Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্ণয় সংক্রান্ত জটিলতা যক্ষ্ণা রোগ

*৮০ শতাংশই শনাক্তের বাইরে থাকছে *বিশেষজ্ঞদের মতে- বড় সমস্যা পর্যাপ্ত জিনএক্সপার্ট মেশিন না থাকা *আজ বিশ্ব যক্ষ্ণা দিবস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দেশে যক্ষ্ণা চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্ণা বা এমডিআর নিয়ন্ত্রণ এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। এখনও এ ধরনের রোগীদের আনুমানিক ৮০ শতাংশই থাকছেন শনাক্তের বাইরে। সকল ধরনের যক্ষ্ণায় চিকিৎসার আওতাবহির্ভূত থাকছেন ৩৩ শতাংশ রোগী। সরকারের জাতীয় যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এমডিআর রোগী শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো, পর্যাপ্ত সংখ্যক জিনএক্সপার্ট মেশিন না থাকা। তাছাড়া সচেতনতার অভাব ও চিকিৎসাব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদী বলে অনেকের পক্ষে নিয়মিত ওষুধ খাওয়া সম্ভব হয় না। অনেকে আবার কিছুদিন ওষুধ খাওয়ার পর কিছুটা সুস্থ অনুভব করলে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে এর সফলতা কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌচ্ছায় না। তাই যক্ষ্ণা চিকিৎসায় সচেতনতার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, এই রোগটি মূলত পিছিয়েপড়া ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বেশি প্রভাব বিস্তার করে। বিশেষ করে, অভিবাসী, শরণার্থী, জাতিগত সংখ্যালঘু, ঝুঁকির প্রবণ এলাকায় এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সেইসব জনগোষ্টির যক্ষ্ণার ঝুকি বেশি যাদের পানযোগ্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই এবং যারা অনুন্নত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত। তাছাড়া যারা তামাক এবং অ্যালকোহলে অভ্যস্ত তাদের এ রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা বেশি।
জাতীয় যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনটিপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে এনটিপির মাধ্যমে দেশে ২ লাখ ৪৪ হাজার ২০১ জন যক্ষ্ণা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। পাশপাশি সরকারি ভাবে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু যক্ষ্ণারোগী শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ১৮৯ জন। দেশে এখন এক্সটেনসিভলি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট রোগীর সংখ্যা মাত্র ১২ জন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলো হলো- শিশু যক্ষ্ণা শনাক্তকরণে জটিলতা, নগরে যক্ষ্ণা রোগ সনাক্তকরণের হার, বয়ষ্ক জনগোষ্ঠী, কর্মজীবী পুরুষ, আধুনিক ডায়াগনসিসের ক্ষেত্রে জিনএক্সপার্ট মেশিনের স্বল্পতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে জনবল সঙ্কট, বেসরকারি পর্যায়ে সম্পৃক্ততার অভাব, শনাক্তকরণকে বাধ্যতামূলক না করা ইত্যাদি। সরকারের পাশপাশি বেসরকারি পর্যায়ে যক্ষ্ণা নিয়ে কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। এ বিষয়ে ব্র্যাকের পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম বলেন, শহরে ও বয়ষ্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে যক্ষ্ণার প্রাদুর্ভাব অনেক বেশী। শহরে যক্ষ্ণা রোগী শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বারোপ প্রয়োজন। বিশেষ করে, বলেন, বস্তি এলাকা, ভাসমান জনগোষ্ঠী, কলকারখানা, কারাগার এবং প্রাইভেট সেক্টরে যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি আারও সম্প্রসারণ প্রয়োজন।
জাতীয় য²া নিয়ন্ত্রন কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টার প্রফেসর ডা. সামিউল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে যক্ষ্ণা নির্ণয় ও নিরাময়ের ক্ষেত্রে যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা জাতীয় যক্ষ্ণা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিরই সাফল্য। এই কর্মসূচির মাধ্যমে রোগনির্ণয়ের হার প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় ৭৭ জন এবং আরোগ্যের হার ৯৫ শতাংশ। তিনি বলেন, এত সাফল্য সত্তেও বিশ্বে যক্ষ্ণার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ৩০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ ঝুঁকি মোকাবেলা ও যক্ষ্ণামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে প্রতিবছর ২৪ মার্চ সারা বিশ্বে যক্ষ্ণা দিবস পালিত হয়ে থাকে। যক্ষ্ণা রোগের ক্ষতিকর দিক বিশেষ করে স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এ দিবসটি পালিত হযে থাকে। মূলতো ১৮৮২ সালের এই দিনে ড. রবার্ট কোচ যক্ষার জীবানু আবিস্কার করেন। পাশপাশি এ রোগ নির্ণয় ও নিরাময়ের পথ উন্মোচন করেন। তাকে স্মরণ করেই এই দিনটিতে যক্ষ্ণা দিবস পালিত হয়ে থাকে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘নেতৃত্ব চাই যক্ষ্ণা নির্মুলে, ইতিহাস গড়ি সবাই মিলে’।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জটিলতা

২৭ জানুয়ারি, ২০২২
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ