Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীমান্তের ওপারে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ উপকূল অঞ্চলে বাড়ছে লবণাক্ততা

৩৬ বছরে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বেড়েছে ২৬.৭ ভাগ

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সীমান্তের ওপারে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে দেশের ছোট-বড় সব নদ-নদীই নাব্য হারিয়ে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপক‚লভাগে লবণাক্ততার পরিধি যেমনি বাড়ছে, তেমনি সুপেয় পানির স্তরও ক্রমশ নিচে নামছে। প্রতিবছরই উপক‚লভাগে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বাড়ছে। স্তরও নিচে নামছে। উজানের প্রবাহ হ্রাসের ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে নোনা পানি বয়ে নিয়ে জোয়ার ক্রমশ উত্তরে ধাবিত হচ্ছে। ফলে প্রতি বছরই নতুন নতুন এলাকাসহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত হচ্ছে। কমছে আবাদযোগ্য জমিসহ সেচাবাদ এলাকাও। বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি জেলার আট লাখ ২৩ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমির মধ্যে বর্তমানে সেচাবাদ হচ্ছে মাত্র এক লাখ ৫৮ হাজার হেক্টরে। এ হিসাব বিএডিসির। নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষি ও পরিবেশসহ সার্বিক পরিস্থিতির জন্য শঙ্কা বৃদ্ধি করে চলেছে। নগর-মহানগরগুলোতেও পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামছে, ফলে সুপেয় পানির সঙ্কটও ক্রমশ ঘনিভ‚ত হচ্ছে।
এককালের ‘ধান-নদীÑখাল এই তিনে বরিশাল’ বলতে যে ভৌগলিক এলাকা বোঝাত, সে ছয়টি জেলা নিয়েই এখন বরিশাল বিভাগ। কিন্তু উজানে পানির প্রবাহ হ্রাসের ফলে এ অঞ্চলের সাগরমুখী নদ-নদীর অনেকগুলোই চরম নাব্য সঙ্কটে অনেক নদ-নদী তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ফলে সাগরের নোনা পানি ক্রমশ উজানে ধাবিতে হয়ে এ অঞ্চলের ফসলি জমিকে ক্রমশ বন্ধ্যা করে দিচ্ছে। সেচ ব্যবস্থা মারাত্মক হুমকির মুখে। এতে করে এ কালের ‘বাংলার শষ্যভাÐার’ খ্যাত সেই বরিশাল ভবিষ্যতে খাদ্য উদ্ধৃত্ত এলাকা থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দীহান মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগণ। ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তরও ক্রমশ নিচে নামছে। সাথে সুপেয় পানির উৎসও সঙ্কুুচিত হচ্ছে।
দেশের মোট ফসলি জমির প্রায় ৩০ শতাংশ উপক‚লীয় এলাকায়। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট-এসআরডিআইয়ের এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, উপক‚ল অঞ্চলের ২০ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমির প্রায় সাড়ে ১০ লাখ হেক্টরই লবণাক্ততার কবলে। তবে এ জরিপ ২০০৯Ñ১০ সালের। গত বছর মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট আরো একটি জরিপ পরিচালনা করলেও তা এখনো প্রকাশিত হয়নি। ইনস্টিটিউটের ২০০৯Ñ১০ সালের জরিপ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পদ্মার উজানে গঙ্গায় ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগে ১৯৭৩ সালে দেশের উপক‚লীয় এলাকায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল আট লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর। ২০০০ সালে তা ১০ লাখ ২০ হাজার হেক্টরে উন্নীত হয়। আর ২০০৯ সালে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টরে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসআরডিআইয়ের মতে, ১৯৭৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ৩৬ বছরে দেশের উপক‚লভাগে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বেড়েছে ২৬.৭ ভাগ। প্রতিষ্ঠানটির মতে, প্রতি বছরই বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার নতুন এলাকা লবণাক্ততায় আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি পুরনো আক্রান্ত এলাকাগুলোতে লবণাক্ততার মাত্রাও ক্রমশ বাড়ছে। ফলে ধানসহ বেশির ভাগ খাদ্য ফসল উৎপাদনই ক্রমশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এর ফলে উপক‚লীয় অঞ্চলে সেচ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ অঞ্চলে সেচ কার্যক্রম বৃদ্ধি করে বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। কারণ উজানের পানিপ্রবাহ হ্রাসের ফলে সাগর থেকে জোয়ারের সাথে নোনা পানি ক্রমশ উত্তরে উঠে আসছে।
এদিকে উজানে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে ভাটিমুখী স্র্রোত হ্রাস পেয়ে ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তরও ক্রমশ নিচে নামছে। বিএডিসির একটি দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, গত বছর জানুয়ারি মাসে বরিশালে যে পরিক্ষামূলক ক‚পে পানির স্তর ছিল ১.০৪ মিটার গভীরে, এবার জানুয়ারিতে তার স্তর ১.২১ মিটার নিচে নেমে গেছে। অথচ এবার ডিসেম্বর মাসে বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে এবং উপক‚লের বেশির ভাগ এলাকাতেই অসময়ের প্রবল বর্ষণ হয়েছে। যা উঠতি আমন ফসলসহ অনেক রবি ফসলেরও যথেষ্ট ক্ষতি করে। আর অগ্রহায়ণের এ অকাল বর্ষণের ফলে ভ‚গর্ভের পানির স্তর যথেষ্ঠ সমৃদ্ধ থাকার কথা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। কিন্তু তার পরও গত বছরের চেয়ে এবার পানির স্তর নিচে নেমেছে ১৬ সেন্টিমিটার।
গ্রাম-গঞ্জের অনেক গভীর নুলক‚পেও এখন পানি উঠছে না। বরিশাল মহানগরীর অবস্থা আরো নাজুক। মহানগরীতে এক হাজার ফুটের কম গভীর নলক‚পগুলোতে দিনের বেলায় পানি উঠছে না।
এককালে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ খ্যাত খাল-পুকুরের নগরী বরিশাল-এ পানির স্তর ক্রমশ আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় নগর জীবনে সঙ্কট ক্রমশ ঘনিভ‚ত হচ্ছে। একদিকে লবণাক্ততা, অপরদিকে স্তর নিচে নেমে যাওয়া এ নগরীর সুপেয় পানির প্রাপ্যতাসহ সুস্থ নগরিক জীবনের জন্য চরম হুমকি হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন সাধারণ নাগরিক সমাজ। অথচ সামান্য বৃষ্টিতেও এ নগরীর বেশির ভাগ এলাকাসহ রাস্তাঘাট পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। অচলবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে নগরজীবনে। পানি ইতোমধ্যেই বরিশালের সুস্থ নগরজীবনকে চরম সঙ্কটে ফেলতে যাচ্ছে। পাঁচ লক্ষাধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ নগরীতে চাহিদার অর্ধেক বিশুদ্ধ পানিও সরবরাহ করতে পারছে না সিটি করপোরেশন।


বাণিজ্য যুদ্ধ হলে কী ক্ষতি হবে
ইনকিলাব ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতি রূপায়ন করতে আমদানির পথে বাধা সৃষ্টি করছেন। সেই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে আন্তর্জাতিক মুক্ত বাণিজ্য কাঠামোর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তারই কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো।
বাণিজ্য যুদ্ধের অর্থ কী?
কোনো দেশ কোনো এক বা একাধিক পণ্য আমদানির উপর কর, শুল্ক বা অন্য কোনো আর্থিক বোঝা চাপালে বাকি দেশগুলিও পালটা পদক্ষেপ নিতে পারে। বিশেষ করে অ্যামেরিকা ও চীনের মতো বিশাল দেশের সংঘাতের জের ধরে গোটা বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য যুদ্ধের আকার নিতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা মোটেই সহজ হবে না।
অতীত দৃষ্টান্ত
১৯৩০-এর দশকে শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের জের ধরে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ বা বিশাল মন্দা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুবার সে বছর শুল্ক সংক্রান্ত নতুন আইন কার্যকর করার ফলে ২০ হাজারেরও বেশি পণ্যের উপর শুল্ক চাপানো হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে যে, এ ক্ষেত্রে শুধু নির্দিষ্ট কিছু পণ্য ও দেশের জন্য শুল্ক চাপানো হচ্ছে।
ট্রাম্প কেন বাণিজ্য যুদ্ধের পথে এগোচ্ছেন?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রতিকূল বাণিজ্য ঘাটতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই তোপ দেগে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সমালোচকদের মতে, এমন সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ফলে তিনি অ্যামেরিকার সার্বিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের স্বার্থ দেখতে পাচ্ছেন না। কারণ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কাঠামো তোলপাড় হয়ে গেলে আখেরে অ্যামেরিকারই ক্ষতি হবে। ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাবে, রপ্তানি কমে যাবে এবং প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পাল্টা পদক্ষেপ
ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ ঘোষণা করলে বাকি দেশগুলিও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। অ্যামেরিকার বিরুদ্ধেও ক্যানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, ব্রাজিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পালটা পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন বাণিজ্য যুদ্ধ এড়াতে দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার চেয়ে বহুপাক্ষিক সমাধানসূত্রের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা।
অ্যামেরিকার ক্ষতি
সব সাবধানবাণী উপেক্ষা করে ট্রাম্প আমদানির উপর বাড়তি শুল্ক চাপানোর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে গেলে, তার পরিণতি অ্যামেরিকার জন্যও শুভ হবে না। যেমন, ইস্পাত আমদানির উপর শুল্ক চাপালে অ্যামেরিকার বাজারেও তার মূল্য বেড়ে যাবে। তার ফলে মার্কিন ইস্পাত কোম্পানিগুলির লাভ হলেও ক্রেতাদের বাড়তি মূল্য গুনতে হবে। যে কোম্পানিগুলো ইস্পাত ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করে, তাদের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
অ্যামেরিকায় ইস্পাত রপ্তানি করতে না পারলে চীন ইউরোপের বাজারে তা আরও সস্তায় বিক্রি করার চেষ্টা করতে পারে। স্বাভাবিক বাণিজ্য ব্যাহত হলে এমন আরও দৃষ্টান্ত দেখা যেতে পারে। সামগ্রিকভাবে এমন অস্বাভাবিক প্রবণতা নানাভাবে সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সা¤প্রতিক নানা সংকট কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন সবে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, তখন নতুন করে এমন বিপদ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে।
আইনি লড়াই
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংগঠন ডাবিøইউটিও সা¤প্রতিক কালে বিশ্ব বাণিজ্যের বিধিনিয়ম স্থির করে এসেছে এবং বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেছে। বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হলে মামলার সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। সব পক্ষ ডাবিøইউটিও-র রায় না মানলে এই সংগঠন অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। এমন কাঠামো তার কার্যকারিতা হারালে ভবিষ্যতে সেই ক্ষতি পূরণ করা সহজ হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জমি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ