Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৃত্যুর কাছে হার কলেজছাত্র রাজীবের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে রাজীবের মৃত্যু

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম



মৃত্যুর কাছে হার মানলেন তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন। রাজধানীতে দুই বাসের চাপায় হাত হারানোর ১৩ দিন পর গত সোমবার দিবাগত রাতে রাজীব হোসেন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজীবের ময়নাতদন্ত শেষে তিনি বলেন, ২২ বছর বয়সী রাজীবের ডানহাত বিছিন্ন ছিল। মস্তিষ্কের হাড় ভাঙা ছিল। হাড়ের নিচে রক্তজমাট ছিল। এর আগে সোমবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টায় ঢামেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় রাজীবের মৃত্যু হয়।
রাজীবের খালা হ্যাপী আকতার গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, হাসপাতালে সব প্রক্রিয়া শেষ করে লাশ নিয়ে যাওয়া হবে রাজীবের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলে। সেখানে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত করা হবে তাকে। এ সময় ঢামেক হাসপাতালে রাজীবের দুই ছোট ভাই মেহেদি হাসান ও আব্দুল্লাহসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন।
গত সোমবার দিবাগত রাতে রাজীবের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে হাহাকার করে ওঠেন অনেকে। বুকের ভেতর এমন হাহাকার অনুভব করেছেন তার চিকিৎসকেরাও। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের প্রধান ও রাজীবের চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান মো. শামসুজ্জামান কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আপনারা একটু লেখালেখি করেন। এমন মৃত্যু ঠেকানোর দায়িত্ব আমার, আপনার, সমাজের, রাষ্ট্রের। এই কয়দিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজীবের শারীরিক অবস্থার কথা তুলে ধরেন তিনি। তিনি আরো বলেন, রাজীব নেই। আমরা খুব কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু রাজীবের এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, ত্রæটির কারণে এমন মৃত্যু, সেই ত্রæটিগুলো সারানো দরকার। আগেও সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ আহত হয়ে আসতেন। এখন সংখ্যায় অনেক বেশি। এই যে আজ ভর্তি হয়েছে একটা শিশু। জীবন বাঁচাতে তার পা কেটে ফেলতে হলো। গত ৩ এপ্রিল বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন (২১)। হাতটি বেরিয়ে ছিল সামান্য বাইরে। হঠাৎ করেই পেছন থেকে একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিকে গা ঘেঁষে পড়ে। দুই বাসের প্রবল চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শমরিতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজীবকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। সাময়িক উন্নতির পর গত সোমবার থেকে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রাজীবের মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে যায়।
রাজিবের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের রাজীব তৃতীয় শ্রেণিতে থাকাকালে মাকে এবং অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালে বাবাকে হারান। এরপর মতিঝিলে খালা জাহানারা বেগমের বাসায় থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। মহাখালীর তিতুমীর কলেজে স্নাতকে ভর্তি হওয়ার পর যাত্রাবাড়ীতে মেসে ভাড়ায় থেকে পড়াশোনা করছিলেন রাজীব। এর পাশাপাশি তিনি একটি কম্পিউটারের দোকানেও কাজ করছিলেন। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট দুই ভাইয়ের খরচও চালাতে হতো রাজীবকে। রাজীবের হাত বিছিন্ন করে ফেলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ৪ এপ্রিল বিআরটিসি বাসের চালক ওয়াহিদ ও স্বজন বাসের চালক খোরশেদকে (৫০) গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৫ এপ্রিল দু’জনকে আদালতে তোলা হলে তাদের দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। ৮ এপ্রিল দু’জনকে পাঠানো হয় কারাগারে। গত সোমবার দুই আসামির পক্ষ থেকে জামিন আবেদন করা হলেও নামঞ্জুর করেন আদালত।

 



 

Show all comments
  • Adel ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ২:২৭ এএম says : 0
    It should be totally illegal to keep any body parts of a passenger outside the vehicle. In the sixties, I found the writing inside a bus body not to keep hands exposed outside. In this era, it should have been a must for safety reasons. A little but essential carelessness takes away the life and puts the dependents in an uncertain future. Let us follow the rules for safety.
    Total Reply(0) Reply
  • আবু নোমান ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ৩:১৯ এএম says : 0
    এমন মৃত্যু যেন আর কারো না হয়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ