Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশাবাদ টিকিয়ে রাখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম


অনেক প্রতিবন্ধকতা, নেতিবাচক প্রচারণা ও আশঙ্কা সত্বেও দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৭.৪০ শতাংশ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৭.৬৫ শতাংশে পৌছতে পারে। এই অর্জন সম্ভব হলে গত অর্থবছরের সাথে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পার্থক্য হবে দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ১৪২ ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ১৭৫২ ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানাবিধ সংকট ও চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের চাপা উদ্বেগ ও হতাশা বিরাজ করছে। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম এবং মাথাপিছু আয় ১৪২ ডলার বেড়ে যাওয়ার তথ্য নি:সন্দেহে স্বস্তি ও আনন্দদায়ক। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের কাছে এ সুসংবাদ তুলে ধরেন। তবে চুড়ান্ত সময় পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির এ অগ্রযাত্রা বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশেষত রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত প্রতিবন্ধকতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা শ্লথ করে দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সামনের দিনগুলোতে যাই হোক, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি তার উজ্জ্বল সম্ভাবনা জাগিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় আশাবাদের জায়গা। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার সময়ও বাংলাদেশের অর্থনীতি তার কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছিল। প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রায় দুই দশকের ধারাবাহিকতা বাংলাদেশকে স্বল্পন্নোত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আশাবাদ জাগিয়ে তুলেছে। সম্প্রতি ইউএনডিপি’র প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতির পর যে সংশয় ও দোলাচল দেখা যাচ্ছিল, চলতি বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু গড় আয় বেড়ে যাওয়ার চিত্র থেকে এটা বলা যায়, এর ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন থাকলে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করতে সক্ষম হবে। তবে দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক বাস্তবতা আগামী অর্থবছরের জন্য কোন প্রত্যাশা জাগাতে পারছেনা। একদিকে নির্বাচনী বছরে অস্বাভাবিক বাণিজ্য ঘাটতি, ব্যাংকিং সেক্টরে অর্থসংকট, বেসরকারী বিনিয়োগে মন্দা, রফতানী খাতে নেতিবাচক প্রবণতা, আবাসন খাতে অস্বাভাবিক মন্দা, বৈদেশিক কর্মসংস্থান রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটার টান, রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ইত্যাদি বিষয়গুলোকে সামনে রেখে আগামী দিনে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশাবাদি হওয়া কঠিন। বিশেষত: রাজনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে সরকারের তরফ থেকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া না হলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার সম্ভাবনা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। এ ধরনের আশঙ্কা নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা, বিরোধি রাজনীতিবিদ, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সংকট উত্তরণে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা।
অর্থনীতি ও উৎপাদনব্যবস্থার প্রায় প্রতিটি খাতেই মন্দা বা ডাউন-টার্ন চলছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে সরকারী বেসরকারী ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট ও পাচার হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীলতা, অনিরাপত্তা অর্থনীতিকে সরাসরি আক্রান্ত করেছে। যেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোতে হাজার হাজার কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে, সেখানে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা সত্তে¡ও বাংলাদেশে বিনিয়োগ না হওয়ার জন্য প্রধানত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি ও অবকাঠামোগত দুর্বলতাকেই দায়ী করা হচ্ছে। পদ্মাসেতুসহ বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে সরকার ব্যাপক উদ্যোগ নিলেও দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশয় রয়েই গেছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রত্যাশা ও গণতান্ত্রিক মানদন্ড অনুসৃত না হওয়ার খেসারত জাতিকে নানাভাবে দিতে হয়েছে। পুঁজিবাদের বিশ্বায়ণের এই যুগে কোন দেশ যেমন এককভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনা, তেমনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের অনুসারী কোন দেশের সরকার এককভাবে তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারেনা। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সব দল ও পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মেকাবেলায় বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের জন্য সকল পক্ষের অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের পাশাপাশি দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ণ ও সংঘাত-বৈরীতার রাজনীতির মূলোচ্ছেদ করে টেকসই উন্নয়নের মানদন্ড অনুসরণ করতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনৈতিক


আরও
আরও পড়ুন