চাইতে অনেক কম বেতনে চাকুরী করছে। বিদেশে কর্মরত ১ কোটির বেশী বাংলাদেশি শ্রমিক বছরে ১৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে কর্মরত প্রায় ৪ লাখ বিদেশি শ্রমিক-কর্মকর্তা বছরে নিয়ে যাচ্ছে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশী। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুসারে দেশে কর্মরত একেকজন বিদেশি শ্রমিক আমাদের ২২জন প্রবাসী শ্রমিকের সমান আয় বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বিদেশে চলে যাওয়া টাকার অংক ক্রমে বেড়েই চলেছে। এক দশকেরও কম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমশক্তির বাজার মূলত ভারতীয়দের দখলে চলে গেছে। নানা অজুহাতে উচ্চ বেতনের ভারতীয় শ্রমিকদের নিয়োগ দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে সম্ভবত আশিভাগের বেশী ভারতীয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় দেশ থেকে বিদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমান ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৪৮ হাজার কোটি টাকা বললেও দেশে কর্মরত বৈধ-অবৈধ বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা কত তার সঠিক পরিসংখ্যান কারো হাতেই নেই। এর মানে হতে পারে দেশে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বিভিন্ন গবেষণা জরিপে উপস্থাপিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশী। সঠিক পরিসংখ্যান বা তথ্য উপাত্ত না থাকায় তাদের মাধ্যমে দেশ থেকে চলে যাওয়া রেমিটেন্সের প্রকৃত অংকটি কত তা সঠিকভাবে জানা অসম্ভব। তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেমিটেন্স আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। ভারত ছাড়াও চীন, কোরিয়া, জাপানসহ আরো কয়েকটি দেশের দক্ষ জনশক্তি বাংলাদেশের শিল্প ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে কর্মরত আছে।
লাখ লাখ বাংলাদেশী অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে বলে ভারতীয় রাজনীতিবিদরা প্রায়শ দাবী করে থাকেন। যদিও এর কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। তবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ৫বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স যাচ্ছে তার তথ্য-উপাত্ত ও প্রমানাদি নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। গার্মেণ্টস খাতসহ বিভিন্ন রফতানীমুখী শিল্পখাতে কর্মরত ভারতীয় ও বিদেশি শ্রমিকরা একই স্তরের দেশীয় শ্রমিকের চেয়ে কয়েকগুন বেশী বেতন পেয়ে থাকে বলে জানা যায়। এসব শ্রমিকের বেশীরভাগ দেশে টাকা পাঠাতে বৈধ চ্যানেলের চেয়ে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমকেই বেছে নেয় বলে জানা যায়।অর্থাৎ বিদেশি শ্রমিকদের আয় থেকে কোটি কোটি ডলার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। দেশে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকারের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারলেও দেশীয় শিল্পকারখানায় লাখা লাখ বিদেশি শ্রমিক-কর্মকর্তা নিয়োগের এই বাস্তবতা মেনে নেয়া যায়না। দেশের সরকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি ও বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে বের হচ্ছে। এই বিরাট সংখ্যক উচ্চ ডিগ্রীধারী তরুণরা দেশের চাহিদা পুরণ করতে না পারলে এ ব্যর্থতার দায় দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার উপর বর্তায়। উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি পরামর্শক, ইঞ্জিনিয়ার ও বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি অস্বাভাবিক নয়। তবে রফতানীমুখী শিল্পে ইংরেজীতে কমিউনিকেশন ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তির জন্য ভারতীয় শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীলতা লজ্জাজনক। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। প্রথমত: বিদেশি শ্রমিকদের সংখ্যা এবং তাদের ওয়ার্ক পারমিটের বিষয়ে ডাটাবেজ তৈরী করতে হবে। অবৈধ বিদেশি শ্রমিকরা শুধু দেশের কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির উপরই চাপ সৃষ্টি করছেনা, এ ধরণের বিদেশি শ্রমিক ও অচিহ্নিত জনবল সামাজিক শৃঙ্খলা ও দেশের নিরাপত্তার জন্যও বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। পাশাপাশি দেশের শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের নিরীখে আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি ও শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। আমাদের জনশক্তি আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রধান সম্পদ। এই সম্পদকে কাজে লাগাতে এবং উপযুক্ত পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে তাদের শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ রক্ষায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।