Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হতাশা কাটিয়ে ফেরার লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কতটা হতাশ হলে একজন অধিনায়কের মুখ থেকে এমন একটি বাক্য বের হয়? গেলপরশু রাতে ভারতের ‘দ্বিতীয় সারির’ দলের কাছে হেরে সংবাদ সম্মেলনে ঠিক এই অনুভুতিই প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশ দলের দলনেতা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে যতটা না হারের জ্বালায়, তার চাইতে বেশি হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে বুঝি হারের ধারা।
একটা সময় ছিল যখন কম রান, কম উইকেটের ব্যবধানে হারলেও খুশি থাকত সবাই। ব্যক্তিগত ছোট, বড় সব অর্জনকে বড় করে দেখা হত। তবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল সেই ধাপ পার করে এসেছে বলেই সবার বিশ্বাস। এই সময়ে এসে ছোট ছোট অর্জন নিয়ে খুশি থাকতে পারছেন না টাইগারদের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের কণ্ঠে। দল খারাপ করার দায় কাঁধে নিয়েও হতাশা ছিল তার কথাবার্তায়। এদনিও
সেই কবে থেকে বাংলাদেশ ছন্দ হারিয়েছে। এক ম্যাচে ব্যাটিং ভালো হয় তো বোলিংটা খারাপ। আরেক ম্যাচে যাচ্ছেতাই ব্যাটিংয়ে বোলারদের সাফল্য। কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না বাংলাদেশ দলের! তবে ভালো করবার সহজ উপায়ও আছে মাহমুদউল্লাহর কাছে! কি সেটা? বললেন, ‘উপায়টা হচ্ছে, আমাদের ভালো খেলতে হবে। ভালো খেলার বিকল্প নেই। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে সবকিছুর সারমর্ম করতে হবে। যেদিন সবকিছু ভালো করব, সেদিন জিতব।’
সেদিনটা কি আজ আসবে? এমন এক কোটি টাকার প্রশ্ন নিয়ে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি বাংলাদেশ। লঙ্কানদের বিপক্ষে পুরনো স্মৃতি সাহস যোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। কারণ কলম্বোর এই প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে গত এপ্রিলে দুই ম্যাচ সিরিজের শেষ ম্যাচে শ্রীলংকাকে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার শেষ টি-২০ও ছিলো সেটি। ঐ ম্যাচে উজ্জীবিত বাংলাদেশ ৪৫ রানে হারিয়েছিলো শ্রীলংকাকে। জয়ের ব্যবধান যেমনই হোক না কেন, ঐ ম্যাচে দেখা গিয়েছিলো অন্য এক বাংলাদেশকে। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করে মাশরাফির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
এক বছর আগের সুখস্মৃতি বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণে বড় উপাদান হিসেবেই কাজ করতে পারে। এজন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যাটে বড় বড় স্কোর, বোলারদের ডেলিভারিতে প্রতিপক্ষের উইকেট শিকারের আনন্দের উপলক্ষ্য তৈরি করতে হবে খেলোয়াড়দের। যেটিই হয়নি ভারত ম্যাচে। মাঠে যতটা না বাউন্সার সামলাতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহকে তার চেয়ে ঢের সামলাতে হয়েছে কথার বাউন্সার। কারণ মাঠে ব্যাটসম্যানদের যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স আবারো প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বাংলাদেশ দলের টি-টোয়েন্টি স্কিল। কারণ র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে আয়ারল্যান্ডেরও পরে। আর ‘ডট বল’ কান্ড নিয়ে সমালোচিত হতে হচ্ছে দলকে। অনেক আগে থেকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ডট বল খেলার প্রবণতা বেশি। আর ছোট দৈর্ঘ্যরে ক্রিকেটে যা বড়ই বেমানান। কারণ টি-টোয়েন্টি বেশি ডট হলে সেটা আর রিকাভারি করা কঠিন। আর এই নিয়েই মাহমুদউল্লাহ বেশি বিরক্ত, ‘টি-টোয়েন্টিতে মাঝের ওভারগুলোতে আমরা ধুঁকছি। অনেক বেশি ডট বল খেলছি, তার পরও উইকেট বিলিয়ে আসছি। আজকেও আমরা ভালোই শুরু করেছিলাম, কিন্তু পরে নিয়মিত উইকেট হারিয়েছি। টি-টোয়েন্টিতে মাঝের ওভারগুলোতে একটু পিছিয়ে আছি আমরা। বরাবরই এখানে খেই হারিয়ে ফেলি। সিঙ্গেল নিতে পারছি না, ডাবলসও না। পাশাপাশি বাউন্ডারিও হচ্ছিল না । একই সঙ্গে উইকেটও দিয়ে এসেছি।’
দলকে বারবার সতর্ক করার পরও ব্যাটসম্যানদের অত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকায় ডট বেশি হচ্ছে। আর এটা নিয়ে আগেও কাজ করা হয়েছে কিন্তু কিছুতেই সুফল মিলছে না। ব্যাটসম্যানদের নিজেদেরকে আয়নার সামনে দাড়াতে বলেছেন মাহমুদউল্লাহ। দলের ব্যর্থতার দায় সবাইকে নিতে হবে, কারণ কেউ ধর্য্যরে পরীক্ষা দিতে পারেনি গত ম্যাচে। আসলে সমস্যা তাদের আত্মবিশ্বাসে বলে মনে করে রিয়াদ, ‘মানসিকভবে প্রস্তুত হতে হবে। সবাইকে ভাবতে হবে কোথায় ভুল করেছি। আমি যেমন আজকে অনেক ডট বল খেলেছি। এই ছোট জিনিসগুলো নিয়ে যদি আমরা একটু সেন্সিবল হই, তাহলেই হবে। সবাই বসে যদি ঠিক করতে পারি, তাহলে ভালো কিছু হবে।’
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসা তাসকিন আহমেদও সুর মেলালেন অধিনায়কের কণ্ঠে। তবে টাইগার এই তরুন পেসার মনে করেন শেষ কয়েকটি ম্যাচে খারাপ করার কারণে এইগুলো চোখে পড়ছে বেশি। নিজেদের পারফরমেন্সে উন্নতির জন্য কাজ করছেন বলে জানালেন তাসকিন। সামনে বাংলাদেশ দল ভাল ফলাফল করবে বলে বিশ্বাস তার, ‘সামনে ভালো হবে বলে আশা করছি। শেখার শেষ নেই। যত বেশি খেলবো তত বেশি শিখবো। আমরা অনুশীলন করছি কষ্ট করছি। অনেক ভালো ফলাফল সামনে আসবে বলে আশা করছি।’ সে জন্য দলের মধ্যে ধারাবাহিকতাটা ফিরে আসাটা জরুরূ বলে মনে করেন তাসকিন, ‘টি২০তে দুই অংশেই একসাথে ভালো হচ্ছেনা আমাদের। এক অংশে ভালো হয় আরেক অংশে খারাপ হয়। যখন কনসিস্টেসিটা ফিরে আসবে তখন আমাদের ভালো হবে।’ এই ম্যাচে ব্যাটসম্যানরা ১৭০-৮০ রান করতে পারলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তাসকিন, ‘এই মাঠের জন্য ১৭০-১৮০ আমার মনে হয় ভালো স্কোর। আমরা যদি ১৭০-১৮০ রান করতে পারি তবে আমরা জিতবো আশা করি। ১৪০-১৫০ করলেও আমরা বোলাররা নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করি। উইকেটটা যেহেতু ফ্ল্যাট ফলে রান হয়েই যায়। তাই আমাদের ১৭০-৮০ মিনিমাম করতে হবে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ