পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : সউদী আরবে পাকিস্তানী শ্রমিকদের স্থান দখল করে নিচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)’র এক রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। পাকিস্তানের ডন অনলাইন গত মঙ্গলবার ‘নাম্বার অব লেবারার্স গোয়িং টু সাউদী অ্যারাবিয়া ড্রপস’ শিরোনামে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। সংবাদে বলা হয়, সউদী আরবে পাকিস্তানী শ্রমিক নিয়োগ ১১ শতাংশ কমে ৪ লাখ ৬০ হাজারে নেমে এসেছে। যদিও ২০০৫ সাল থেকে যে কোনো বছরের তুলনায় অভিবাসী পাকিস্তানিদের সবচেয়ে বড় গন্তব্যস্থল হচ্ছে সউদী আরব।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ‘এশিয়াতে শ্রম অভিবাসন’ শীর্ষক এক নতুন রিপোর্টে বলেছে, ২০১৭ সালে সউদী আরবে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রধান উৎস হিসেবে পাকিস্তানের স্থান দখল করেছে বাংলাদেশ।
২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আংশিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পাকিস্তান থেকে বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য শুধুমাত্র ৪ লাখ ৫০ হাজার জন গেছে এবং এই নিম্নগামী প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের সউদী আরব যাবার হার বৃদ্ধির কারণ হতে পারে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ছয় বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া।
আসিয়ান (এসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশীয় নেশনস) দেশগুলিতে পাকিস্তানি শ্রমিক রফতানি ২০১৫-১৪ অর্থবছরে প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। ২০১৬ সালে আসিয়ান দেশগুলোতে শ্রমিক গিয়েছিল ১০ হাজার ৭৪৩ জন, যার মধ্যে ১০,৬২৫ জনই যায় মালয়েশিয়ায়। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে সেখানে যায় ২০ হাজার ৩৬৯ জন পাকিস্তানি শ্রমিক। শুধুমাত্র ৩৩ জন পাকিস্তানি শ্রমিক সিঙ্গাপুর ও ৮৫ জন ব্রæনেই দারুসসালামে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছিল।
এডিবি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সউদী আরব ও মালয়েশিয়ায় শ্রম নীতির পরিবর্তন নিম্নগামী প্রবণতাকে আরও শক্তিশালী করেছে। সামগ্রিকভাবে ২০১৫ সালে এশিয়ার ১২টি প্রধান দেশ থেকে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত ছিল যা আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।
এশিয়ার ওইসিডির বাইরের প্রধান দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ২০১৫ সাল অপেক্ষা ২০১৬ সালে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) দেশগুলো ৫ লাখ ২৮ হাজার কম এশিয়ান কর্মী গ্রহণ করেছে। ৯ শতাংশ কমে যাওয়া সত্তে¡ও সউদী আরব ২০১৬ সালে ১০ লাখ অধিক শ্রমিক গ্রহণ করে শীর্ষ স্থান বজায় রাখে। ২০১৬ সালে বিদেশী কর্মী হ্রাস পাবার প্রবণতা দেখা যায়। আর তা হতে পারে সউদী আরবের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং একই সঙ্গে চলমান ‘সউদীকরণ’ নীতির কারণে। ২০১১ সালে প্রবর্তিত এ নীতির লক্ষ্য হল বিদেশী কর্মী নির্ভরতা হ্রাস করা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী, অর্থাৎ নিজেদের লোক ছাড়া দেশের বাইরে থেকে আসা যেসব লোক বাস করে, তাদের সংখ্যা গত দু’দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০১৫ সালে বিশ্বের ২৪ কোটি ৭০ লাখ অভিবাসীর মধ্যে আনুমানিক ৩০ শতাংশ বা ৭ কোটি ৫০ লাখ লোকের বসবাস ছিল এশিয়ায়। এশিয়ায় ১৯৯০ সালের হিসেবের ভিত্তিতে ৪ কোটি ৮০ লাখ অভিবাসীর চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি। এই অঞ্চলের অধিকাংশ আন্তর্জাতিক অভিবাসী দক্ষিণ এশিয়া এবং পশ্চিমা এশিয়ার যা নিবন্ধিত অভিবাসীর যথাক্রমে ১৯ এবং ৫১ শতাংশ।
২০১৫ সালে এশিয়ার অভিবাসীদের জন্য ওইসিডি গন্তব্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান ছিল জার্মানি। দেশটি এক বছরের মধ্যে সপ্তম থেকে চতুর্থ স্থানে চলে আসে। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা যুক্তরাজ্যের মতো ঐতিহ্যগত গন্তব্য দেশগুলির তুলনায় এশিয়ান অভিবাসনের জন্য এটা অনেক বেশি।
২০১৫ সালে জার্মানি ২ লাখ ৯ হাজার নতুন এশিয়ান অভিবাসী গ্রহণ করেছে যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ১ লাখ জন বেশি। এর কারণ আফগানিস্তান থেকে অভিবাসী বৃদ্ধির নাটকীয় গতি এবং পাকিস্তান থেকে কম যাবার প্রবণতা। প্রকৃতপক্ষে ২০১৫ সালে ৮৫ হাজার আফগান ও ২৪ হাজার পাকিস্তানি জার্মানি পৌঁছেছেন। তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।
যাইহোক, এই দুটি জাতীয়তা ছাড়াও ভারতীয়দের অভিবাসনের কারণে এশিয়া থেকে জার্মানিতে স্থানান্তর বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। এ দেশটি থেকে অভিবাসন ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছর বৃদ্ধি পেয়েছে।
সউদী আরব পাকিস্তান, ভারত ও আফগানিস্তানে রেমিটেন্সে তার অংশ বৃদ্ধি করেছে। উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে ফিলিপাইনে রেমিটেন্স বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিটেন্স গেছে তিনগুণেরও বেশি।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাকিস্তান, প্রবাসী পাকিস্তানীদের মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগ ‘পাকিস্তান রেমিটেন্স ইনিশিয়েটিভ’ (পিআরআই)কে একটি সফল প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখা হয়। পাকিস্তানে প্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিটেন্সের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে নিজ জন্মস্থান বা নাগরিকত্বের বাইরের দেশে বসবাসকারী আন্তর্জাতিক অভিবাসী ছিল ২৪ কোটি ৪০ লাখ। এই বিশ্বব্যাপী অভিবাসী জনগোষ্ঠীর ৪৩ শতাংশ বা ১০ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী এবং অন্য এশিয়ান দেশগুলি থেকে আগত।
২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এশিয়া থেকে আগত অভিবাসীদের সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আগত অভিবাসীদের তুলনায় বছরে ২ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। ভিয়েতনাম ও পাকিস্তান দ্বিতীয় পর্যায়ের হলেও অভিবাসীদের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে যথাক্রমে চীন, ভারত ও ফিলিপাইন। সূত্র : ডন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।