শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
-পূর্বে প্রকাশিতের পর
মিনারা চলে যাওয়ার পর আসিফ লক্ষ করে টেবিলের ওপর তার পুরাতন জীর্ণ এ্যালবামটি অযত্ন অবহেলা পড়ে আছে। সেটি যেন তাকে দেখে যেন ক্রুর হাসি হাসছে। সে বুঝতে পারে এ্যালবামটি মিনারা বের করে ছবিগুলো দেখেছে। দুশ্চিন্তার পাহাড় মাথায় নিয়ে সে নিজেকে বিছানায় এলিয়ে দেয়। বিয়ের পর এই প্রথমবারের মতো স্ত্রী ব্যতীত ঘরের মধ্যে একাকী বিচরণ করছে। অসহ্য যন্ত্রণা সে বুকের মধ্যে অনুভব করে। মিনারা বাড়িতে যাওয়ার পর মোবাইলটা অফ করে রাখে। দু’দিন পর আসিফ তার স্কুলে যায় খোঁজ নিতে। সে জানতে পারে যে, মিনারা উইদাউট লিভে রয়েছে। কারণটা তার সহকর্মীদেরও অজানা। আর দেরি না করে অফিস শেষে আসিফ মিনারার সঙ্গে দেখা করতে ওদের বাড়িতে ছুটে যায়। ওর বিধ্বস্ত শরীরটা দেখে আসিফের মনটা কেঁদে ওঠে। দু’দিনেই তার চেহারায় যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে। সে তার হাত দুটো ধরে জিজ্ঞাসা করে, কী হয়েছে? মোবাইল বন্ধ কেন। স্কুলেও যাও না যে? কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সূর্যমুখী ফুলের মতো আসিফের মুখের দিকে মায়াবী দৃষ্টিতে অপলকে চেয়ে থাকে মিনারা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে পাল্টা প্রশ্ন করে বসে আসিফকে- তুমি মোমিনকে চেন? “হ্যাঁ চিনি তো। ও আমার ভার্সিটির বন্ধু। তোমার সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছিল তাও জানি।”
: তাহলেও তো ডিভোর্সের কারণটাও জান? সেই ভয়ংকর সত্যটাও?
: কোন সত্যটা ভয়ংকর তা বলতে পারব না। তবে কী কারণে তোমাদের ডিভোর্স হয়েছে তা জানি। রাহাত তোমার সঙ্গে জোরপূর্বক যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। আর এও জানি যে, ওই ঘৃণ্য কর্মে তোমার সম্মতি ছিল না। ওর লাম্পট্যের শিকার হয়েছ তুমি। আর মোমিন তোমার সাথে যা করে তা অবিচার। আর আমি তো সবকিছু জেনেই তোমাকে বিয়ে করেছি। সবকিছু জেনে।
: এত কিছু জানার পরও...?
: হ্যাঁ। আমি সবকিছু জেনেই তোমাকে বিয়ে করেছি। ওগুলো জীবনের বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই আমি সে বিষয়ে কথা বলতে চাইনি।
মিনারার বুকের ভিতরে একটা প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যায়। আসিফকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে তার উচ্চস্বরে কাঁদতে ইচ্ছে করে। আনন্দ অশ্রু তার দুই কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে। আসিফ এতক্ষণে বুঝতে পারে অফিসের ঝামেলায় ক’দিন স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেনি বলেই ও মনে করেছে আমি সত্যটি জেনে গেছি বলেই হয়তো ওর সঙ্গে এমনটি করছি। তাই মিনারা নিজেকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে। ওর কপোলের অশ্রুধারা মুছে দিয়ে আসিফ ওকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে বলে, তুমি এখনও জানতে পারনি মিনারা, আমার বুকের মধ্যে তোমার অবস্থান কোথায়? চল নদীর পাড়ে যায়। আজ আমরা প্রাণভরে সূর্যের বিদায়ক্ষণে মেহেদি রাঙা মেঘের স্বরূপ দেখব। মিনারাও ওকে দু’বাহুর বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে। ছাড়তে চায় না। বুকের হৃদপিন্ডটি আনন্দে নৃত্য করে। শ্বাস-প্রশ্বাসের তপ্ত বায়ু আসিফের বুকের পরে আছড়ে পড়তে থাকে। ওদের হৃদয়ের গভীরে এক ভিন্ন স্বাদের প্রণয়ের উন্মেষ ঘটে। হৃদয়ের পরতে পরতে আজ সীমাহীন আনন্দের ফল্গুধারা। অবশেষে তারা গোধূলিলগ্নে একে অপরকে ভালোবাসায় সিক্ত করে দীর্ঘক্ষণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।