Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

এমপিরা ক্ষুব্ধ রাস্তাঘাটের বেহাল দশায়

তিন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির মতবিনিময় সভা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সারা দেশে রাস্তাঘাটের বেহাল দশায় ক্ষুব্ধ তিন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে তারা বলেছেন, এলাকায় গেলে মানুষের সামনে মুখ দেখানো যায় না। ভোটারদের সামনে লজ্জায় পড়তে হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে গত রোববার এক মতবিনিময় সভায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ক্ষোভ প্রকাম করে বলেন, মানুষ রাস্তাঘাটের নাজুক অবস্থার কারণ জানতে চায়। নতুন একটি রাস্তা হওয়ার পর ছয় মাস না যেতেই কীভাবে ওই রাস্তা নষ্ট হয়-এলাকার মানুষ তার ব্যাখ্যা চায়। সংসদ সদস্যদের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। রাস্তাঘাটের অবস্থা এত খারাপ যে, জনগণকে কোনো জবাব দেওয়ার ভাষা থাকে না।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভাটি ছিল মূলত বিটুমিনের পরিবর্তে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ নিয়ে। সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান ও এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ মতবিনিময়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, যেসব জেলায়ই যাই, রাস্তাঘাট অনেক খারাপ। মানুষ জানতে চায় রাস্তাঘাট নির্মাণ নিয়ে এসব কী হচ্ছে। যাদের টাকায় আমাদের বেতন হয়, তাদের কী জবাব দেব। তিনি বলেন, প্রকৌশলীরা এখানে বলেছেন, বিটুমিনের চেয়ে কংক্রিটে খরচ বেশি। খরচ বেশি হলে হবে। একটি রাস্তা টেকসই হলে তো তার খরচ বেশি হবেই। সেটা সরকার দেখবে। প্রকৌশলীর দায়িত্ব কাজ করা, খরচ দেখা নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ায় অনেক পরিবর্তন আসছে। এখন অনেক বেশি বৃষ্টি হয়। আর বিটুমিনের প্রধান শত্রæ বৃষ্টি। বিটুমিনের সড়ক নির্মাণ করলে অল্প দিনেই নষ্ট হয়ে যাবে। সড়ক টেকসই রাখতে হলে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের বিকল্প নেই।
পঞ্চগড়ের সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান বলেন, নির্মাণকাজে পুকুর চুরি হয় বলে মানুষ মনে করে। আগে যানবাহন বেশি ছিল না। এখন বেড়েছে। তিনি বলেন, কোন কোন এলাকায় বিটুমিনের সড়ক করা উচিত আর কোন কোন এলাকায় কংক্রিটের সড়ক করা উচিত, আগে সেটা বের করতে হবে। সেজন্য একটি কমিটি করা উচিত। তবে কংক্রিট অনেক মজবুত হয়। যেটা বিটুমিনে হয় না।
চাঁদপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, একটি নতুন রাস্তা হওয়ার পর এক বছরও টেকে না। নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আমার কাছে জানতে চায়-স্যার, নতুন একটি রাস্তা তো অন্তত কয়েক বছর টেকার কথা। এক বছরও কেন যায় না? আমি তাদের কোনো জবাব দিতে পারি না। জনগণ আমাদের সন্দেহ করছে আমরা টাকা মেরে খাচ্ছি কি না। অথচ এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
কুমিল্লা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা রাস্তাঘাট নির্মাণে গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারি না। নানা অনিয়ম হয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গ্রামের রাস্তাঘাটে ট্রাক্টর ঢোকা। ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। অন্যান্য সদস্যরা তাদের বক্তব্যে বলেন, বিটুমিনে রাস্তা নির্মাণ করলে অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়। রাস্তা সংস্কারের নামে নয়-ছয় হয়। কংক্রিটে রাস্তা নির্মাণ করলে সে সুযোগ থাকে না। তবে সংসদ সদস্যদের এ মতের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন প্রকৌশলীরা। বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী বলেন, বিটুমিনে রাস্তা নির্মাণ করলে সেটা অনেক সাশ্রয়ী। কংক্রিটে নির্মাণ করলে খরচ বেশি। তাছাড়া কংক্রিটে সড়ক নির্মাণ করলে সেখানেও অনিয়মের সুযোগ থাকে।
সব পক্ষের মতামত শেষে নিজ কার্যালয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কংক্রিটে সড়ক নির্মাণ কতটা যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাইয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদকে প্রধান করে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হবে। সে কমিটিতে তিন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দুজন করে সদস্য থাকবেন। কমিটির সদস্যরা বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মিল আছে, এমন কয়েকটি দেশ পরিদর্শনে যাবেন। সেসব দেশের রাস্তা কীভাবে নির্মাণ হয়, তা দেখে এসে একটি প্রতিবেদন দেবেন। কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, রাস্তা নির্মাণে খরচ বেশি হলে সেটা সরকার বুঝবে। এটা প্রকৌশলীদের দেখার দায়িত্ব নয়। যেটা লাভজনক, আমরা সেটাই দেখব। রাস্তাঘাট টেকসই দেখতে চাই আমরা। তবে এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা হবে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রীও একই মত পোষণ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এমপিরা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ