Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

এমপিরা সভাপতি থাকবেন না

প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন করতে হাইকোর্টের নির্দেশ
স্টাফ রিপোর্টার : দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সংসদ সদস্যদের সভাপতি পদ বাতিল করে অ্যাডহক কমিটি করে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে দেয়া রুলের শুনানি করে বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১ জুন এই রায় দেন, যার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি গতকাল রোববার প্রকাশিত হয়। রায়ের আদেশ অংশে হাইকোর্ট ১২ দফা নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছে বলে জানান আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। তিনি ওই রায়ের অনুলিপি হাতে পেয়েছেন বলে জানান।
নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণের মধ্যে রয়েছে- দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সংসদ সদস্যদের সভাপতি পদ বাতিল। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কমিটি বাতিল। আইন থেকে বিশেষ কমিটি গঠনের ৫০ ধারা বাতিল। সংশ্লিষ্ট সব আইন ৬০ দিনের মধ্যে সংশোধন করতে বলা হয়েছে শিক্ষা সচিব, আইন সচিব ও ঢাকা বোর্ডকে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩০ দিনের মধ্যে অ্যাডহক কমিটি করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ঠিক করার বিধান তৈরি করতে হবে।
রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ পরিচালনার জন্য গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বিশেষ কমিটি গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ চলতি বছর রিট আবেদনটি করেন। তার যুক্তি, ওই প্রবিধানমালার ৩৯ বিধান অনুসারে অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ ছয় মাস। অথচ ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ এ পর্যন্ত চার বার অ্যাডহক ও দুইবার বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। এটি ৩৯ বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেয়। রুলে ওই কমিটি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর ২০০৯ সালের মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা এর ৫ ও ৫০ বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সম্পূরক আবেদন করেন ইউনুছ আলী।
বিধান ৫ এ গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন বিষয়ে এবং বিধান ৫০ বিশেষ ধরনের গভর্নিং বা ম্যানেজিং কমিটি গঠনের বিষয়ে বলা আছে। রিট আবেদনকারীর যুক্তি ছিল, ওই দুটি বিধান ১৯৬১ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যাদেশের ৩৯(২)(৬) এবং সংবিধানের ১১, ২৬, ২৭, ৩১ ও ৬৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন : (১) কোনো স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য তাহার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এমন সংখ্যক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্বগ্রহণ করিতে পারিবেন যেন ওই এলাকায় অবস্থিত, এই প্রবিধানমালার আওতাভুক্ত নয় এরূপ অন্যান্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ, তাহার এরূপ দায়িত্ব গ্রহণ করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চার এর অধিক না হয়।
(২) উপ-বিধান ১ এর অধীন সভাপতির দায়িত্বগ্রহণের জন্য স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য, তাহার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত যে সকল উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক তাহার উল্লেখসহ লিখিতভাবে এই প্রবিধানমালার অধীন বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট তাহার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিবেন এবং উক্ত অভিপ্রায়পত্র সংশ্লিষ্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানসমূহের সভাপতি হিসেবে তাহার মনোনয়নরূপে গণ্য হবে।
বিধান ৫০ এ রয়েছে: “বিশেষ ধরনের গভর্নিংবডি বা ম্যানেজিং কমিটি-বিশেষ পরিস্থিতিতে বোর্ড এবং সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ ধরনের গভর্নিং বডি বা, ক্ষেত্রমতে ম্যানেজিং কমিটি করা যাইবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে রয়েছে প্রশাসনে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের বিষয়ে।
অনুচ্ছেদ ১১: প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।
সম্পূরক ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ওই দুই বিধান বিষয়ে ৬ এপ্রিল আরেকটি রুল দেয় হাইকোর্ট। এসব রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১ জুন বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেয়। রায়ে হাইকোর্ট আইনপ্রণেতাদের নিজের নিজের নির্বাচনী এলাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনীত হওয়ার বিধানটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে। একইসঙ্গে ২০০৯ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালার বিশেষ কমিটি গঠনের ৫০ বিধানটিও সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হয়। ভিকারুননিসা পরিচালনায় গঠিত বিশেষ কমিটি অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে নতুন করে এডহক কমিটি করে ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে বলা হয় ওই রায়ে।
হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষ ৮ জুন চেম্বার আদালতে গেলে চেম্বার বিচারপতি স্থগিতাদেশ না দিয়ে বিষয়টি শুনানির জন্য ১২ জুন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। কিন্তু বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারকের বেঞ্চ ১২ জুন ‘নো অর্ডার’ দিলে হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এমপিরা সভাপতি থাকবেন না
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ