Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নানা জটিলতায় এফডিআই আসছে না

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এসঅ্যান্ডপি’র সু-খবর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও জোরালো জিডিপি প্রবৃদ্ধির কল্যাণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের মতোই ‘স্থিতিশীল’ থাকবে বলে সুখবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (এসঅ্যান্ডপি)। বাংলাদেশের ঋণমান দীর্ঘমেয়াদে ‘বিবি’ ও স্বল্পমেয়াদে ‘বি’ বহাল রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা সংস্থাটি, যা গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে। ঋণমানের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বেশ কিছুদিন ধরে বাহ্যিক চাপের মধ্যে রয়েছে। আর এই চাপে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বড় ঘাটতিতে পড়েছে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমছে। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক গতিপথে রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশটির অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে পাবে। বাংলাদেশের জোরালো প্রবৃদ্ধির ধারা গড় আয় বাড়াতে থাকবে এবং বছরজুড়ে বাহ্যিক ঝুঁকি মোকাবিলা করে টিকে থাকবে বলে যে প্রত্যাশা ছিল, রেটিংয়ে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। ২০১০ সালে এসঅ্যান্ডপির কাছ থেকে প্রথমবারের মতো ঋণমান পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ একই রেটিং পেয়ে আসছে।

অর্থনীতির মূল্যায়নের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার একটি দৃঢ় পদক্ষেপে রয়েছে। আগামী তিন বছর দেশটি গড়ে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) অর্জন করবে। রপ্তানি আয় এবং প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এই প্রবৃদ্ধি অর্জনে যথেষ্ট অবদান রাখবে। প্রতিবন্ধকতা হিসেবে এসঅ্যান্ডপি বলছে, ভবিষ্যৎ রাজস্ব পরিস্থিতি জোরদারের জন্য সরকার রাজস্ব উদ্যোগগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে রেটিং আরও উন্নত হতে পারত। রাজনীতির ক্ষেত্রে এ ঋণমান সংস্থার মূল্যায়ন হলো, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক চিত্র প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে এসঅ্যান্ডপির প্রতিবেদনে। আন্তর্জাতিক বাজারের মতো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসায় শ্রম বাজারে গতি সঞ্চার হয়েছে এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের পালে হাওয়া লেগেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে জিডিপির ৫ দশমিক ১ শতাংশ। তবে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের রাজস্ব ঘাটতি ধারাবাহিকভাবে কমে আসবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এসঅ্যান্ডপি। তবে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, অবকাঠামো ঘাটতি ও ব্যবসায় পরিবেশে জটিলতার কারণে বাংলাদেশে কাক্সিক্ষত প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে না বলে সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ। ভালো ঋণমানের জন্য বর্তমানের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭০০ ডলারকে অন্যতম প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে এসঅ্যান্ডপি বলছে, এই মাত্রার আয় দুর্বল ও সংকীর্ণ রাজস্ব ভিত্তি তৈরি করে, যার ফলে বাহ্যিক ধাক্কা মোকাবিলায় রাজস্ব ও মুদ্রা পরিস্থিতির স্থিতিস্থাপকতায় সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়। নিম্ন আয় ও অনেক কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার পরও গত ১০ বছরে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রকৃত মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। এসঅ্যান্ডপি ব্যাংক খাতের ঋণঝুঁকি মূল্যায়নে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে নবম গ্রুপে রেখেছে, প্রথম সর্বোচ্চ ও দশম সর্বনিম্ন। ব্যক্তি খাতের ব্যাংকগুলো ভালো অবস্থানে থাকলেও রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি রয়েছে বলে এসঅ্যান্ডপির মূল্যায়ন। এসঅ্যান্ডপি বলছে, ব্যালান্স অফ পেমেন্টে ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং আমেরিকান ডলারের বিপরীতে টাকার বেশ খানিকটা অবমূল্যায়নের কারণে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ চেয়েছে। সে ঋণ নিয়ে আলোচনা চলছে। আইএমএফের এই ঋণ পাওয়া গেলে এবং সেই অর্থ আর্থিক ও অন্যান্য খাতের সংস্কারে সঠিকভাবে ব্যবহার হলে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। সে ক্ষেত্রে আশা করা যায়, আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব ঘাটতি অনেকটাই কমে আসবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নানা জটিলতায় এফডিআই আসছে না
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ