Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে কেন এই ধূম্রজাল?

| প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নাজিমুদ্দিন রোডের নির্জন কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কেমন আছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা কী, এ নিয়ে গত চার দিন ধরে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। কারাগারে তাঁর অসুস্থতার বিষয়টি জানাজানি হয়, গত বুধবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানির দিন বিচারিক আদালতে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে হাজির করতে না পারায়। তাঁর শারীরিক অবস্থা এমন পর্যায়ে যে কারাগার থেকে আদালতে তাঁকে হাজির করা যায়নি। এ প্রেক্ষিতে দলটির নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। অসুস্থতার কথা জানতে পেরে গত বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে গেলে সাক্ষাৎ স্থগিত করা হয়। এরপর থেকে তার অসুস্থতা নিয়ে নানা কথাবার্তা আলোচিত হতে থাকে। বিএনপির নেতাদের মনে নানা সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। তারা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না। তারা অতি দ্রæত বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে কারাগারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং তাঁকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি দাবী জানান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত শুক্রবার জরুরী সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। অবিলম্বে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা হচ্ছে তাঁর প্রাপ্য জামিনে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য তাঁকে দেশের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। কারণ তিনি তার চিকিৎসার প্রায় সবই বিদেশে করেছেন। তার ফলোআপ করা অত্যন্ত জরুরী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, নিয়ম অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিলে বিদেশে পাঠানো হবে। তবে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি। ফলে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা সংক্রান্ত বিষয়টি ধোঁয়াশার মধ্যেই রয়ে গেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কোনো সাধারণ কারাবন্দি নন। তিনি এ দেশের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুইবারের বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বিদ্বতা করে কখনো পরাজিত হননি। দেশব্যাপী তার বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি জনগণের সম্পদে পরিণত হয়েছেন। যে মামলায় তাঁকে সাজা দেয়া হয়েছে এবং কারাবরণ করতে হচ্ছে, তা সাধারণ মানুষ ভালভাবে নেয়নি। এমনকি তাঁর জামিন না পাওয়ার বিষয়টিও ভাল দৃষ্টিতে দেখছে না। প্রখ্যাত আইনজীবীরা স্পষ্ট করেই বলেছেন, যে মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে, তা জামিনযোগ্য এবং আপিল করার সাথে সাথে জামিন পেতে পারেন। ইতোমধ্যে তাঁর আইনজীবী ও বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আদালতের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে তাঁর জামিন হচ্ছে না। আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকে তাকে মাইনাস করার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এমন ধারণার জন্ম হয়েছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপি বেগম খালেদা জিয়ার চেয়েও বেশি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আদালত থেকে জামিন পেয়ে স্বপদে বহাল রয়েছেন। এ বিবেচনায় তাঁর জামিন অতি সহজে হয়ে যাওয়ার কথা। তা না হওয়ায়, সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধারনার সৃষ্টি হয়েছে যে, সরকারের হস্তক্ষেপের কারণেই বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাচ্ছেন না। এমনকি তাঁকে নির্জন কারাগারে রেখে একাকীত্ব জীবনের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় যখন তাঁর অসুস্থতার কথা শোনা যায়, তখন তা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কাজেই তাঁর অসুস্থতার বিষয়টি সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের পরিস্কার করা উচিত। তাঁর অসুস্থতা নিয়ে জনমনে যে উদ্বেগ ও বিচলনের সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসন করা অপরিহার্য। পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, কারা চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান গত শুক্রবার রাতে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) ভালো আছেন। ওনার ব্লাড প্রেসার ও সুগার স্বাভাবিক আছে। ওনার হাঁটুতে সমস্যা ছিল, যে কারণে হাঁটতে কষ্ট হয়। এই সমস্যা আগে থেকেই ছিল।’ প্রশ্ন হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়া যদি পুরোপুরি সুস্থ্য থাকেন, তাহলে কারা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাচ্ছে না কেন? কারা চিকিৎসকের কথা মতো, তাঁর হাঁটুর সমস্যায় হাঁটতে কষ্ট হলে তারও চিকিৎসা দরকার। এ চিকিৎসার ফলোআপ দরকার। তা করা না হলে অবস্থার অবনতি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আমাদের কথা হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়া যদি সুস্থ্য থাকেন তা যেমন সকলকে জানানো উচিত, তেমনি অসুস্থ তাকলেও জানানো উচিত। তাঁর সার্বিক পরিস্থিতি জনসাধারণের জানার অধিকার রয়েছে।
জনমনে এখন এ ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ‘যা ইচ্ছা তাই করছে’। তাঁর জামিনের বিষয়টি টালবাহানার মধ্যে রেখেছে। তাকে দীর্ঘ সময় আটক রাখার এক ধরনের অভিপ্রায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বেগম খালেদা জিয়া দেশের বয়োজেষ্ঠ্য একজন বিশিষ্ট নাগরিক এবং অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। তিনি যখন কারাগারে আছেন, তখন তার সুস্থতা, অসুস্থতা, ভাল থাকা, মন্দ থাকা এবং সার্বিক নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্ব সরকারের। এক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তিনি অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা এবং সুস্থতার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যতদিন তিনি কারাগারে থাকবেন, তাঁকে পুরোপুরি সুস্থ রাখতে হবে। তিনি অসুস্থ হলে চিকিৎসা দেশে করবেন নাকি বিদেশে করবেন, তা তাঁর ওপর ছেড়ে দেয়াই ভাল। তার অসুস্থতা নিয়ে অতিকথন ও রাজনীতি না করে দ্রæত যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে জনমনে সৃষ্ট উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিরসন করা জরুরী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২৫ অক্টোবর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন