Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতার পথে বাংলাদেশ

আর কে চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত হলেও অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্বাধীনতার পর তলাবিহীন ঝুড়ি অভিধায় অভিহিত করা হতো বাংলাদেশকে। সে লজ্জা কাটিয়ে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে আত্মপ্রকাশ করছে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে। স্বল্পোন্নত দেশের থেকে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতার পথেও এগিয়ে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছে বাংলাদেশ।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু যমুনা ও পদ্মাসেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। যমুনা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছিল দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সহায়তায়। ২০১০ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি দাতা সংস্থার অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের চুক্তিতে আবদ্ধ হয় বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্নীতি, সন্দেহ, অবিশ্বাস ও অপবাদ দিয়ে দুই বছর পর সেই চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। পরে বিশ্বব্যাংকের বাইরে অন্যান্য দাতা সংস্থা ও দেশের কাছ থেকে অর্থায়নের চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রেও ফিরতে হয় খালি হাতে। এ ব্যর্থতায় হতাশ না হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন নিজস্ব অর্থায়নে বিশাল এ প্রকল্প বাস্তবায়নের।
এখন ২০১৮ সালে এসে পদ্মাসেতু কোনো স্বপ্ন নয়, এটি একটি বাস্তবতা। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের প্রথমেই সেতুতে গাড়ি চলবে। প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। পদ্মাসেতুর মতো অবকাঠামো খাতের এত বড় প্রকল্প নিজেদের টাকায় বাস্তবায়ন করতে পারা বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই গর্বের ব্যাপার। এটা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছে। ভূখন্ডগত স্বাধীনতা অর্থাৎ আলাদা মানচিত্র, আলাদা পতাকা, আলাদা সংবিধানের গুরুত্ব থাকলেও অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা ছাড়া ভূখন্ডগত স্বাধীনতা অর্থবহ হয় না।
আইনের শাসন, সরকারের আকার, নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা, মুক্তবাজার- মোটা দাগে এ চারটি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিচার করা হয়। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকার, বাণিজ্য স্বাধীনতা ও শ্রমস্বাধীনতা কমাতে সরকারের পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের অবস্থান গতবারের তুলনায় বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল থিংক ট্যাংক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের স্কোর গতবারের অবস্থানের চেয়ে ০ দশমিক ১ পয়েন্ট বেড়ে ২০১৮ সালে ৫৫ দশমিক ১ শতাংশে রয়েছে। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান গতবারের মতো ১২৮তম অবস্থানে অপরিবর্তিত রয়েছে। এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে এগিয়ে রয়েছে ভুটান। সেখানে বলা হয়, দেশের স্কোর গত বারের অবস্থানের চেয়ে শূন্য দশমিক এক পয়েন্ট বেড়ে ২০১৮ সালে ৫৫ দশমিক ১ এক শতাংশে রয়েছে, যা বিচারবিভাগের কার্যকারিতা ও সরকারের সততার কারণে হয়েছে। তবে অর্থনীতিকে মোটা দাগে ‘বদ্ধ’ আখ্যা দিয়েছে। গবেষণায় সম্পত্তির অধিকার, বাণিজ্যস্বাধীনতা ও শ্রমের স্বাধীনতার স্কোর আগের চেয়ে কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি মুক্তবাজার ব্যবস্থায় দেশগুলো কতটা সংগঠিত তা ওই সূচক পরিমাপ করে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্বল অবকাঠামো, দুর্নীতির মহামারী, কম বিদ্যুৎ সরবরাহ ও শ্লথগতির অর্থনৈতিক সংস্কারের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্বের গড় স্কোর হলো ৬১ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে দক্ষিণ এশিয়ার ৪৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম।
৫৪ দশমিক ৫ পয়েন্ট স্কোর নিয়ে ১৩০তম অবস্থানে ভারত, ৫৪ দশমিক ৪ স্কোর নিয়ে ১৩১তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান এবং নেপাল ৫৪ দশমিক এক পয়েন্টে। ৬১ দশমিক ৮ পয়েন্ট স্কোর নিয়ে ভুটান বাংলাদেশের আগে ৮৭তম অবস্থানে আছে। শ্রীলংকা ৫৭ দশমিক ৮ পয়েন্ট নিয়ে ১১১তম অবস্থানে রয়েছে। হংকং, সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, এস্তোনিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাত শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে।
২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত বিশ্বের কাতারে উন্নীত হওয়াকে লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। সমৃদ্ধ ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সে স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে অর্জিত হবে কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনৈতিক


আরও
আরও পড়ুন