বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বি এম হান্নান, চাঁদপুর থেকে : : এককালের খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদী এখন মৃতপ্রায়। নদীতে নেই জোয়ার-ভাটার উত্তাল ঢেউ। অবৈধ দখল আর দূষণে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে ডাকাতিয়া। চলতি শতকের শুরুর দশকেই ডাকাতিয়া বিপন্ন নদীতে পরিণত হয়। নদীর তীরভূমি অবৈধভাবে ভরাট করে স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। ক্রমাগত দখলে নদীটি এখন মরা খালে পরিণত। দু’যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এসব কারণে কমছে পানিপ্রবাহ। প্রমত্তা মেঘনা মোহনা থেকে উৎপত্তি হয়ে চাঁদপুর জেলা শহরকে নতুনবাজার ও পুরাতনবাজার নামে বিভাজন করেছে এ ডাকাতিয়া নদী। শুধুমাত্র শহরের তিন কিলোমিটার নদীর তীরে ১৩৮ বেশি ছোট বড় অবৈধ স্থাপনার কথা স্বীকার করেছেন বন্দর কর্মকর্তা। দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান করা হবে জানান জেলা প্রশাসন। ডাকাতিয়া নদীর তীরবর্তী জমিতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় প্রশস্ততা নেমে এসেছে এক চতুর্থাংশে। দিন দিন সরু হয়ে হয়ে যাওয়ায় নৌচলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে পানিবদ্ধতা। বিভিন্ন স্থানে কিছু ব্যক্তি বাঁধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ করে দিচ্ছে। অনেক স্থানে শুকনো মৌসুমে নদীটি প্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ে। অবৈধ উচ্ছেদ ও সংস্কার না করায় ডাকাতিয়া আক্ষরিক অর্থেই বিপন্ন দশার মুখোমুখি।
অথচ সাপের মতো এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদী চাঁদপুর জেলার ৪টি উপজেলা তথা শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ এবং সদর উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নকে একসময় মায়ের মমতায় জড়িয়ে রাখতো। শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রধান যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল এ নদী। ব্যবসায়ীদের একমাত্র ভরসা ছিল ডাকাতিয়া নদীতে স্বল্প খরচে মালামাল পরিবহন। একসময় এই নদী হয়ে বরিশাল, ভোলা, শরিয়তপুর, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মালামাল পরিবহন করা হতো। কিছু অপরিণামদর্শী মানুষের খামখেয়ালীপনায় নদীর তীর থেকে বালু উত্তোলন, তীরবর্তী বিভিন্ন স্থান দখল ও দূষণের ফলে নদীর অস্থিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। ডাকাতিয়া একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী নদী। এ নদীকে ঘিরে রয়েছে অনেক জনশ্রæতি। লোকমুখে শোনা, একসময় ডাকাতিয়া নদী তীব্র খরস্রোতা ছিল। মেঘনার এই শাখা নদী ডাকাতিয়ায় মেঘনার উত্তাল রূপ ফুটে উঠত। ফলে ডাকাতিয়ার করালগ্রাসে নদীর দুই পাড়ের মানুষ সর্বস্ব হারাত। ডাকাতিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে বহু মানুষের সলিল সমাধিও ঘটেছে। ডাকাতের মতো সর্বগ্রাসী বলেই এর নাম হয়েছে ডাকাতিয়া। অন্যদিকে নামকরণের অপর ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই নদী দিয়ে মগ-ফিরিঙ্গি নৌদস্যুরা নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলায় প্রবেশ করতো। এই নদীতে তাদের মাধ্যমেই ডাকাতি হতো। ডাকাতির উপদ্রব’র কারণে নদীটির নাম ডাকাতিয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তৎকালীন কলকাতাস্থ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাউন্সিলের পক্ষে কোর্ট অব ডিরেক্টর সভার কাছে ১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি পেশকৃত একটি চিঠির মাধ্যমে জলদস্যুদের উপদ্রবের চিত্র পাওয়া যায়। ডাকাতিয়া নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। দৈর্ঘ্য ১৪১ কিলোমিটার (৮৮ মাইল), গড় প্রস্থ ৬৭ মিটার । ডাকাতিয়া নদী মেঘনার একটি উপনদী। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা জেলার বাগসারা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং পরবর্তীতে চাঁদপুর ও লক্ষীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। একই সাথে নদীটি কুমিল্লা-লাকসাম চাঁদপুরের শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জ উপজেলা অতিক্রম করে চাঁদপুর মেঘনা নদীতে মিশেছে। বর্ষাকালে ভারতের দিক থেকে যে পাহাড়ি প্রবাহ গ্রহণ করে তার পরিমাণ খুবই সীমিত। ফলে বছরের ৯ মাসই মেঘনার জোয়ারের পানি গ্রহণ করে থাকে। নদী বাংলার মানুষের বেড়ে ওঠার প্রেরণা। দেশের অন্যান্য নদীর মতো আজ মরতে বসেছে ডাকাতিয়া। বিগত দিনে ডাকাতিয়ার গর্জন যারা শুনেছেন তাদের পক্ষে বর্তমান করুণ দৃশ্যে চোখের পানি সংবরণ করা দায় হবে। চাঁদপুর-লক্ষীপুর-নোয়াখালীর লাখ লাখ মানুষকে মারাত্মক পরিবেশ ও কৃষি বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে এখনই ডাকাতিয়া নদী বাঁচাতে এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিজ্ঞজনরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।