চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
\ ছয় \
পিতা মাতার মাধ্যমেই মানুষ পৃথিবীতে আগমন করে এ কারণে সন্তান্তের জীবনে পিতা মাতার অবদান অতুলনীয়। হাক্কুল্লাহ বা আল্লাহর হক আদায়ের পর বান্দার হকের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বান্দার হকের মধ্যে পিতা মাতার হক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পিতা মাতার মর্যাদা অনেক উঁচু, যা পবিত্র কুরআনের বর্ণনা থেকে হৃদয়ঙ্গম করা যায়। কেননা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর অধিকারের পাশাপাশি পিতা মাতার অধিকারের বিষয়ে বলা হয়েছে এবং আল্লাহ তা’আলার কৃতজ্ঞতার পাশাপামি পিতা মাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে পিতা মাতার মর্যাদা ও সদাচরণের বিষয়ে আলোচনা করা হলো: পিতা মাতার প্রতি আচরণ ও ব্যবহারে বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন: তোমার রব ফয়সালা করে দিয়েছেন তোমরা তাঁর ইবাদত ছাড়া অন্য কারোর ইবাদাত কর না, পিতা মাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর। যদি তোমাদের কাছে তাদের কোনো একজন বা উভয় বৃদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাহলে তাদেরকে “উহ” পর্যন্তও বল না এবং তাদেরকে ধমকের জবাব দিও না বরং তাদের সাথে সম্মান ও মর্যাদার সাথে কথা বল। আর দয়া ও কোমলতা সহকারে তাদের সামনে বিনম্র থাক এবং দু’আ করতে থাকো এই বলে “ হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া কর,যেমন তারা (দয়া, মায়া, মমতা সহকারে) শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন। আল কুরআনুল কারীমের উপরোক্ত আয়াত দুটি থেকে এ বিষয়ে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়: প্রথমত, আল্লাহ তা’আলার হক আদায়ের পর মানুষের উপর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো পিতা মাতার প্রতি সদাচরণ করা। কেননা পবিত্র কুরআনে আল্লাহর একত্বের পর সর্বপথম নির্দেশই পিতা মাতার সাথে ভালো ব্যবহার এর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পিতা মাতা যখন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন তাদের মেজাজ কিছুটা খিটখিটে হয়ে যেতে পারে এবং বয়সের কারণে তাদের আচরণে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে থাকলে তা স্বাভাবিকভাবে গ্রহন করা। তাদের কথা খুশীমনে মেনে নেয়া। তাদের কোন কথায় বিরক্ত হয়ে জবাবে উহ্ শব্দটি উচ্চারণ না করা অথবা তাদের সাথে এমন আচরণ না করা যাতে তারা উহ্ শব্দটি উচ্চারণ করেন। ধমকের সুরে বা উচু কষ্ঠে বা কর্কশ ভাষায় তাদের সাথে কথা না বলা। আমাদের শৈশবকালের কথা স্মরণ করা যে, তারা আমাদের প্রতি কীরুপ অনুগ্রহ করেছেন। তৃতীয়ত: পিতা মাতার মান সম্মানের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা। কথা বলার সময় তাদের সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখা। বয়সের শেষ পর্যায়ে এসে যখন তারা দূর্বল হয়ে পড়েন তখন তাদের প্রতি বিশেষভাবে নজর দেয়া। বয়সের কারণে তাদের মান অভিমান অনুধাবন করা এবং বিরক্ত হয়ে তাদের সম্মুখে এমন কথা না বলা যা তাদের মান সম্মানের পরিপন্থি হয়। চতুর্থত: আচার আচরণ ও ব্যবহারে তাদের সাথে বিনয়ী ও কোমল স্বভাবের আচরণ প্রকাশ করতে হবে। আনুগত্যের সাথে মাথা অবনত রাখা, তাদের নির্দেশ মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করা এবং পালন করা। বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের খেদমতে নিয়োজিত থাকা; কিন্তু এক্ষেত্রে বিরক্তি, অহমিকা বা অনুগ্রহ প্রকাশ না পাওয়া উচিত। কেননা এ রকম সেবা ও পরিচর্যা আমাদের নিকট তাঁদের প্রাপ্য। তাদের সেবা ও পরিচর্যা করার সুযোগ লাভে আল্লাহর শোকর আদায় করা উচিত।
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন: আর আমি মানুষকে তার পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছে। তা মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।