পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইতোমধ্যে সকলেই জানেন যে পাশের দেশ ভারতের ত্রিপুরার বিধান সভার নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি অর্থাৎ সিপিএম পরাজয় বরণ করেছে। এর মাধ্যমে ত্রিপুরায় ২০ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের অবসান হলো। মানিক সরকার রাজ্য কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হিসেবে ২০ বছর ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। আমাদের আজকের আলোচনা ত্রিপুরায় কমিউনিস্ট পার্টির ২০ বছরের দুর্গের পতন সম্পর্কে আলোচনা নয়। আমরা আজ আলোচনা করবো মানিক বাবুর অনাড়ম্বর, নির্লোভ, সাধারণ জীবন যাপন সম্পর্কে। সেই সাথে আমরা আরো কয়েকজন ভিনদেশী নেতার জীবন যাপন সম্পর্কে আলোচনা করবো। আমরা দেখাতে চেষ্টা করবো, এইসব নেতা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থেকেও কেমন নির্লোভ এবং সৎ জীবন যাপন করেছেন। এসব পড়লে আপনাদের প্রথমে বিশ্বাসই হতে চাইবে না যে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকেও মানুষ কিভাবে এমন সৎ এবং দুর্নীতি মুক্ত হতে পারে। বাংলাদেশে আজ আমরা চারদিকে শত নয়, যে হাজার হাজার কোটি টাকার ঘুষ, দুর্নীতি এবং লুণ্ঠন দেখছি সেই পটভ‚মিতে এখন যে দু’চারটি চরিত্র আলোচনা করবো সেগুলিকে বাংলাদেশের পটভূমিকায় বাস্তব কোনো চরিত্র বলে মনে হবে না। মনে হবে তারা সব ফেরেস্তাতুল্য।
প্রথমেই আসুন ত্রিপুরার সদ্য ক্ষমতাচ্যুত মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের কাহিনীতে। ভারতের সবচেয়ে কম সম্পদশালী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারস‚ত্রে একটি বাড়ি পেয়েছিলেন বটে, তবে একা নন। ৪৩২ বর্গফুটের সেই টিনশেডের বাড়িটি পেয়েছেন তার বোনের সঙ্গে যৌথভাবে। শহরের বাইরে কৃষ্ণনগরে বাড়িটির অবস্থান । সেদিক থেকে এককভাবে একটি বাড়িরও মালিক নন ২০ বছরের এই মুখ্যমন্ত্রী। তার নতুন আবাস দলীয় কার্যালয়ের অতিথি ভবন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবর অনুযায়ী, দলের সিদ্ধান্তেই তিনি অতিথি ভবনে থাকছেন। টানা ২০ বছর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন মানিক সরকার। একই সঙ্গে রাজ্যের অন্যতম রাজনৈতিক সংগঠন সিপিএমের সভাপতি তিনি। ১৯৯৮ সাল থেকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মানিক সরকারের নিজের কোনও গাড়ি নেই। এখন তার ব্যাংকে যে রুপি গচ্ছিত আছে তা আগের চেয়েও কম। ২০১৩ সালের নির্বাচনের সময় দেওয়া মানিক সরকারের হলফনামা থেকে জানা গেছে, তখন তার ব্যাংক হিসাবে ছিল ৯ হাজার ৭২০ রুপি। সিপিএমের স্টেট পার্টি সেক্রেটারি বিজন ধর এনডিটিভিকে জানান, দলের গেস্ট হাউসের একটি কক্ষে স্ত্রী পাঞ্চালি ভট্টাচার্যকে নিয়ে থাকবেন মানিক সরকার। দলীয় কার্যালয়ের রান্নাঘরে তৈরি খাবারই খাবেন মানিক সরকার। এর মধ্যে কিছু বই, কাপড় ও প্রয়োজনীয় জিনিস ওই কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন মানিক সরকার। তবে সরকার থেকে বরাদ্দ পেলে নতুন বাড়িতে স্থানান্তরিত হতে পারেন তাঁরা। মানিক সরকারের স্ত্রী জানান, মার্ক্স রচনাবলিসহ বেশ কিছু বই রাজ্য সরকারের বীরচন্দ্র স্টেট সেন্ট্রাল লাইব্রেরি ও সিপিএমের দলীয় লাইব্রেরিতে দিয়েছেন তাঁরা। তার হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ মাত্র ১ হাজার ৫২০ রুপি এবং ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা আছে ২ হাজার ৪১০ রুপি। লেনিন রচনাবলী, দাস ক্যাপিটাল, কার্ল মার্কসসহ অনেক বই দিয়েছেন সিপিএমের দলীয় লাইব্রেরিতে। বাংলাদেশের কয়েকটি প্রকাশনার বেশ কিছু বই রেখেছেন নিজেদের কাছে। আগরতলার কৃষ্ণনগরে পাঞ্চালির বাপের বাড়ির একটি ঘরে ঠাঁই পাচ্ছে সেসব গ্রন্থ।
পাঞ্চালি ভট্টাচার্য বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর বাংলো ছেড়ে যাওয়াটা তো কিছুটা কষ্টেরই। এখানকার স্টাফরা কান্নাকাটি করেছে। বাংলোর গাছগুলোর কথা খুব মনে পড়বে।’
কোনোদিন সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেননি মানিক সরকারের স্ত্রী পাঞ্চালি। রিকশা করে যাতায়াত করেছেন, বাজার করেছেন। নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘোরেননি। অন্য পাঁচজন সাধারণ নারীর মতোই সংসার সামলেছেন। এই জীবনযাত্রাই তাকে করে তুলেছে অনন্য। চলতি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যা বেমানান। ভারতের অন্যান্য রাজ্য বা প্রতিবেশী বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এটা হয়তো অলীক কল্পনা। কিন্তু ত্রিপুরার মানিক সরকারের পরিবার তো এমনই। অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারতের সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মানিক। কিন্তু রাজনীতিতে তিনি মানুষের মাঝে হয়ে আছেন রোল মডেল।
\দুই\
মানিক সরকারের কাহিনী তো শুনলেন। কিন্তু এটি কি বিশ্বাস হতে চায়? বাংলাদেশে চারিদিকে চেয়ে যা দেখি এবং যা শুনি তাতে বিশ্বাস হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ঐ যে বলে Truth is stranger than fiction. এবার আরেকটি চরিত্র। নাম কানু সান্যাল। ‘কলকাতার আনন্দ বাজার’, ‘স্টেটসম্যান’, ‘বর্তমান প্রতিদিন’, প্রভৃতি দৈনিক পত্রিকায় কানু সান্যালের মহা প্রয়ানের উপর যে সব সংবাদ এবং মন্তব্য বেরিয়েছে তার সংক্ষিপ্তসার নিন্মরূপ:
মাটির একটি ঘরে জীবনের অবশিষ্ট কয়েকটি বছর কাটিয়ে গেলেন বিপ্লবী কানু সান্যাল। প্রখ্যাত কণ্ঠ শিল্পী মান্না দে’র সেই কালজয়ী গানের একটি লাইন আমার মনে পড়ছে। সেটি হলো, “আমি নিরালায় বসে বেঁধেছি আমার স্মরণ দিন।” কানু সান্যাল নিরালায় বসে তাঁর স্মরণের দিনগুলো পার করেছেন ঠিকই। কিন্তু যখন তার চিরবিদায়ের খবর জানা-জানি হলো, তখন পশ্চিম বঙ্গের একাধিক পত্রিকার ভাষায় ১২ বছরের কিশোর থেকে শুরু করে অশীতিপর বৃদ্ধ পর্যন্ত ছুটে এসেছিলেন এই সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবনের অধিকারী মানুষটিকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে। কানু সান্যাল পশ্চিম বঙ্গের কৃষক-শ্রমিক তথা মেহনতী মানুষের কাছে ছিলেন এক প্রবাদ পুরুষ। তিনি ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তী।
তার সঙ্গে আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও, তার জীবনযাত্রা ছিলো অনুকরণীয়। এমন সাচ্চা কমিউনিষ্ট নেতা আজকাল কল্পনাতীত। সহজ-সরল জীবনযাত্রা বর্তমান কমিউনিষ্টদের মধ্যে স্বপ্নেও ভাবা যায় না। নকশাল নেতা চারু মজুমদারের পুত্র তথা সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটির সদস্য এবং দার্জিলিং জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার বলেন, “কানু সান্যাল” অত্যন্ত জেদি এবং দৃঢ়চেতা মানুষ ছিলেন। অনেকদিন ধরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, কানু সান্যাল চারু মজুমদার এবং সৌরেন বোসের নাম এক সঙ্গে উচ্চারিত হতো।”
কমিউনিষ্ট নেতা হয়েও তিনি ছিলেন জননেতা। সংসদীয় রাজনীতির ক্ষমতায় না থেকেও আদিবাসী ও পিছিয়ে থাকা গ্রামবাসীদের অভিভাবক হয়ে উঠেছিলেন কানু সান্যাল। তাই তাঁর মৃত্যুতে কাঁদছে গোটা গ্রাম। মৃত্যুর খবর পেতেই হাতের কাজ ফেলে সকলে ছুটে এসেছেন আট থেকে আশি সব বয়সের মানুষ। রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন আদিবাসী ও গরীব গ্রামবাসীদের কান্নার রোলেই ভারী হয়ে উঠেছে হাতিঘিষা সিপিআই (এমএল)-র কার্যালয়। এখানেই থাকতেন নকশালবাড়ি আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা অকৃতদার কানু সান্যাল। ৮১ বছর বয়সী এ নেতা মস্তিস্কের রক্তক্ষরণে ভুগছিলেন। শরীরের ডান দিক আংশিক অসাড় হয়ে পড়েছিলো। তার উন্নততর চিকিৎসার জন্য রাজ্য সরকার বহুবার প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু প্রতিবারই তিনি বিনয়ের সঙ্গে নাকচ করে দিয়েছিলেন।
তারা নকশালবাড়িতে কৃষি বিপ্লবের প্রথম তত্ত¡ প্রয়োগ করে গোটা উপমহাদেশে বিপ্লবের আগুন জ্বালান। স্লোগান তোলেন ‘লাঙ্গল যার জামি তার।’ ১৯৬৭ এর ২৩/২৪ মে শুরু হয় রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের আন্দোলন, জমি দখলের সংগ্রাম। নকশালবাড়ি হয়ে যায় অলঙ্ঘ এক অগ্নিকুন্ডু। সেই নকশালবাড়ি আজও আছে। কিন্তু নিভে গেছে আগুন। বেঁচে নেই নকশালবাড়ির সেই বিপ্লবী নেতা চারু মজুমদার।
দু’দশকের উপর সময় পেরিয়ে গেছে এরই মধ্যে। বাংলার নকশাল আন্দোলনের সেই উত্তাল দিনগুলো ফিকে হয়ে এসেছে যখন সমাজতান্ত্রিক আদর্শে অনেক তরুণ অবলীলায় উৎসর্গ করেছিলেন তাদের জীবন। সেই আন্দোলনের নেতাদের অনেকেই আজ নেই, মুছে গেছে রক্তের দাগও। কিন্তু সেই উত্তাল দিনের স্মৃতি এখনও হারিয়ে যায়নি। চারু মজুমদারের মতো নেতাদের ডাকে সে সময় সামাজিক ন্যায়ের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হাজার হাজার তরুণ অনায়াসে ত্যাগ করেছিলেন বাড়িঘর, শিক্ষা, আরাম, আয়েস সবকিছু। আজ চারু মজুমদার নেই। গত হয়েছেন কানু সান্যালও। তবে উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকায় এখনও তার দল সিওআই (এমএল)-এর রয়েছে জনপ্রিয়তা। শিলিগুড়ি থেকে ৮৬ কিলোমিটার দূর এক গ্রামে থাকতেন তিনি।
\তিন\
আরো অনেকের কাহিনী বলার ইচ্ছা আছে। এদের মধ্যে রয়েছেন দুনিয়া কাঁপানো আল কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেন, আফগানিস্তান তথা দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়া কাঁপানো নেতা মোল্লা ওমর, ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আহমেদি নিজাদ, পশ্চিম বঙ্গের প্রাক্তন মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ভারতের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী, পশ্চিম বঙ্গের বর্তমান মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট নেতা কমরেড আবদুল হক, কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা, কমরেড সিরাজ সিকদার প্রমূখ উল্লেখযোগ্য। এখানে আমার সম্মানিত এবং প্রিয় পাঠক ভাইদের অবগতির জন্য জানাতে চাচ্ছি যে আজকের এই কলামে যাদের নাম আমি উল্লেখ করেছি তাদের সকলের আদর্শের সাথে আমি একমত নই। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে এক প্রান্তে আছেন ওসামা বিন লাদেন এবং মোল্লা ওমর এবং অন্য প্রান্তে আছেন কানু সান্যাল, মানিক সরকার, চারু মজুমদার প্রমূখ। দুই প্রান্তে দুই আদর্শ, যা এ পর্যন্ত এক মোহনায় মিলিত হতে পারেনি। আমি এদের একান্ত ব্যক্তিগত জীবনটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যেখানে দেখা গেছে যে এরা এই দুনিয়ার টাকা পয়সা ধন দৌলতের মোহে বিন্দুমাত্র আকৃষ্ট হননি।
এখন আমরা আলোচনা করবো আরেকটি চরিত্র। নাম, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জ্যোতিবসু লোকান্তরিত হওয়ার পর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বুদ্ধদেব বাবু মূখ্যমন্ত্রী হিসেব সরকারী কোষাগার থেকে কোন বেতন গ্রহণ করতেন না। দল থেকে অর্থাৎ কমিউনিষ্ট পার্টি থেকে তাকে একটি মাসোহারা দেয়া হতো। এই মাসোহারার অংক তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। শোনা যায় যে, মূখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে বুদ্ধদেব বাবু পার্টি অফিসেই থাকতেন। এখনকার অবস্থা জানি না, কিন্তু কয়েক বছর আগেও তার ব্যক্তিগত কোন মোটর গাড়ি ছিলো না। জমি-জিরাত বা ঘর-বাড়ির পেছনে তিনি ছোটেন নি। পশ্চিম বঙ্গ সিপিএমের যারা নেতা সেই জ্যোতি বসু, বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রমুখ্য সকলেই নির্লোভ। সেজন্যেই একটানা ৩০ বছর ধরে সিপিএম পশ্চিম বঙ্গে ক্ষমতায় রয়েছে।
আরেকজন হলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। সারা জীবন অকৃতদার এই মানুষটির কোন ব্যক্তিগত সহায় সম্পত্তি নেই। তাই অর্থ বিত্তের পেছনেও তিনি কোনোদিন ছোটেন নি।
একটু বিদেশের দিকে যাচ্ছি। অনেকে হয়তো জানেন না যে, ওসামা বিন লাদেনের ব্যক্তিগত অর্থ সম্পদের পরিমাণ ছিল কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল বিত্ত-বৈভব দিয়ে তিনি তো মধ্যপ্রাচ্যের অনেক শাসকের মতো বাঁদী-দাসী পরিবেষ্ঠিত হয়ে হেরেমে থাকতে পারতেন। অথচ সেই ব্যাক্তি আফগানিস্তানের পাহাড়ের গুহায় সঙ্গী-সাথী পরিবেষ্ঠিত হয়ে একটি বড় থালায় একসাথে রুটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতেন। তার মত ও পথ সম্পর্কে মতদ্বৈধতা রয়েছে, সমালোচনাও রয়েছে। সেদিকে আমি যাচ্ছি না। কিন্তু যেটি আমার কাছে দেখার বিষয় সেটি হলো, তিনি তাঁর এই হাজার হাজার কোটি টাকা বিশ্বের মুসলামানদের কাছে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের থাকা-খাওয়া ট্রেনিং এবং অস্ত্র সংগ্রহের পেছনে তার হাজার হাজার কোটি টাকা নাকি ব্যয় করেছেন। তার কি ঠেকা পড়েছিলো, এমন চরম কষ্টের জীবন বেছে নেয়ার? তিনি তো পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে আরাম আয়েশে দিন গুজরান করতে পারতেন। গ্রেফতার হয়ে বিমান থেকে তার লাশ আরব সাগরের অথৈ পানিতে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ঝুঁকি কেন তিনি নিয়েছিলেন? শুধুমাত্র তার লালিত আদর্শের জন্য।
আরেকজন রাষ্ট্রনায়ক হলেন প্রেসিডেন্ট আহমাদি নিজাদ। যে ব্যক্তি পারমানবিক শক্তি অর্জনের প্রশ্নে অবিচল, যার কারণে আমেরিকা ইরানকে গননার মধ্যে নেয় সেই প্রেসিডেন্ট আহমাদি নিজাদ দস্তরখানায় বসে আহার করেন। তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বাস করতে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। বাস করতেন তিন কামরা বিশিষ্ট তার ছোট্ট বাড়িতে। তাঁর বৈঠক খানায় নাকি ওয়াল টু ওয়াল কার্পেটও ছিল না। অথচ ইরান কার্পেট বা গালিচার জন্য জগদ্বিখ্যাত।
আফগানিস্তানের মোল্লা ওমরকে সেদেশের জনগণ প্রেসিডেন্ট বলতো না, বলতো আমীরুল মুমিনীন। তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা এবং রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকা সত্তে¡ও তিনি নাকি মোটর সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াতেন।
পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী তাঁতের শাড়ি পরেন, মূখ্যমন্ত্রী হওয়া সত্বেও চপ্পল পরে ফটর ফটর করে হাঁটেন, প্রয়োজনে কর্মীদের সাথে সানকি করে ভাত খান। টাকা পয়সার প্রতি তার কোনো লোভ নাই।
কমরেড আব্দুল হক ছিলেন গণিতের যাদুকর। কমরেড সিরাজ সিকদার ছিলেন প্রকৌশলী। কমরেড তোয়াহা ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। আব্দুল হকের ‘পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিষ্ট পাটি’, তোয়াহার ‘পূর্ব বাংলা সাম্যবাদী দল’ বা সিরাজ সিকদারের ‘সর্বহারা পার্টির’ অপারেশনাল পদ্ধতি এবং নামকরণ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু বিপুল মেধা থাকা সত্তে¡ও আজীবন তারা সংগ্রামের পথেই রয়ে গেছেন। পুলিশি হেফাজতে থাকাকালে কমরেড চারু মজুমদারের মৃত্যু হয়েছে। একই ধরণের মৃত্যু হয়েছে সিরাজ সিকদারের। ভিনদেশে বিপ্লব রপ্তানী করতে যেয়ে প্রাণ দিয়েছেন চে গুয়েভারা।
এই ধরণের আরো কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু নিবন্ধটির কলেবর বড় হয়ে যাচ্ছে বলে সেগুলো উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম। বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ বা বিএনপির মধ্যে এই ধরণের ত্যাগী, নির্লোভ, সৎ ও সহজ-সরল নেতা কবে আসবেন? বারান্তরে অন্যদের কাহিনীও আপনাদের খেদমতে পেশ করার ইচ্ছা রাখি। শেষ করছি একটি কবিতা দিয়ে,
“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে,
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।”
Email: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।