Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুদকের দলনিরপেক্ষ ভূমিকা কাম্য

| প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিএনপির ৮ শীর্ষ নেতার অর্থনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নির্বাচনের বছরে এসে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দুদকের এ ধরনের তৎপরতাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবী করছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুদকের এই তৎপরতা লক্ষ্য হচ্ছে বিএনপি নেতাদের নিস্ক্রিয় করে দেয়া। দুদকের অনুসন্ধানের তালিকায় যে ৮ নেতার নাম উঠে এসেছে তারা সকলেই ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। এদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির চারজন সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী নেতা আব্দুল আওয়াল মিন্টু, এম মোর্শেদ খান রয়েছেন। এই ৮জনের একাউন্ট থেকে একমাসে ১২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে যা, সন্দেহজনক বলে মনে করেছে দুদক। দেশের রাজনীতি,জনপ্রশাসনসহ দেশের সামগ্রিক সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে দুর্নীতি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষনা জরিপ রির্পোটে প্রশাসনিক দুর্নীতিকেই বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে কিছু লোক দেখানো কার্যক্রম ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের তেমন কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। শিক্ষাব্যবস্থা, পুলিশসহ রাষ্ট্রের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বড় অংশই আকণ্ঠ দুর্নীতিকে নিমজ্জিত হয়ে দেশের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা কার্যত রুদ্ধ করে দিলেও দুদকের কার্যক্রম যেন বিরোধীদল দমনে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ও কার্যকর তৎপরতা গ্রহণ দুদকের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। গত এক দশকে অনেকগুলো অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। রাষ্ট্রায়াত্ব সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ফার্মাস ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে ব্যাংকগুলোকে কার্যত দেউলিয়া করে ফেলা হয়েছে।শেয়ার বাজার কারসাজি, ডেস্টিনি, হলমার্ক গ্রæপ, বিসমিল্লাহ গ্রæপের অর্থ কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত বলে সন্দেহভাজন অনেকের বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংে কর রির্জাভ চুরির ঘটনার তদন্তে কোন দৃশ্যগ্রাহ্য অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সাথে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল বলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র সাম্প্রতিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিপূর্বেও রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার কথা বলেছিল এফবিআই। সে সব সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার বা তেমন কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উপরন্তু জঙ্গি অর্থায়ণ ও সন্দেহজনক লেনদেন বন্ধের নামে বিভিন্ন সময়ে দুদক, এনবিআর, আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের কর্মকান্ড বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পুঁজি পাচার হয়ে যাওয়ার জন্য প্রভাবশালী মহলের লুটপাট এবং বিনিয়োগে নিরাপত্তাহীনতাকেই দায়ী করা হয়। বিশেষত: দুদকের মত প্রতিষ্ঠানের রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক ভ‚মিকা বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিএনপি নেতারাও ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করছেন। ব্যাংক থেকে তাদের টাকা উত্তোলনের হিসাবে সন্দেহজনক কিছু থাকলে দুদক অনুসন্ধান চালাতেই পারে। তবে দুদক তাদের ব্যাংক হিসাব অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে ভাবে তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যেও নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হকে পারে। আতঙ্ক সৃষ্টি করা নয়, আস্থা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করাই দুদকের কাছে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলা, রায়, জামিন এবং সাজাবৃদ্ধির জন্য দুদকের আপীল ও অতি তৎপরতা থেকে প্রতিয়মান হয়, দুর্নীতি দমনে দদকের ভ‚মিকা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি একটি দুর্যোগময় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের মত প্রতিষ্ঠান দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলনিরপেক্ষ ভ‚মিকা পালনে ব্যর্থ হলে তা দেশের সামগ্রিক সম্ভাবনাকে আরো দুরূহ করে তুলতে পারে। অনেক দেরিতে হলেও স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় পৌছানোর প্রাথমিক যোগ্যতার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এ সময়ে পরবর্তি ধাপ অতিক্রমের রাস্তা যেন ক্রমে সংকুচিত হয়ে পড়ছে। বিনিয়োগ নেই, বৈদেশিক কর্মসংস্থানে মন্দা, তৈরী পোশাক রফতানী খাতে মন্দা, আবাসন খাতে সঙ্কট, ব্যাংকিং সেক্টরে নজির বিহিন অচলাবস্থার এই সময়ে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরী। বিশেষত: নির্বাচনের বছরে নানাভাবে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দুদক যে কোন সন্দেহজনক লেনদেনের খোঁজখবর নিতে পারে। তবে বেছে বেছে বিরোধি দলের নেতা ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে অনুসন্ধানের তালিকায় রাখার ফলে দেশের বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। বিনিয়োগে নিরাপত্তাহীনতা ও আস্থার সঙ্কট দূর করাই এ মুহুর্তে দুদকসহ সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হওয়া উচিত। শীর্ষ বিএনপি নেতা এবং বিএনপি সমর্থক ব্যবসায়ীরা সন্দেহজনক লেনদেনে জড়িত আছেন, এমন প্রতিয়মান হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। তবে হাজার হাজার কোটি টাকার লুটপাট, পাচার ও জালিয়াতির অভিযোগগুলোকে পাশ কাটিয়ে শুধুমাত্র্ বিরোধি দলের নেতাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের অভিযোগ দুর্নীতি দমনে দুদক ও সরকারের নিরপেক্ষতা ও সদিচ্ছাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এ ধরনের বাস্তবতা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট ও অনাস্থা আরো প্রকট করে তুলতে পারে। দুদকের এমন ভ‚মিকা দুর্নীতি দমনে সহায়ক হবেনা। বরং বিনিয়োগের সম্ভাবনাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
৪ জানুয়ারি, ২০২৩
২৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন