পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তাহরিকে খতমে নবুওয়্যাতের আমীর আল্লামা ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বলেছেন, যারা মাজার ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন তারা আব্দুল ওহাব নজদীর মতাদর্শের অনুসারী আব্দুল ওহাব নজদী জান্নাতুল বাকীর মাযারগুলো ধ্বংস করেছিলো। হুমকিদাতারা দেওবন্দের আকাবিরদের উপদেশ অমান্যকারী। সুন্নত ত্বরিকার আওলিয়ায়ে কেরাম, নেককার ব্যক্তি এমনকি স্বীয় পিতামাতা আত্মীয় স্বজনের মাজার বা কবর যিয়ারতে ইসলামে কোন বাধা নেই। বরং কবর বা মাজার যিয়ারত করা সহীহ হাদিস থেকে সুন্নত সাব্যস্ত। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কিরাম উনাদেরকে বলেছেন। “আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন অনুমতি দিচ্ছি তোমরা কবর যিয়ারত কর।”
এভাবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কিরাম উনাদেরকে কবর যিয়ারত করার অনুমতি দিয়েছেন। অতএব, কেউ যদি ছওয়াব পৌঁছানোর জন্য বা নিজে উপকৃত হওয়ার উদ্দেশ্যে মাজার যিয়ারত করে তা সুন্নত আমল বলেই গণ্য হবে।
মাজার শব্দটির মধ্যে অনেকেই শিরকের গন্ধ খুঁজে। আরবী ভাষা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণেই মাজার নিয়ে তারা উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে থাকে। মূলত প্রত্যেক ঈমানদার এবং নেককার ব্যক্তির কবরই মাজার । মাজার হলো যিয়ারতের স্থান। ঈমানদার/নেককার ব্যক্তির কবরের কাছে গিয়ে নেক আমল করে নেককার ব্যক্তিকে ছওয়াব পৌঁছে দেওয়াই মাজার যিয়ারতের মূল উদ্দেশ্য। যা সহীহ হাদিছ শরীফ থেকে সাব্যস্ত।
ইমাম বায়হাক্বীর সয়াবুল ঈমান কিতাবে হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন আমি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরের জবান মুবারক থেকে শুনেছি- তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে যদি কারুর মৃত্যু হয় তাহলে নামায কাফন দাফনে দেরী কোর না বরং দ্রুত তাকে কবরে দাফন করো। এবং যে কেউ তার কবরে মাথার সামনে দাঁড়িয়ে একবার সুরা ফাতিহা ও সুরা বাকারাহ পড়ে এবং পায়ের কাছে দাড়িয়ে যেন বাকারার শেষ আয়াত শরীফ পড়ে”(সয়াবুল ঈমান কিতাব এর ৩৭০ পৃষ্ঠা)
একথা থেকে সাব্যস্ত মাযার বা কবর যিয়ারত সহীহ। ইমাম নাসাঈ এবং আবু মুহম্মদ সমরকন্দির ফাযায়েল-এ-সুরাতিল ইখলাস এ হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজাহাহু আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণনা করেন, তোমাদের মধ্যে যারা কবরের পাশ দিয়ে যাবে তারা যেন ১১বার সুরা ইখলাস পড়ে সওয়াবটি কবরবাসীকে দান করে যায়।
বৈরুত থেকে প্রকাশিত আল মাকালাতুল সুন্নিয়া এর ২০৪ পৃষ্ঠায় ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “তোমরা যখন কবর সমূহের কাছে যাবে সেখানে দাঁড়িয়ে একবার করে সুরা ফাতিহা সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ে এর ছওয়াব কবরবাসীকে পাঠিয়ে দিবে। এর ছওয়াব তৎক্ষণাৎ কবরবাসীর নিকট পৌঁছে।”
হাফেজ যুবায়দি ইত্তেহাফুস সাদাতিল মুত্তকি কিতাবের দশম খণ্ডে ৩৭২ পৃষ্ঠায় হাম্বলী মাযহাবের বিখ্যাত মুজতাহিদ হাফেজ ইবনে রাজাব হাম্বলীর মত উল্লেখ করে সালেহ আল আম্বারী বলেন, কিছু নেককার ব্যক্তি আম্বারীর পিতাকে স্বপ্নে দেখেন তিনি তার ছেলেকে বলছেন। হে আমার বৎস আমাদেরকে হাদিয়া পাঠানো বন্ধ করলে কেন?(অর্থাৎ মাজার যিয়ারত বন্ধ করলে কেন?) । তখন ছেলে বললো বাবা মৃত ব্যক্তি কি কবর থেকে জীবিতদের হাদিয়া দেখতে পায়? তখন পিতা বললেন জীবিত নেককাররা যদি মৃত নেককারদের জন্য যিয়ারত না করতো তাহলে মৃত ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হতো।” এ থেকে বুঝা যায় মাজার যিয়ারতের গুরুত্ব কত বেশি।
হানাফী মাযহাবের মুখপত্র মোল্লা আলি ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি মেশকাত শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ মেশকাতে লিখেছেন। মোমিন গণের রুহ যখন দেহ থেকে বের হয় তখন সে সব রুহ উর্ধ্বজগতে ফেরেশতাগণের সাথে মিলিত হয়। তখন তাদের রুহানী ক্ষমতা অনেক বেশি বেড়ে যায়। এই জন্য আউলিয়ায়ে কিরাম গণের কবর বা মাজার যারা যিয়ারত করেন তারা নিজেরাই অধিক উপকৃত হন।
এরপরেও যারা বাংলাদেশের সকল মাজার গুড়িয়ে দেয়ার হুংকার দিচ্ছে তারা প্রকৃত সুন্নী বা হানাফী নয় বরং সেই ওহাবী নজদীরই উত্তরসূরি। উল্লেখ্য দেওবন্দের থানাভবনে আশরাফ আলী থানবীর কাছে মাদ্রাসার ছাত্ররা দোয়ার জন্য গেলে তিনি তাদেরকে দোয়ার জন্য দেওবন্দে ডালিম গাছের নিচে কাসেম নানুতবীর মাজারের কাছে দিয়ে কিছু সময় বসার উপদেশ দিতেন। সুতরাং যারা কবর ও মাজার বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে তারা দেওবন্দের আক্বাবীরদের উপদেশকে অমান্য করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।