নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
পরতে পরতে ছড়ানো উত্তেজনা। ক্ষণে ক্ষণে রং বদল হওয়া শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচ। যার শেষটায় মিশে থাকলো হতাশায়। আবারও স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়লো বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের জানুয়ারির সেই বিষণœ বিকেল। কিংবা ৯ বছর পর এই জানুয়ারির হতাশার রাত। ২০১২ ও ২০১৬ সালে দুটি এশিয়া কাপের ফাইনালে হারের ক্ষত। ফাইনালে একটির পর একটি হারের হতাশার স্মৃতিতে যোগ হলো নতুন অধ্যায়। আবার কাছে গিয়েও না পাওয়ার যন্ত্রণায় পুড়ল বাংলাদেশ। সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের এক্কেবারে হাত ছুঁয়ে বেরিয়ে গেল নিদাহাস ট্রফির ঝা-চকচকে ট্রফিটা।
এই নিয়ে ৫টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে গিয়ে একবারও শিরোপা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এর মধ্যে আছে ঘরের মাঠের চারটি ফাইনাল। ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে শেষ পর্যন্ত ২ রানের দুঃখজনক হার সঙ্গী হয় বাংলাদেশের। এর আগে ২০০৯ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে জয়ের সুবাস পেয়েও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গিয়েছিল তারা। ২০১২ এশিয়া কাপের হৃদয় ভেঙে দেওয়া ফাইনালের পর ২০১৬ এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ও সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে হেরেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিদেশের মাটিতে প্রথম ফাইনালে গিয়েও হয়নি ভাগ্য বদল। তবে অধিনায়ক সাকিব দীপ্ত কণ্ঠে শোনালেন আশার বানী, একদিন শিরোপা জিতবে বাংলাদেশ।
এদিন সাকিব কি আড়ালে কেঁদেছেন? ম্যাচ শেষের পুরস্কার বিতরণী। শেষ বলটায় অন্য কিছু হলে এই মঞ্চে আলো কেড়ে নিত তাকেই। সাকিবের হাতেই উঠত চকচকে ট্রফি। কিন্তু বিনোদনের জন্য যার আয়োজন, সেই খেলা কখনো কখনো বড় নির্মমও। বিষণ্নতার আঁধারে ডুবে থাকা সাকিব এলেন। মাইক্রোফোনের সামনে খসখসে এক কণ্ঠস্বর নিয়ে। মুখ খুলতেই টের পাওয়া গেল কাঁপছে গলা। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। বাক্যের খেই হারিয়ে ফেলছেন কখনো কখনো।
গলা কাঁপতেই পারে। এমন একটা ম্যাচের পর এটা না-হওয়াটাই অস্বাভাবিক। পেন্ডুলামের মতো দুলছিল ম্যাচের ভাগ্য। এ ম্যাচ জিততে পারত যে কেউ। সে ম্যাচে শেষ বলে কার্তিকের দুর্দান্ত এক ছক্কায় আরেকটি ফাইনাল থেকে হতাশা নিয়ে ফিরল বাংলাদেশ, ‘একটা ফাইনাল থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়া যায় না। আমরা দুর্দান্ত খেলেছি, যে কেউ ম্যাচটা জিততে পারত। কিন্তু ভারত স্নায়ুর চাপটা সামলেছে ভালোভাবে।’
এমন ম্যাচে স্নায়ুর চাপ পেয়ে বসেছিল সবাইকেই। তাই একাদশে না থাকা তাসকিন, আবু হায়দারের চোখেও জল নামে এ হারে। শেষ ওভারে ভয়ংকর চাপ নিয়ে বল করতে আসা অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকারও উইকেটের মাঝখানে শুয়ে পড়েন। ২০তম ওভারে বল করার ওই চাপটা নিতে হয়েছিল এর আগেই মোস্তাফিজ-রুবেলের কোটা পূরণ হয়ে যাওয়াতেই। সাকিব অবশ্য এমন সিদ্ধান্তকে সঠিক বলেই মানছেন।, ‘আমরা আমাদের সেরা বোলারকেই ১৮ ও ১৯তম ওভারে আনতে চেয়েছি। রুবেল যদি ওই ওভারে ১৫ রান দিত, তাহলেও আমরা ব্যাপারটা সামলে নিতে পারতাম। সে কিন্তু বোলিং লেংথে খুব ভুল করেনি, দীনেশ কার্তিককে কৃতিত্ব দিতে হচ্ছে। সে এল আর প্রথম বল থেকে ছক্কা মারতে শুরু করল। আমরা জানতাম ১৬৬ রান রক্ষা করা কঠিন। কিন্তু আমরা আশাবাদী ছিলাম। সবাই তাদের সেরা দিয়েছে, শতভাগ।’
১৯তম ওভারে রুবেল ২২ রান দিয়েছেন এটাই হয়তো মানুষ মনে রাখবে। কিন্তু আগের তিন ওভারে যে মাত্র ১৩ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন এই রুবেলই। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন দলের সবাই। সাকিব তাই বিশ্বাস রাখেন বারবার এমন হতাশা নিয়ে ফিরবে না বাংলাদেশ, একদিন ট্রফি নিয়ে উল্লাস করবেই বাংলাদেশ, ‘হারতে খারাপ লাগে কিন্তু আমরা ভালো করেছি। আমরা এ থেকেই ইতিবাচক অনেক কিছু শিখতে পারি। একদিন আমরাই জিতব।’
তবে গতকাল বাংলাদেশ কী সত্যিই হেরেছে? জেতেনি লাখো-কোটি বাংলাদেশীর মন?
ফাইনালে বাংলাদেশের হৃদয়ভাঙার ৫ উপাখ্যান
ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ, ২ উইকেটে হার
প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, মিরপুর ২০০৯
এশিয়া কাপ, ২ রানে হার
প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, মিরপুর ২০১২
এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি, ৮ উইকেটে হার
প্রতিপক্ষ ভারত, মিরপুর ২০১৬
ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ, ৭৯ রানে হার
প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, মিরপুর ২০১৮
নিদাহাস টি-২০ ট্রফি, ৬ উইকেটে হার
প্রতিপক্ষ ভারত, কলম্বো ২০১৮
ভারত ইনিংস রান বল ৪ ৬
রোহিত ক মাহমুদউল্লাহ ব অপু ৫৬ ৪২ ৪ ৩
ধাওয়ান ক আরিফুল ব সাকিব ১০ ৭ ০ ১
রায়না ক মুশফিক ব রুবেল ০ ৩ ০ ০
রাহুল ক সাব্বির ব রুবেল ২৪ ১৪ ২ ১
পান্ডিয়া ক সাব্বির ব মুস্তাফিজ ২৮ ২৭ ৩ ০
শঙ্কর ক মিরাজ ব সৌম্য ১৭ ১৯ ৩ ০
কার্তিক অপরাজিত ২৯ ৮ ২ ৩
সুন্দর অপরাজিত ০ ০ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ২, ও ২) ৪
মোট (৬ উইকেট, ২০ ওভার) ১৬৮
উইকেট পতন : ১০৩২ (ধাওয়ান), ২-৩২ (রায়না), ৩-৮৩ (রাহুল), ৪-৮৯ (রোহিত), ৫-১৩৩ (পান্ডিয়া), ৬-১৬২ (সুন্দর)।
বোলিং : সাকিব ৪-০-২৮-১, মিরাজ ১-০-১৭-০, রুবেল ৪-০-৩৫-২, অপু ৪-০-৩২-১, মুস্তাফিজ ৪-১-২১-১, সৌম্য ৩-০-৩৩-১।
ফল : বাংলাদেশ ৪ উইকেটে পরাজিত।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : দীনেশ কার্তিক (ভারত)।
ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট : ওয়াশিংটন সুন্দর (ভারত)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।