Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করছে কয়লা

বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২২, ১২:০৫ এএম

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় কাঠ ও শিসা পুড়িয়ে কয়লার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। কেবল উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নেই গড়ে উঠেছে এ ধরণের দেড় শতাধিক মাটির কাঁচা চুল্লি। সরকারি নিয়মকে অগ্রাহ্য করে এ সকল প্রভাবশালী ব্যক্তি কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছে দেদারছে। ইতোপূর্বে অভয়নগর উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর থেকে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে চুল্লিগুলো গুড়িয়ে দিলেও বন্ধ হয়নি এই অবৈধ ব্যবসা। উপরোন্ত প্রতিবারই আরো নতুন নতুন চুল্লি তৈরি করা হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং উজাড় হচ্ছে গাছপালা অপরদিকে স্থানীয়রা শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে ভুগছেন।
তবে এদের বিরুদ্ধে স্থানীয় কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের ওপর নানা রকমের হুমকি ধামকি নেমে আসে বলে অভিযোগ রয়েছে। সেইসাথে এই এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পোহাতে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনা। ফলে সচেতন এলাকাবাসী এসব অবৈধ চুল্লির কালো ধোঁয়া থেকে বাঁচতে এবং পরিবেশ রক্ষার্থে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, দীর্ঘ প্রায় ১৪ থেকে ১৫ বছর যাবৎ উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জোটবদ্ধ হয়ে অবৈধভাবে মাটির চুল্লি বানিয়ে কাঠ ও শিসা পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে আসছে। এমনকি সরকারি দাতব্য চিকিৎসালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকাতেও তারা এ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কয়লা তৈরির চুল্লি নির্মাণ করেছে।
উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে তৈরি করা চুল্লিতে কয়লা তৈরি হওয়ায় সময় নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের জিয়া মোল্যা, ছোট্ট মোল্যা, শহিদ মোল্যা, হারুন মোল্যা, রফিক মোল্যা, তৌকির মোল্যা, কবীর শেখ, হাবিব হাওলাদার, তসলিম মিয়া, মনির শেখ কামরুল ফারাজী এবং ধূলগ্রামের হরমুজ সর্দার, রকশেদ সর্দার, ফারুক হাওলাদার এ অঞ্চলে ১শ’ ৫৯টি চুল্লি তৈরি করে কয়লা তৈরি করে আসছেন। কিন্তু তারা এতটাই প্রভাবশালী যে স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ তো দূরের কথা মুখ খুলতেও সাহস করেননা। মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা চুল্লিতে প্রতিদিন কয়েক শত মণ কাঠ পোঁড়ানো হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে চুল্লির খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেওয়া হয়। প্রায় ৭ থেকে ১০ দিন পোঁড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ৩০০ মণ কাঠ পোঁড়ানো হয়। কাঠ পুঁড়ে কয়লা হয়ে গেলে সেগুলো বের করে ঠান্ডা করে বিক্রির উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে কয়েকজন চুল্লি মালিকের সাথে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিয়ে আমাদের ব্যবসা চালাতে হয়। স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সব মহলকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেই তারপর ব্যবসা চালাই।
এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলার ইউএনও মেজবাহ উদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি যাচাই পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ