Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোশত ও মৎস্যে স্বনির্ভরতা অর্জনে সাফল্য

| প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সীমিত কৃষিজমিতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা পুরণে গত চার দশকে এ দেশের কৃষক এবং কৃষিবিদরা তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। কিছু সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কথা বাদ দিলে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে চলেছে। আবাদি জমির পরিমান বাড়ার পাশাপাশি কৃষকের বাম্পার ফলনে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ধান ও আলু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম দেশের খাদ্য চাহিদা পুরণে মূল ভ’মিকা রেখেছে। সেই সাথে আমিষের মূল উৎস হিসেবে মৎস্য, গোশত, পেল্ট্রি ও দুগ্ধ উৎপাদনেও সমান্তরালভাবেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের সংগ্রামী কৃষক ও খামারীরা। দীর্ঘদিন ধরে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমান গরু-মহিষ, ডিম ও দুধ আমদানী করে চাহিদা পুরণ করা হলেও এখন এসব খাত দ্রুত স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে চলেছে । কয়েক বছর আগে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পর গোশতের মূল্যবৃদ্ধি এবং চাহিদা পুরণের বিকল্প পন্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছুটা চিন্তিত হলেও গরু-ছাগল উৎপাদনে বাড়তি উদ্যোগের মধ্য দিয়ে এ সংকট উত্তরণে বেশী সময় লাগেনি। ২০১৬ সালে ঈদুল আজহায় পশুর সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলার মধ্য দিয়ে দেশের পশু খামারিরা আশা জাগিয়ে তুলেছিলেন। সেই থেকে সাফল্যের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। স্বল্প সময়ে ঈদের বাজারে লাখ লাখ গরু-ছাগলের ঘাটতি পুরণে কৃষক ও খামারীদের এই সাফল্যের ধারা অন্যান্য সেক্টরেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে প্রত্যেক নাগরিকের গড়ে দৈনিক ১২০ গ্রাম হিসাবে গত অর্থবছরে ৭১ লাখ ৩৫ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে গোশত উৎপাদিত হয়েছিল ৭১ লাখ ৫৪ হাজার টন, যা’ গড় সাধারণ চাহিদার তুলনায় কিছুটা বেশী। এক দশক আগে ভয়াবহ উপকুলীয় ঘূর্ণীঝড় আইলা ও সিডরে উপকুলীয় বনাঞ্চল ও পশুনম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। সেই বিপর্যয় এবং নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে এক দশকে পশুসম্পদ উন্নয়ন এবং গোশতের চাহিদা পুরণে সক্ষম হওয়ার এই কৃতিত্ব গরু-ছাগল, মহিষ এবং পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত উদ্যোক্তা ও খামারীদের। তবে পোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদনে চাহিদা ও লক্ষ্যমাত্র অর্জনে সক্ষম হলেও দুধের চাহিদা পুরণে এখনো বেশ কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। পোল্ট্রি শিল্পে বার বার অনাকাঙ্খিত দুর্যোগ এবং স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র সত্তেও এই মুহূর্তে এই খাত স্বয়ংসম্পুর্ণ। সারাদেশে ছোট-বড় প্রায় ৭০ হাজার পোল্ট্রি খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এবং অন্তত: ২৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানা যায়। দেশে গোশতের চাহিদা পুরণে প্রায় অর্ধেক অবদান পোল্ট্রি খাতের। গোশত ও ডিমের চাহিদা পুরণে পোল্ট্রি শিল্পের এই সাফল্যকে একটি নিরব বিপ্লব হিসেবে আখ্যা দেয়া যায়। প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে অগ্রসর হলে যথাশীঘ্র দেশে দুধের চাহিদা পুরণের মাধ্যমে এ খাতে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জন সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
উজানে ভারতের বাঁধ নির্মান ও পানি প্রত্যাহারের কারণে আমাদের নদনদীগুলোর বিশাল অংশ নাব্যতা হারালেও গত তিন দশকে দেশের মৎস্য সম্পদ উন্নয়নেও বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। জাটকা সংরক্ষনে সরকারের নানামুখী উদ্যোগে ইলিশ উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে। আভ্যন্তরীণ মিঠাপানির জলাশয়গুলোতে পরিকল্পিত মৎস্য খামার উন্নয়নের মাধ্যমে মৎস্য চাহিদা পুরণ করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপশি চিংড়িসহ হিমায়িত মৎস্য রফতানি দেশের রফতানি আয়ের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের প্রায় দেড়কোটি মানুষ মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন, আহরণ ও বিপণনের সাথে যুক্ত রয়েছে। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য সম্পদসহ ব্লু ইকোনমির বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে মৎস্য রফতানি খাতের আয় কয়েকগুন বাড়ানো সম্ভব। উন্নয়নশীল ও মধ্য আয়ের বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ধান, মৎস্য, পোল্ট্রি এবং প্রাণীসম্পদ উন্নয়নে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। ভারত থেকে গরু আমদানীর উপর নির্ভরশীলতা থেকে স্বনির্ভরতা অর্জনের কৃতিত্বকে স্থায়ী, টেকসই ও সুপরিকল্পিত লক্ষ্যে এগিয়ে নেয়ার কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। আর মাত্র দেড়মাস পরেই পবিত্র রমজান মাস এবং ঈদুল ফিতর। এরপরই আসছে কোরবানির ঈদ। এ সময়ে গোশতের বাড়তি চাহিদা পুরণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাধারণ দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় রেখে গোশতের মূল্য নির্ধারণ ও স্থিতিশীল রাখার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। গত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় আগামী কোরবানির ঈদে স্থানীয় খামারীরাই কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় পশুর চাহিদা পুরণে সক্ষম হবে এই নিশ্চয়তা দেয়া যায়। তবে খোলা সীমান্ত দিয়ে বা চোরাই পথে গরু অনুপ্রবেশের কারণে যেন দেশীয় খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উন্নয়ণে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাসমুহ দূর করতে হবে।



 

Show all comments
  • ৩০ মার্চ, ২০১৮, ৫:৫৫ পিএম says : 0
    এখন বিদেশ থেকে এসব আমদানী করেন,তাহলে মধ্যবিত্তরা ফকির হতে পারবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৎস্য

৩১ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন