Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মনোহরদীতে স্মরণকালের ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি বিপর্যস্ত ও নিঃস্ব শত শত পরিবার

শিলার সর্বোচ্চ ওজন ৫ কেজি

| প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নরসিংদী থেকে সরকার আদম আলী ও জসিম উদ্দিন : বাংলা বর্ষের প্রথম দিনে মনোহরদীতে শিলাপাতের ঘটনা ছিল স্মরণকালের সবচে ভয়াবহ এবং নজিরবিহীন। মহাবিপর্যস্ত হাজার হাজার মানুষ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, সেদিন মনোহরদীর ৫ টি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে পতিত একেকটি শিলা খন্ডের ওজন ছিল সর্বোচ্চ ৫ কেজি পর্যন্ত। সর্বনি¤œ শিলা খন্ডের ওজন ছিল ১০ গ্রাম পর্যন্ত। তবে বেশীর ভাগ শিলার ওজন ছিল এক কেজি, দেড় কেজি, দুই কেজি, আড়াই কেজি, তিন কেজি, চার কেজি ও পাঁচ কেজি।
প্রবীণজনদের মতে, স্মরণকালের ইতিহাসে তারা এত বড় শিলাপাতের কথা কখনো শোনেনি, দেখেওনি। এছাড়া মোঘল, বৃটিশ, পাক-বাংলা ও বাংলাদেশের ইতিহাসে কোথাও এত বেশী ওজনের শিলাপাতের রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। গ্রামবাসীরা জানিয়েছে, শহরে উন্মাদনায় এক শ্রেণীর মানুষ যখন নববর্ষ উদযাপনে ব্যস্ত ঠিক তখনই মনোহরদীর শতাধিক গ্রামের উপর নেমে আসে অস্বাভাবিক শিলাপাতের এই মহাবিপর্যয়। দীর্ঘ আধা ঘন্টাব্যাপী পতিত শিলার আঘাতে লেবুতলা, খিদিরপুর, চরমান্দালিয়া, কৃষ্ণপুর ও বড়চাপা ইউনিয়নের শত শত বাড়িঘরের টিনের চালা ঝাঁঝরের মতো ফোটা হয়ে যায়। এরপর এই ফোটা দিয়ে বড় বড় শিলা ঘরের ভেতর পড়তে থাকে। এ অবস্থায় মানুষ জান বাঁচানোর জন্য ঘরের ভেতরে থাকা চৌকি ও খাটের নীচে আশ্রয় নেয়। এরপরও বহু মানুষ শিলার আঘাতে রক্তাক্ত জখম হয়। মানুষ জানিয়েছে, আকাশ থেকে ইট খন্ডের মত যখন শিলাপাত ঘটতে থাকে তখন প্রচন্ড আওয়াজে মানুষ ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে। তারা ভাবতে থাকে মাটিতে আকাশ ধসে পড়ছে। ১৫ কিলোমিটার উপর থেকে পতিত ভারী শিলাখন্ডের আঘাতে অনেক বাড়ির বারান্দার শক্ত টিনের চালা নীচের দিকে দেবে গেছে। যেসব ঘরের চালা শক্ত টিন দিয়ে তৈরী সেগুলোর ঢেউ সমান হয়ে মিলিয়ে গেছে।
অবিরাম শিলাপাতে শত শত হেক্টর জমির আধা পাকা বোরো ধান মাটিতে বিছিয়ে গেছে। ধানের শীষ থেকে ধান ঝড়ে গেছে। বড় বড় শিলার আঘাতে কলাবাগান হেলে গেছে ও কলাপাতা ছিড়ে গেছে। কলার কাঁচা ছড়ি থেকে কাঁচা কলা মাটিতে ঝড়ে পড়েছে। কলাগাছের পাতাগুলো চিরিচিরি হয়ে গেছে। গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজির মাঁচা ও জমিগুলোতে লক লক করে বেড়ে উঠে গাছগুলো তুলাধুনো হয়ে গেছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিকে চাষাবাদকৃত পানের বরজগুলোর পানপাতা ঝড়ে খাচা সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। মৌসুমি ফলমূল আম, জাম, জামরুল, কাঁঠাল, লিচু, ঝড়ে পড়েছে। অনেক গাছ-গাছালী পাতাশূণ্য হয়ে পড়েছে। শিলাপাতের তান্ডবে ৫ টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম এক বিধ্বস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। শত শত পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। এখন বৃষ্টি আসলে তারা আর ঘরে বসবাস করতে পারবে না। বাড়িঘর, ক্ষেতের ধান, শাক-সবজি, ফলমূল হারিয়ে বহু সংখ্যক পরিবার নি:স্ব হয়ে গেছে। স্থানীয় খিদিরপুর বাজারের বহু ব্যবসায়ীও নি:স্থ হয়ে গেছে। গত রবিবার নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ লতাফত হোসেন বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর চাকরি বয়সে এ ধরনের শিলাপাত তিনি কোথাও দেখেননি। প্রচন্ড শিলাপাত বাড়িঘর ছাড়াও কৃষির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারীভাবে সাহায্য করতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, নজরবিহীর এ শিলাপাতে মনোহরদী উপজেলার ৬১৮ হেক্টর জমির বোরো ধান শাক-সবজি ও ফলমূল বিনষ্ট হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবার


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ